২০০৩ সালে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র মাধ্যমে দেশ জুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সংগীতশিল্পী আকবর। কিশোর কুমারের গাওয়া ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে’ দিয়ে চমক জাগালেও নিজের প্রথম মৌলিক গান ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে’র মাধ্যমে জনপ্রিয়তার আরও চূড়ায় পৌঁছে যান তিনি। ভাগ্য বদলে গিয়ে রিকশা চালক থেকে পুরোদস্তুর গায়ক হয়ে ওঠেন আকবর।

রবিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে থেমে গেছে আকবরের প্রাণ। রয়ে গেছে তার গাওয়া শত শত গান। তবে সবখানে ঘুরে ফিরে বেশি আসছে সেই প্রথম মৌলিক গানটির কথাই। যে গানের ভিডিওতে আকবরের নায়িকার চরিত্রে হাজির হয়ে চমকে দিয়েছিলেন জনপ্রিয় নায়িকা। আকবরের কণ্ঠের সঙ্গে পূর্ণিমার অভিনয় গানটিকে দিয়েছিল পূর্ণতা।

তবে অনেক বছর ধরে শোবিজে জোর গুঞ্জন ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে’ গানের ভিডিও করতে গিয়ে নায়িকা পূর্ণিমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন আকবর, করতে চেয়েছিলেন বিয়ে। মিডিয়া ছাড়িয়ে এই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে দেশের সাধারণ মানুষের মাঝেও। এ নিয়ে আকবরকে নানান কটু কথাও শুনতে হয়েছে। পূর্ণিমা-আকবর ভক্তদের জন্য এটা বড় একটা কৌতূহলও বটে।

আরও পড়ুন : আইয়ুব বাচ্চু : রুপালি গিটার ফেলে 

আকবরের চলে যাওয়ার দিনে বিষয়টি নিয়ে নায়িকার পূর্ণিমার সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা পোস্ট। তিনি জানিয়েছেন এই গুঞ্জনটি একেবারেই মিথ্যা, বানোয়াট। প্রকৃতপক্ষে আকবর তাকে যথেষ্ট সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন।

ঢাকা পোস্টকে পূর্ণিমা বলেন, ‘এগুলো খুবই বাজে কথা এবং খুবই নোংরা টাইপের বিষয়। এগুলো বানানো এবং একদমই মিথ্যা কথা। উনি (আকবর) উনার জায়গা থেকে মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলতেন। আমার কারণে উনার সংসার ভেঙেছে, প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছেন বা বিয়ে এগুলো কিছুই না।’

সেই গানের ভিডিওতে হানিফ সংকেত ও পূর্ণিমার সঙ্গে আকবর

নিজের ফোনে আকবরের নাম্বার ছিল না জানিয়ে এই নায়িকার ভাষ্য, ‘আমার ফোনে কখনোই উনার (আকবরের) নাম্বার ছিল না। উনার ফোনেও আমার নাম্বার থাকার কথা না। থাকলেও কখনো তিনি আমাকে কল দেননি। ওই অনুষ্ঠানের পর আমার সঙ্গে ফোনে উনার কথাই হয়নি।’

বর্তমান ফেসবুক যুগের কথা উল্লেখ করে এই তারকা আরও যোগ করেন, ‘ভাগ্য ভালো যে তখন এখনকার মতো ফেসবুক ছিল না। থাকলে তো এসব মিথ্যা গুজব ভাইরালও হয়ে যেতো। তারপরও কিছু মানুষ এখনো বলে আমি নাকি তার বিয়ে ভাঙার কারণ। এগুলো একদমই সত্য নয়। নিজের জায়গা থেকে তিনি আমাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও সম্মান করতেন।’

২০০৩ সালে সেই মিউজিক ভিডিওটি করতে গিয়ে আকবর বেশ নার্ভাস ছিলেন বলেও জানান পূর্ণিমা। তার কথায়, ‘কাজটি করার সময় আকবর বেশ নার্ভাস ছিলেন। তার জীবনে এটা অনেক বিশাল একটি কাজ ছিল। আমি হাত পাখার বাতাস করছি তাকে, খাওয়াচ্ছি। হাত ধরারও কিছু দৃশ্য ছিল। এত বেশি নার্ভাস ছিলেন তিনি, পাশে বসবেন কী বসবেন না! আরও অনেক সংশয় ছিল। সেই কাজের পর আকবরের সঙ্গে আর কোনো কাজ হয়নি। তবে বিভিন্ন শোতে একাধিকবার দেখা হয়েছে। দেখা হলেই আমাকে সালাম দিতেন। সম্মান করতেন। এতটুকুই।’

আরও পড়ুন : আজম খান : আসি আসি বলে তুমি আর এলে না 

উল্লেখ্য, দুই বছর ধরে ডায়াবেটিস, জন্ডিস, কিডনি, রক্তের প্রদাহসহ আরও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন আকবর। দুটি কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ায় তার শরীরে পানি জমে ডান পা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেই পা কেটেও ফেলা হয়। পা কাটার পর তার কিডনি ও লিভারের সমস্যা আরও বেড়ে যায়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ৫ নভেম্বর দুপুরে আকবরকে রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে (বারডেম) ভর্তি করা হয়। এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৯ নভেম্বর ভোরে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে আর ফিরতে পারেনি এই গায়ক।

আরআইজে