বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ। তার সংগীতের আবেদন অবিস্মরণীয় ও চিরকালীন। বাঙালির স্বাধিকার, বিশেষত স্বাধীনতা সংগ্রামে রবীন্দ্রসংগীত প্রেরণার উৎস। রবীন্দ্রনাথের গান আবহমানকালের বাঙালি সংস্কৃতির মূলধারাকে বিকশিত ও সমৃদ্ধ করে চলেছে। এদেশের সংস্কৃতিমনা মানুষের কাছে রবীন্দ্রসংগীত হয়ে উঠেছে জাতীয় সংস্কৃতি বিকাশের প্রধানতম অবলম্বন ও প্রাতঃস্মরণীয়।

১৬২তম রবীন্দ্রজয়ন্তী (২৫ বৈশাখ ১৪৩০/৮ মে ২০২৩) উপলক্ষ্যে ৩৩ বছরের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আগামী ১২-১৩ মে (শুক্র-শনিবার) ২ দিনব্যাপী ‘৩৪তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব’ আয়োজন করেছে দেশের প্রবীণতম ও জনপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা।

এ আয়োজনকে ঘিরে সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদের বাসায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় চলছে মহড়া। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শিল্পী পীযূষ বড়ুয়ার নেতৃত্বে এতে অংশ নিচ্ছেন শতাধিক শিল্পী। সংস্থার সভাপতি শিল্পী তপন মাহমুদ দেশের বাইরে অবস্থান করায় ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে শিল্পীদের ভার্চুয়ালি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

এবারকার জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবের প্রতিপাদ্য ‘করিস নে লাজ, করিস নে ভয়, আপনাকে তুই করে নে জয়...।’ বরাবরের মতো এবারও থাকছে গুণীজন সম্মাননা। এবারের উৎসবে দুই গুণীজনকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হবে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার পক্ষ থেকে। সম্মাননা পাচ্ছেন কিংবদন্তি গিটার শিল্পী এনামুল কবীর ও প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী লিলি ইসলাম। উদ্বোধনী দিনে এই দুই গুণীর হাতে সম্মাননা তুলে দেবেন উৎসবের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি। সভাপতিত্ব করবেন সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ।

বর্ণাঢ্য এই উৎসব সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার (৫ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে উৎসব ও সংস্থার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ। অস্ট্রেলিয়া থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন সংস্থার সভাপতি ও কণ্ঠশিল্পী তপন মাহমুদ। সংস্থার বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সবিস্তারে তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন  সাধারণ সম্পাদক ও কণ্ঠশিল্পী পীযূষ বড়ুয়া।

সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ও সংস্থার আজীবন সদস্য রফিকুল আলম।   অন্যান্যের মধ্যে তানজিমা তমা, অনিকেত আচার্য, কনক খান, আবদুর রশিদ, রিফাত জামাল, শর্মিলা চক্রবর্তী, আহমাদ মায়া আখতারী, জাফর আহমেদ, নির্ঝর চৌধুরীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ। তিনি বলেন, ‘শুদ্ধ সংস্কৃতি বিকাশের পথে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা যেন আমাদের বারবার রবীন্দ্রনাথের কাছেই ফিরিয়ে নিয়ে যায়। রবিঠাকুর প্রতিক্ষণ আমাদের জাতীয় এবং বাঙালি প্রাত্যহিক জীবনের জন্য প্রাসঙ্গিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সুস্থ সংগীত বিকাশে ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য পঙ্কিলতা মুক্ত একটি সুন্দর সংস্কৃতিবান্ধব আগামী গড়ার সংগ্রামে লড়াই করে যেতে চাই। বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’

সভাপতি তপন মাহমুদ ভার্চুয়াল বক্তৃতাতে বলেন, ‘সংস্কৃতিমনা মানুষকে প্রতিনিয়ত উদ্দীপ্ত রাখতে এই সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষতে করে যাবে।’ রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষ্যে দুই দিনের উৎসবে  শুদ্ধ, সুস্থ ও অশ্লীলতামুক্ত সুরলোক সৈকত ভাসিয়ে দেবে আমাদের নিবেদিতপ্রাণ শিল্পীরা।’

সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পীযুষ বড়ুয়া বলেন, “বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা ফাউন্ডেশনের নামে সংগঠনটি বাংলাদেশ সরকারের জয়েন্ট স্টক কোম্পানির অ্যান্ড ফার্মস অধীনে নিবন্ধিত সংগঠন। নিবন্ধিত সংঘ স্মারকের ক (১) ধারা অনুযায়ী কেবল সরকারি ও আর্থিক যোগাযোগ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে সংগঠনটি ১৯৮৮ সালের ২৭ মে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক ও জনপ্রিয় নাম ‘বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা’ হিসেবেই পরিচালিত হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, দুই দিনের উৎসবে দেশের খ্যাতনামা বেশ কয়েকজন শিল্পী ছাড়াও সংস্থার শতাধিক দলীয় ও একক পরিবেশনায় অংশ নেবেন। অনুষ্ঠানের সূচনা হবে প্রথা অনুযায়ী পর পর তিনটি কোরাসের মধ্য দিয়ে। এরপর দেওয়া হবে গুণীজন সম্মাননা।

প্রথম দিন ১২ মে (শুক্রবার) অনুষ্ঠান দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম পর্ব উদ্বোধন ও গুণীজন সম্মাননা। দ্বিতীয় পর্ব শুরু সন্ধ্যা ৬টায়। পরের দিন ১৩ মে (শনিবার) অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকালে ৫টায়। এদিনও দেশ সেরা আবৃত্তি ও কণ্ঠশিল্পী অংশ নেবেন। এদিনের সূচনাতেও থাকবে সংস্থার প্রথা অনুযায়ী পর পর তিনটি কোরাস। উৎসবটি সবার জন্য উন্মুক্ত।