চলতি মাসের শুরুতে ‘শ্বশুরবাড়িতে প্রথম দিন’ নাটকের শুটিং সেটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে পরবর্তীতে নাটকটির নির্মাতা, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও প্রযোজক নিজ নিজ সংগঠনে অভিযোগ দায়ের করেন। সমস্যা সমাধানে গত ১৩ আগস্ট আলোচনার টেবিলে বসে নাটকপাড়ার তিন অভিভাবক সংগঠন টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব), ডিরেক্টরস গিল্ড ও অভিনয়শিল্পী সংঘ।

সেখানে নাটকটির অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক দোষী সাব্যস্ত হন এবং তার আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়, জ্যেষ্ঠ অভিনেতা ফখরুল বাশার মাসুম, নির্মাতা আদিফ হাসানসহ ইউনিটের সবার কাছে শাস্তি হিসেবে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তরুণ এই অভিনেত্রীকে। পাশাপাশি সহশিল্পী আরশ খান ও নির্মাতা আদিফ হাসানের বিরুদ্ধে থানায় করা জিডি (সাধারণ ডায়েরি) তুলে নিতে হবে। এছাড়া আগামী ৬ মাস সংগঠনগুলোর পর্যবেক্ষণে থাকবেন তিনি।

সেদিনের সেই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে নাট্য নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড। তাদের দাবি ছিল, চমককে নিষিদ্ধ করতে হবে। তাই অভিনয়শিল্পী সংঘ ও টিভি প্রযোজকদের সংগঠন টেলিপ্যাবের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হননি তারা। সোমবার (২১ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালকদের সংগঠনটি ঘোষণা দিয়ে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে চমককে। যা কার্যকর হবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে।

এ ঘোষণার ব্যাপারে টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘ আজ বুধবার (২৩ আগস্ট) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে। সেখানে সংগঠন দুটি দাবি করেছে, পরিচালকরা চমককে নিষিদ্ধ করায় বিব্রত টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘ। বিষয়টি নাট্যাঙ্গনের জন্য দুঃখজনক বলেও মনে করে তারা।

দীর্ঘ সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‌‘বিগত ২১ আগস্ট ডিরেক্টরস গিল্ডের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যা আমাদের বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে। দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি সংগঠন  ডিরেক্টরস গিল্ডের কাছ থেকে যা মোটেই আমরা প্রত্যাশা করি না। যেহেতু সংবাদ সম্মেলনে টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘের নাম উচ্চারিত হয়েছে তাই প্রাসঙ্গিক কারণেই কিছু কথা আমাদের বলতে হচ্ছে। যা আমরা কখনোই সর্বসাধারণের সম্মুখে বলতে চাইনি!

প্রথমত ডিরেক্টরস গিল্ড একজন অভিনয়শিল্পীকে নিষিদ্ধ করার অধিকার রাখে কিনা? যদি তারা তাদের সদস্যদেরকে চমককে কাজে না নেওয়ার নির্দেশ দিতে চাইত তবে তা সাংগঠনিকভাবে করতে পারত। তার জন্য সংবাদ সম্মেলনের প্রয়োজন ছিলো কিনা! এটা খুবই সাধারণ বিষয় যে, একটি পেশাদার সংগঠন শুধুমাত্র তার সংগঠনের সদস্য ছাড়া অন্যকোনো পেশার শিল্পী, কলাকুশলী বা ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনতে পারে না! নিতান্ত প্রয়োজন হলে সেই পেশার সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘ডিরেক্টরস গিল্ডের সংবাদ সম্মেলনের তথ্য অনুযায়ী অভিনয়শিল্পী চমকের বিষয়ে টেলিপ্যাব, ডিরেক্টরস গিল্ড এবং অভিনয়শিল্পী সংঘ আন্তঃ সাংগঠনিক মিটিং করে। সেখানে নানান সিদ্ধান্ত নিয়েই আলোচনা হয়। নিষেধাজ্ঞাও এর মধ্যে ছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে নাটকটি আটকে যেত। চমক সকল সংগঠনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজের ভুল অনুধাবন করে অনুতপ্ত হয়েছে এবং আমরা যে শাস্তি তাকে দিয়েছি সে তা মাথা পেতে নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা প্রযোজক, পরিচালক ও সহশিল্পীদ্বয় যারা অভিযোগ করেছেন তারা সকলেই এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট। প্রযোজক আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেলেন। পরিচালক তার নাটক শেষ করতে পারছেন। এবং সহশিল্পীরাও চমকের অনুতপ্ত হওয়া ও দুঃখ প্রকাশ করাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এরচেয়ে ভালো আর কি হতে পারে।

সবচেয়ে বড় কথা সিদ্ধান্ত ঘোষণার পূর্বে তিন সংঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মিটিং থেকে বের হয়ে টেলিপ্যাব অফিসে আলাদাভাবে বসে অভিযোগকারী সকলের সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রত্যাশিত চাওয়াসমূহ আমলে নিয়ে যৌক্তিকতা, বাস্তবতা ও কার্যকারিতার কথা বিবেচনা করে যে ৪টি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করলেন তা নিজ হাতে লিখেছেন ডিরেক্টরস গিল্ডের অভিযোগ উপকমিটির আহ্বায়ক, গিল্ডের সহসভাপতি আশরাফুল আলম রন্টু এবং টেলপ্যাব সভাপতি মনোয়ার পাঠান। একে একে ৪টি পয়েন্ট স্পষ্টভাবে পুনরায় পড়ে শোনানোর পর এগুলো ঘোষণার জন্য সবাই মিটিংরুমে বসেন এবং টেলিপ্যাব সভাপতি এবং সভার সভাপতি গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো যখন ঘোষণা করেন তখন হঠাৎ করে ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক বলে ওঠেন, আমি আমার ইসির সঙ্গে কথা বলেছি, ইসি মানছে না। চমককে নিষিদ্ধও করতে হবে। তিন সংগঠনের মিটিংয়ে যেহেতু টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘ গৃহীত সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতেও এই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বিবেচিত হয়।

টেলিভিশন মিডিয়া সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন সমূহের একটি ফেডারেশন আছে- ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)। যার সদস্য টেলিপ্যাব, ডিরেক্টরস গিল্ড, অভিনয়শিল্পী সংঘসহ সবাই। এফটিপিও’র গঠনতন্ত্রে আছে, সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারলে বা কোনো জটিলতা তৈরি হলে তা ফেডারেশনের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘের সঙ্গে ডিরেক্টরস গিল্ড একমত না হতেই পারে। সেক্ষেত্রে তারা এফটিপিও এর কাছে সমাধান চাইতে পারত। তা না করে তাদের সরাসরি প্রেস কনফারেন্সে চলে গেলেন।

আমরা কোনো পাল্টা কনফারেন্স করছি না। এমনকী এই কথাগুলোও আমরা বলতে চাইনি। কিন্তু বাধ্য হলাম। বছরের পর বছর ধরে অনেক পরিচালকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ তাদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে আছে এবং এগুলোর প্রতিকারের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো উদ্যোগ ডিরেক্টরস গিল্ডের নেই।

আমরা আমাদের অভিভাবক ফেডারেশন এফটিপিও’র সভাপতি মামুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন লাভলুর সঙ্গে কথা বলেছি। সভাপতি মহোদয় দেশের বাইরে থাকায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর এফটিপিও’র সঙ্গে সভা হবে। সেখানে এই এ বিষয়ে আলোচনা হবে। আশা করি এফটিপিও একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান দেবেন।’

তবে এ বিজ্ঞপ্তির আলোচ্য বিষয়গুলো প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে ডিরেক্টরস গিল্ডের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

কেএইচটি