‘সরলতার প্রতিমা’, ‘যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে’, ‘কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে’, ‘হয়নি যাবারও বেলা’, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে’, ‘তুমি নেই তাই’—এরকম অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শিল্পী খালিদ। যার গান একসময় পাড়া মহল্লার বিভিন্ন শ্রোতাদের মুখে মুখে থাকত, বাজত বিপণি বিতানসহ বিভিন্ন দোকানে। যাকে আশির দশকে মানুষ চিনত ‘চাইম’ ব্যান্ডের খালিদ নামে।

দীর্ঘ সময়ের মিউজিক ক্যারিয়ারে খুব বেশি গান করেননি এই শিল্পী। অন্য শিল্পীদের তুলনায় কম গান করলেও খালিদের গাওয়া প্রতিটি গানই পেয়েছে জনপ্রিয়তা। এছাড়াও গত কয়েক দশকে যেসব শিল্পী মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে সুনাম কুড়িয়ে নিজেদের খ্যাতি ধরে রেখেছেন তার মধ্যে তিনি অন্যতম। গান ও স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ততা না থাকায় বর্তমানে সংগীত থেকে কিছুটা আড়ালেই আছেন এ শিল্পী। অবস্থান করছেন নিজ জন্মস্থান গোপালগঞ্জে। বাল্যকালের বন্ধুবান্ধবসহ এলাকার অনুজদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েই বর্তমানে কেটে যাচ্ছে তার সময়। তার এই দীর্ঘ মিউজিক ক্যারিয়ার, বর্তমান অবস্থা ও সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে ঢাকা পোস্ট-এর সঙ্গে কথা হয় সংগীতশিল্পী খালিদের। তার একান্ত সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আশিক জামান অভি

আপনার গানের শুরুটা কীভাবে?

যুদ্ধের আগের কথা। আমি তখন অনেক ছোট, ক্লাস ওয়ানে পড়ি। সাত ভাই বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। বাড়িতে ওস্তাদের কাছে গান শিখত আমার বড় ভাই বোনেরা। আমি ছোট হওয়ায় আমাকে তাদের গান শেখার কাছে যেতে দিত না। হঠাৎ একদিন আমার ভাই বোনদের গানের ক্লাস শেষ করে ওস্তাদ বেরিয়ে গেলেন। দরজা খোলা পেয়ে আমিও ভেতরে প্রবেশ করলাম। গিয়ে দেখলাম একটি হারমোনিয়াম। হারমোনিয়ামটার কাছে গিয়ে বেলো টান দিয়ে চাবিতে চাপ দিতেই দেখলাম বেজে উঠল। বাসার সবাইকে গিয়ে বললাম আমি গান শিখতে চাই। আমি পারি, হারমোনিয়াম আমি বাজিয়েছি। সেইখান থেকেই গানের আগ্রহ জন্ম নেয়। মূলত আমি গান গাওয়া শুরু করি ১৯৮১ সালে। পুরোপুরিভাবে শুরু হয় ৮৩ সালে ‘চাইম’ ব্যান্ডের সঙ্গে।

নিজের গাওয়া আপনার প্রথম অ্যালবাম কোনটি?

আসলে নিজের বলতে আমার অস্তিত্ব তো দুই ধরনের—একটা হচ্ছে চাইমের খালিদ, আরেকটা হচ্ছে ব্যক্তি খালিদ। তো প্রথম আমার যে অ্যালবামটি বের হয়েছিল সেটি চাইম ব্যান্ডের অ্যালবামের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘চাইম’। তাতে গান ছিল, ‘নাতি খাতি বেলা গেল’, ‘তুমি জানো নারে প্রিয়’, ‘কীর্তনখোলা নদীতে আমার’, ‘এক ঘরেতে বসত কইরা’, ‘ওই চোখ’, ‘সাতখানি মন বেজেছি আমরা’, ‘আমার জন্য রেখো একটা গান’সহ আরও দুটি ইংরেজি গান। যেটা আমাদের নিজের লেখা নিজের সুর করা। এর মধ্যে ‘নাতি খাতি বেলা গেল’ গানটি ছিল যশোরের একজন কবি হাফিজুর রহমানের লেখা। সুর সংগ্রহ করা হয়েছিল অন্য জায়গা থেকে।

আপনার গাওয়া বেশ কিছু গান এখনো শ্রোতাদের মুখে মুখে। দীর্ঘদিন পার হওয়ার পরেও মানুষ শুনছে, এটা আসলে কেন? 

নব্বইয়ের দশক বা তারপর পর্যন্ত আমাকে মিক্স মাস্টার বলা হতো। কারণ তখন কোনো মিক্স অ্যালবাম বের হলে আমার একটি গান হলেও সেই অ্যালবামে থাকত। আমি গান করার সময় অনেক সেক্রিফাইস করতাম। একটা গানের পেছনে অনেক কষ্ট করতাম। এ কারণেই হয়তো শ্রোতারা এখনো সেই গান শুনে। কেউ যদি একটি গান খেটে করে তাহলে অবশ্যই সেই গান হিট হবে। বর্তমানে যে গান যত তাড়াতাড়ি হিট হয় সেই গান আবার তত তাড়াতাড়ি পড়েও যায়। কিন্তু আমার ‘সরলতার প্রতিমা’, ‘কোন কারণে’, ‘হিমালয়’, ‘আকাশ নীলা’ এখনো মানুষ শুনছে। এখন আরও বেশি হিট হচ্ছে। এছাড়াও যতদিন বাংলা ভাষা আছে, যতদিন বাংলা ভাষার মানুষ আছে ততদিন খালিদের গান শুনবে শ্রোতারা ।

বর্তমানে নতুন গান নিয়ে ব্যস্ততা কেমন? 

নতুন গানের ব্যস্ততা নাই বললেই চলে। কয়েক বছর আগে সাউন্ডটেক-এর ব্যানারে ‘তুই বুঝলি না’ শিরোনামের একটি  গানটি বের হয়েছে। এরপর আর কোনো গান বের হয়নি। তবে  নতুন একটা অ্যালবাম আসছে সেখানে আটটি গান থাকবে নতুন গান আর আমার গাওয়া দুইটা পুরোনো গান থাকবে। সেই দুইটা গানের একটি গান আমি করব। এছাড়া তেমন কোনো ব্যস্ততা নেই বললেই চলে।

নতুন যারা ইন্ড্রাস্টিতে আসছে। ভালো ভালো গান উপহার দিচ্ছে। আবার নানা সময়ে বিতর্কে জড়াচ্ছে—তাদের উদ্দেশ্যে সিনিয়র হিসেবে কী বলতে চান? 

আসলে আমরাও তো মানুষ। আমাদেরকে নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। আমাদেরও তো শরীর, হাতে-পায়ে, কণ্ঠে মিসইউজ থাকতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু না। বিতর্ক থাকাটাই স্বাভাবিক। এদের নিয়ে কিছু বলতে চাই না।

আপনি দেশে থাকেন নাকি বিদেশে এটা নিয়ে অনেকে দ্বিধান্বিত?

আসলে আমার পরিবার বর্তমানে নিউইয়র্কে বসবাস করছে। সেখানে আমার ছেলে একটা স্কুলে পড়ছে। আমি কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশে এসেছি আবার নিউইয়র্কে চলে যাব। সেখানকার সিটিজেনশিপ নেওয়ার ইচ্ছা আছে।

কেএইচটি