২০০৪ সালের ৬ জুন কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন খানকে তালাকের নোটিস পাঠান। দীর্ঘ ১৯ বছর পর সেই দিনের ঘটনা এক ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেছেন গুলতেকিন। সেইসঙ্গে প্রকাশ করেছেন হলুদ খামে পাঠানো হুমায়ুন আহমেদের ডিভোর্স নোটিস।

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পরপর চারটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। প্রথম স্ট্যাটাসে গুলতেকিন লিখেছেন, ‘এই খামটির ভেতরে খুব যত্ন করে রাখা ছিলো আরেকটি খাম। আজ ট্যাক্সের জন্য কিছু কাগজ খুঁজতে গিয়ে এটি (ডিভোর্স নোটিস) পেলাম।’

এরপর বিচ্ছেদ নোটিসের সেই চিঠির খাম প্রকাশ করে লিখেছেন, এ ধরণের হলদে খামে চিঠি আসলে আমার মেয়ে শীলা বলতো, এগুলো তোমাকে লেখা প্রেমপত্র। শীলার বাবার লেখা আত্মজীবনীমূলক বই পড়ে অনেকেই আমাকে চিঠি লিখতো। ২০০৪ সালের ৬ জুন, স্কুল থেকে ফিরতেই শীলা বললো, ‘তোমার একটা প্রেমপত্র এসেছে’।  আমি খামটি খুলে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই দেখলাম সেটা তালাকের নোটিস। 

এরপরের স্ট্যাটাসে গুলতেকিন লিখেছেন, ‘আমি হাসতে হাসতে বললাম, শীলা বাবা, তোমার ড্যাডি তো আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে।’

নোটিশে হুমায়ূন লিখেছিলেন, ‘বিবাহের পর থেকেই তাহার সহিত আমার কোনোমতেই বনিবনা হইতেছে না। ভবিষ্যতেও বনিবনা হইবার কোনোরূপ সম্ভাবনা না থাকায় আমি অপারগ।’

এরপরেই সেই পোস্টের মন্তব্যঘরে হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রী লিখেছেন, ‘আসলে আমি কোনো কিছু না ভেবেই হঠাৎ পোস্ট করেছি। কেন যে করলাম তাও জানিনা। তবে সবার সমবেদনা পাওয়ার আশায় নয়। আমি একটি সুন্দর জীবনযাপন করছি। তেমন কোন দুঃখবোধও নেই। কেনই বা এতো যত্ন করে রেখেছিলাম তার উত্তরও জানা নেই! নিছক খামখেয়ালি।’

সবশেষ স্ট্যাটাসে গুলতেকিন লেখেন, ‘আমি আমার তিন মেয়ে আর ছেলেকে নিয়ে খুবই চমৎকার জীবন কাটাচ্ছি। শুধু তারা নয়, আমি এখন সাতজনের নানু/নিন্নাই। আলহামদুলিল্লাহ। আমার নিজের ছোট একটি থাকার জায়গা আছে। আমি তিন বেলা ভালো খাই, ভালো পোষাক পরি। এরপর আর কিছু চাওয়া নেই জীবনের কাছে। দুঃখ দুঃখ ভাব করলে মহান আল্লাহ, অসন্তুষ্ট হবেন। এসব লিখে দুঃখ বিলাসের সময় এখন নেই। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এদেশের লাখ লাখ মেয়েরা একই ধরণের সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছে। পার্থক্য হচ্ছে, আমি একজন বিখ্যাত মানুষের, এক সময়ের স্ত্রী ছিলাম, তাই আমাদের জীবনযাপন সম্পর্কে মানুষের অনেক কৌতূহল আছে। কিন্তু অন্যদের কথা আমরা জানি না। লাখ কোটি নারীরা জীবন সংগ্রাম করছে, শুধুমাত্র আমরা তাদের কথা জানি না।’

প্রসঙ্গত, গুলতেকিনের সঙ্গে হ‌ুমায়ূন আহমেদের বিয়ে হয় ১৯৭৩ সালে। তাদের সংসারে আসে এক ছেলে ও তিন মেয়ে। গুলতেকিনের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের দুই বছর পর ২০০৫ সালে হুমায়ূন আহমেদ বিয়ে করেন অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে। এরপর ২০১৯ সালে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আফতাব আহমদকে বিয়ে করেন গুলতেকিন। কিছুদিন আগেই আফতাব প্রয়াত হয়েছেন।

এনএইচ