৭ মে রাতে প্রকাশিত হয়েছে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড শিরোনামহীন-এর বহুল কাঙ্খিত, আলোচিত গান ‘কাশফুলের শহর দেখা’। নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত তাদের এই গান-ভিডিও এরইমধ্যে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে ভক্তদের মনে। কথা-সুর-কণ্ঠের দাবানলের সঙ্গে ক্রিয়েটিভ ভিডিও গানটিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। জিয়াউর রহমানের কথায় গানটির সুর করেছেন কাজী আহমেদ শাফিন। কণ্ঠ দিয়েছেন শেখ ইশতিয়াক। ভিডিও নির্মাণ করেছেন নাঈমুল বেনিন। এতে বিশেষ চমক হিসেবে অংশ নিয়েছেন সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার ও অভিনেত্রী নওশাবা। গান-ভিডিওটি তৈরির প্রেক্ষাপট ঢাকা পোস্টের জন্য লিখেছেন ব্যান্ডটির দলনেতা জিয়াউর রহমান

শুরুটা হয়েছিল ২ বছরেরও বেশি আগে। শাফিন জানাল, ‘শনশন যদিও কাশবন’ এর একটা সিক্যুয়াল করতে চায়। আগের মতোই ৭ মাত্রার গান। ভাবলাম, কাশফুলকে এবার শহরে নিয়ে আসা যাক।

গানের কাজ শুরু করার করার পরই চলে এল মহামারি। গানের পাশাপাশি ভিডিও নিয়েও ছিল সবার প্রত্যাশা। পারফরমেন্স অংশের শুটিংয়ের পরপরই লকডাউন হয়ে যায় ঢাকা। আমাদের কাজও থেমে গেল। এর মাঝেও, গানের ইম্প্রোভাইজেশন এর কাজ চালিয়ে গেলাম, কিছু কিছু লেয়ার আনা হলো, কিছু ফেলে দেয়া হলো।

দিয়াত দীর্ঘদিন যাবত অস্ট্রেলিয়ায়। সেখান থেকে বাজিয়ে কিছু লেয়ার পাঠালো। মহামারিতে সবাই বিপন্ন হয়েছে, থেমে গিয়েছে জীবন কিংবা জীবিকা। ‘শিরোনামহীন’ দৌঁড়ে যাবার প্রত্যয় নিয়ে নেমেছিল। সেই গতি রুখে দিলো করোনা। অনেকেই হয়তো মন খারাপ করেছে, আমাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আমরাও জীবনের বাইরে নই, মানুষের স্বপ্ন একে দেই, শিল্প থেকে তার জীবনের দর্শন নির্মাণ করি। কিন্তু সেই শিল্প নির্মাণ করতে আমাদের ব্যয় হয় এবং সেই ব্যয় শ্রোতা বহন করে না। তারা গান ফ্রি শোনে।

কোনো কর্পোরেট কোম্পানির গানের পৃষ্ঠপোষকতা করার মানসিকতা এখন আর একেবারেই দেখা যায় না। লাইভ কনসার্ট এবং উপার্জন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর মাঝেও গান, ভিডিও নির্মাণ এবং রিলিজকে দুঃসাহস ছাড়া আর কিই বা বলা যায়? বানিন এগিয়ে এলো। দ্বিতীয়বারের মতো সুদূর আমেরিকা থেকে ছুটে এল ভিডিওর স্টোরি অংশের কাজ করতে।

তখন আবার দিয়াতকে পাচ্ছিলাম না আমরা। অপছন্দের ফুটেজ রিপ্লেস করার কোনো অপশন নেই। চ্যালেঞ্জগুলো শ্রোতারা সাদা চোখে যেরকম মনে করে, তার চাইতে অনেক বেশি কঠিন। ব্যান্ডের ভোকাল (শেখ ইশতিয়াক) এবং কি-বোর্ড প্লেয়ার (সাইমন চৌধুরী) চট্টগ্রাম থাকে, গিটারিস্ট (দিয়াত) থাকে অস্ট্রেলিয়ায়। যে কোনো কাজ বা পদক্ষেপ নেওয়ার রাস্তা আমার আর শাফিন ছাড়া অন্য কারোর সুযোগ কিংবা উপায় কোনোটাই নেই। একত্রে কাজ করার সুযোগ তো বছর দুই আগেই হারিয়ে ফেলেছি।

অ্যালবাম রিলিজ করতে চেয়েছিলাম আরও দুই বছর আগেই। গানও রেডি করেছিলাম, কিন্তু পারলাম না। এমনিতেই এই ভাইরাল হওয়ার যুগে এ দেশ থেকে গান চলে গেছে অনেক আগেই। এখন শ্রোতাদের চোখ নায়ক খুঁজে বেড়ায়। একটা ভালো গান মুল্যায়িত হয় না, প্রিয় গানের ভোকালকে মাথায় তুলে নির্মাতাকে গালি দেওয়া এখন সবাই পবিত্র দ্বায়িত্ব হিসেবে মনে করে... যুগ টাই এরকম। এই অসম্মানের সময়ে শিল্প নির্মাণ ব্যাহত হওয়াই স্বাভাবিক। তারপর যেটুকু বাকি ছিল সেটাকেও গলা টিপে মেরে ফেললো করোনা। এরপর শুধুমাত্র ডেস্পারেট আর একরোখারাই মিউজিকে থাকবে, অন্য কেউ থাকবে না।

‘কাশফুলের শহর দেখা’ রিলিজ হয়েছে। ভাইরালের যুগে, বিপন্ন সময়ে বোতলে ভর্তি আশা নিয়ে এসেছে শিরোনামহীন। সবার বোধকে নাড়া দেবার শক্তি এই ছোট্ট বোতল ভর্তি কাশফুলের হয়তো নেই। কিন্তু শিরোনামহীন রুচিশীল শ্রোতাদের জন্যই গান তৈরি করে। তাদের হতাশাকে আশায় পরিণত করতেই এই গান। আসুন, আমরা পজিটিভ চিন্তা করতে শিখি, আশাবাদী হই। কেটে যাক এই দুর্বিষহ দুঃসময়।

আরআইজে