সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপির সঙ্গে বুধবার (২ জুন) জাতীয় আর্কাইভ মিলনায়তনে বৈঠক করেছেন সংগীতের তিন সংগঠন-গীতিকবি সংঘ, সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ও মিউজিক কম্পোজার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

গীতিকবি সংঘ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সভায় উপস্থিত ছিলেন সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর আহ্বায়ক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, এম.সি.এস.বি’র সভাপতি নকীব খান, সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর যুগ্ম আহ্বায়ক কুমার বিশ্বজিৎ ও হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল, গীতিকবি সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল ও কবির বকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, শওকত আলী ইমন ও জয় শাহরিয়ার।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব সাবিহা পারভীন, বাংলাদেশ কপিরাইট বোর্ডের সভাপতি, রেজিষ্ট্রার অব কপিরাইট ও সঙ্গীতের ১৭ দফা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক জাফর রাজা চৌধুরী  এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় উপসচিব ও বাংলাদেশ কপিরাইট বোর্ডের সদস্য ড. ললিতা রানী বর্মন।

সভার শুরুতে মিউজিক কম্পোজার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদের অকাল মৃত্যুতে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

সভায় উপস্থাপিত ১৭টি দাবির মধ্যে কয়েকটির নিষ্পত্তি ও সকল দাবির অগ্রগতি তুলে ধরেন রেজিষ্ট্রার অব কপিরাইট ও বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক জাফর রাজা চৌধুরী। তিনি জানান, এখন থেকে চলচ্চিত্রের সংগীতের জন্য সৃষ্ট সংগীতকর্ম চলচ্চিত্রের জন্য সম্পাদিত চুক্তির বাইরে বিভিন্ন এনালগ ও ডিজিটাল মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ সংগীত প্রণেতারা কপিরাইট আইনের ২০ (২) ধারা মতে কপিরাইট বোর্ডে আপিল করতে পারবেন। এ ছাড়াও তিন সংগঠনের দাবি অনুযায়ী নব নির্মাণাধীন কপিরাইট ভবনে ৩টি সংগঠনের জন্য পৃথক পৃথকভাবে ৩টি অফিস স্থাপনের জন্য এক হাজার বর্গফুট আয়তনের ৩টি অফিস স্পেসের বরাদ্দ এবং ৬০ জনের বসার উপযোগী একটি পৃথক কনফারেন্স রুমেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।

জাফর রাজা বলেন, ‘সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সংগীতের সঙ্গে জড়িত সকল প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের সুযোগ সৃষ্টির দাবি ইতিমধ্যেই কার্যকর করা শুরু হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে এই তিন সংগঠনের নিবন্ধন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কপিরাইট অফিসে সম্পন্ন হয়েছে। এখন থেকে সংগীত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কপিরাইট অফিসেই নিবন্ধন করতে পারবেন।

মধ্য মেয়াদি দাবিগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংগীত ব্যক্তিত্বদের জন্য এমআইপির (মিউজিক ইম্পর্টেন্ট পার্সন) প্রস্তাব তিন সংগঠনের যৌথভাবে দেওয়া ৬টি মানদণ্ড পর্যালোচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দেন। এ ছাড়াও প্রতিমন্ত্রী সরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলে গীতিকবি, সুরকার ও কন্ঠশিল্পীদের সম্মানী বৃদ্ধি, বেসরকারি এফএম. রেডিও চ্যানেলগুলোতে ফ্রিতে গান চালানোর নিষিদ্ধ ঘোষণা ও রয়েলটি ব্যবস্থা চালুর দাবির ব্যাপারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি যৌথ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আয়োজন করার নির্দেশনা দেন। তিন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দাবি কপিরাইট সমিতি পুনর্গঠন/বাতিলের ব্যাপারে তিন সংগঠনের অবস্থান এবং সুপারিশ তুলে ধরা হয়। প্রতিমন্ত্রী সকল দিক বিবেচনা করে একটি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর কপিরাইট সমিতি গঠনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দেন।  

প্রতিমন্ত্রী সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতি বছর শুধু সংগীতের সকল শাখায় গুণী ব্যক্তিদের সম্মান জানানোর লক্ষ্যে ‘সংগীতে জাতীয় পুরস্কার’ প্রদানের খসড়া নীতিমালাটি বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দেন।

দীর্ঘ মেয়াদি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংগীত সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য একটি আবাসন প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে প্রতিমন্ত্রী দ্রুত সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ ছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক রাজউক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে তিন সংগঠনের যে কোনো একটি সংগঠনের প্রত্যয়নপত্র গ্রহণের ব্যাপারে বিশেষ পত্র প্রেরণ করার সম্ভাব্যতা যাচাই করার আশ্বাস দেন। সরকারি হাসপাতালসমূহে সংগীত সংশ্লিষ্টদের জন্য বিশেষ মর্যাদা এবং বিশেষ ফি’তে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার বিশেষ বিধান রাখার জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পত্র প্রেরণের জন্য মাননীয় প্রতিমন্ত্রী সম্মত হন। জাতীয় সংগীত একাডেমি গঠন ও সংগীতের জন্য এক্সক্লুসিভ কনসার্ট ভেন্যু ও অডিটরিয়াম নির্মাণের ব্যাপারে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয়।

ইউটিউব, স্পটিফাই, ডিজার, এপেল ও আমাজন মিউজিকসহ বিশ্বের শীর্ষ মিউজিক অ্যাপগুলোতে বাংলা গানের আলাদা ক্যাটালগ ও প্রচারের ব্যাপারে ওয়াইপো’র সহযোগিতা চাওয়ার জন্যে শিগগিরই চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান রেজিষ্ট্রার অব কপিরাইট জাফর রাজা চৌধুরী।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় শিল্পকলা একাডেমিসহ অন্যান্য সকল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে গীতিকবি, সুরস্রষ্টা ও কণ্ঠশিল্পীদের সম্মানজনক অংশগ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে তিন সংগঠনকে আশ্বস্ত করা হয়।

বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য যে সকল প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়, সেখানে সেরা শিল্পীদের অংশগ্রহণ, একজন সংগীত পরিচালক, একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের অন্তর্ভুক্তি ও বাংলাদেশের সংগীত ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্যে সংগীত ব্যক্তিত্বদের সফর দলে অন্তর্ভুক্তির দাবিটি গৃহীত হয়।