বিনা পারিশ্রমিকে তিন হাজারের বেশি কবর খোঁড়া কিশোরগঞ্জের ইটনার সেই মনু মিয়া (৬৭) মারা গেছেন। দীর্ঘ চার যুগেরও বেশি সময় ধরে মানবসেবা করে গেছেন তিনি। 

জীবনের প্রায় অর্ধশত বছর তিনি ব্যয় করেছেন কবর খননের কাজে, বিনিময়ে কখনো কিছু চাননি। আশপাশের গ্রাম ও জেলাজুড়েও পরিচিত ছিলেন ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ নামে।

কোথাও কখনো কোনো গ্রামে মৃত্যুর খবর পেলেই নিজের লাল রঙের ঘোড়ায় পৌঁছে যেতেন তিনি। তবে চলতি বছরের মে মাসে কিছু দুষ্কৃতকারী মনু মিয়ার সেই লাল ঘোড়াটি হত্যা করে। 

এ ঘটনা তখন সামাজিকমাধ্যমজুড়ে বেশ আলোচনার সৃষ্টি করে। যা চোখে পড়ে অভিনেতা খায়রুল বাসারের। মনু মিয়ার সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে ছুটে যান তিনি। সেখানে তারা কিছুক্ষণ সময় কাটান একসঙ্গে। 

স্বাভাবিকভাবেই মনু মিয়ার মৃত্যু শোকাহত করেছে খায়রুল বাসারকে। ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে অভিনেতা জানান, ‘এতদিন তিনি (মনু মিয়া) ঢাকায় ছিলেন, ৩ দিন আগে উনি বাড়ি ফিরেছেন। বলছিলেন আগের চেয়ে বেশ সুস্থ আছেন। উনার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার ইচ্ছা আল্লাহ কবুল করেছেন। সুস্থ থেকেই উনি আল্লাহর ডাকে ফিরতে চেয়েছিলেন, এই দোয়াও চাইতেন-বলতেন।’ 

খায়রুল বাসার বলেন, ‘হয়তো নিজ গ্রাম নিজের জন্মস্থান থেকেই তাকে ডেকে নেবেন এই চেয়েছেন আল্লাহ। উনার মহৎ কর্মের ফলস্বরূপ আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে তার স্বপ্নের ঘোড়া উপহার দেবেন। আল্লাহ ওনাকে জান্নাতবাসী করুন। সবাই মনু কাকার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে শান্তিতে রাখুন।’

এদিকে মনু মিয়ার মৃত্যুতে তার স্বজনেরা বলেন, কবর খোঁড়ার কাজ করতে গিয়ে নিজের দিকে খেয়াল হয়নি নিঃসন্তান মনু মিয়ার। ফলে শরীরে নানা জটিল রোগ বাসা বাঁধে। রোগে কাবু হয়ে সম্প্রতি শয্যাশায়ী হন তিনি। গত ১৪ মে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থতাবোধ করলে তাকে বাড়িতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে যান।

ইটনার চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস আহমেদ চৌধুরী লাকী বলেন, তাকে বলা হতো শেষ ঠিকানার কারিগর। তার মৃত্যুত এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এনএইচ