বই, নাটক, সিনেমার পর অডিওবুকেও জনপ্রিয় হুমায়ূন আহমেদ

বর্তমান সময়ের তরুণদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ কিছুটা কমে গেলেও সাহিত্যের স্বাদ নেওয়ার নতুন মাধ্যম হয়ে উঠেছে অডিওবুক। যারা কখনও বইয়ের পাতায় চোখ বোলাতে চাননি, তাদের কাছেও এখন হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য পৌঁছে যাচ্ছে কানে কানে। ইউটিউব ও অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ইদানিং ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই কিংবদন্তির লেখা উপন্যাস ও ছোটগল্পের অডিও সংস্করণ।
এখনকার সময়ে ইউটিউব স্ক্রল করলে দেখা যায়, হুমায়ূন আহমেদের একাধিক জনপ্রিয় বইয়ের অডিও সংস্করণ তৈরি করছে ইউটিউবাররা; যা দারুণ সাড়াও ফেলছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ‘মিসির আলি সিরিজ’, ‘হিমু সিরিজ’। এছাড়াও রয়েছে ‘অরণ্য’, ‘অচিনপুর’, ‘যদিও সন্ধ্যা’, ‘অরণ্য’, ‘চিনপুর’, ‘যদিও সন্ধ্যা’, ‘তুচ্ছ’, ‘রুপা’, ‘গৌরীপুর জংশন’, ‘তন্দ্রা বিলাস’, ‘নিশীথিনী’ সহ এমন অসংখ্য বই-গল্পের অডিও সংস্করণ রয়েছে ইউটিউবে।
বিজ্ঞাপন

সেই কনটেন্টগুলোর প্রায় প্রতিটির কমেন্ট বক্সেই দেখা যাচ্ছে অসংখ্য পাঠক-শ্রোতার আবেগঘন প্রতিক্রিয়া। কেউ লেখেন, ‘বাহ, হুমায়ূন স্যারের এমন অসাধারণ গল্প পড়ে শোনার অনুভূতি আলাদা।’ আবার কেউ কেউ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের গল্প না শুনলে আমাদের ঘুম আসে না।’
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
তবে কিছু ক্ষেত্রে এটিকে ভালো চর্চা বলেও মনে করেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা। অডিওবুক সংক্রান্ত নানা ফেসবুক পেজ, গ্রুপ তৈরি হয়েছে; যেখানে হুমায়ূন আহমেদসহ আরও নানা লেখক-সাহিত্যিকের বই-উপন্যাস নিয়ে আলোচনা হয় বিস্তর।
এছাড়াও মূল বইয়ের গল্পের সঙ্গে ইউটিউবার কর্তৃক কোনো অডিও সংস্করণের অমিল কিংবা ব্যত্যয় দেখলে তা ধরিয়ে দেওয়া এবং আলোচনা করে সংশোধনের দাবিও তোলা হয়। তাই বলা যায়, ইন্টারনেটের যুগেও এসব অনলাইন পাঠকদের পছন্দের চর্চায় রয়েছেন কিংবদন্তি সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ।
তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, ওপার বাংলার শ্রোতারাও এখন ইউটিউব ও বিভিন্ন পডকাস্ট প্ল্যাটফর্মে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য খুঁজে নিচ্ছেন। ইউটিউব কমেন্ট ঘরজুড়ে দেখা যায় ভারতীয় ব্যবহারকারীদের প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা।
বলা বাহুল্য, প্রযুক্তির প্রসার ও স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ায় এখন বইয়ের প্রতি তৈরি হয়েছে আলস্য। তবে কমেনি সাহিত্যপ্রেম। তাই কানে ইয়ারফোন গুঁজে গল্প শোনার এক নতুন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। তারা ঘরে বসে কিংবা চলার পথে কানে ইয়ারফোন গুঁজে শোনেন গল্প, উপন্যাস। আর তাদের জন্য হুমায়ূনের অডিওবুক যেন এক অনন্য সমাধান। যা কণ্ঠদানের গুণে সেই গল্পগুলো হয়ে ওঠে আরও জীবন্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে শিক্ষকতা দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও হুমায়ূন আহমেদের প্রকৃত জায়গা ছিল পাঠকের হৃদয়ে। আজ তার গল্প পৌঁছে যাচ্ছে নতুন আঙ্গিকে, নতুন শ্রোতার কাছে। মোদ্দাকথা, এক প্রজন্ম তাকে বইয়ে পেয়েছে, আরেক প্রজন্ম তাকে খুঁজে নিচ্ছে অডিওবুকে।
প্রসঙ্গত, বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কথাশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ (শনিবার)। দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের এই দিনে (১৯ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে প্রয়াণ ঘটে তার।
নন্দিত এই সাহিত্যিক ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। সাহিত্যের পাশাপাশি টেলিভিশন ও সিনেমা অঙ্গনের পর এখন শ্রোতা মহলেও ধরে রাখছেন তার এই অমর উপস্থিতি। আজ (শনিবার) তার চলে যাওয়ার ১৩ বছর পূর্ণ হলো। দিনটি এবার স্মরণ করিয়ে দিলো, বই, নাটক, সিনেমার পর অডিওবুকেও এখন রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা।
ডিএ
