সংগীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের বিষয়টি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি। এই বিষয়ে বাংলাদেশ কপিরাইট বোর্ড নিরলস কাজ করছে। এছাড়াও সংগীতের সঙ্গে জড়িত গীতিকবি, কণ্ঠশিল্পী ও সুরকারদের স্বার্থ ও সম্মান রক্ষার জন্য ১৭টি প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শনিবার (৩ জুলাই) বেলা ৩টায় গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশের উদ্যোগে অনলাইনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী।

গীতিকবি সংঘের সভাপতি শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান ও শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর, কপিরাইট রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী ও কপিরাইট বোর্ডের চেয়ারম্যান সাবিহা পারভীন। অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন মিউজিক কম্পোজারস সোসাইটির সভাপতি নকীব খান, সহসভাপতি ফোয়াদ নাসের বাবু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত আলী ইমন। সিঙ্গার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও সাধারণ সম্পাদক কুমার বিশ্বজিৎ।

বিশেষ এই আয়োজনে আরও অংশ নেন সংঘের অর্ধ শতাধিক সদস্য। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গীতিকবি সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার রাসেল।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি বলেন, ‘মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের বিষয়টা এখন বড় বিষয়। সেটি রক্ষা করার জন্যই আমাদের কপিরাইট বিভাগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এর পেছনে আপনাদের অবদান বা দাবি অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। আপনাদের ১৭টি দফা- এটা একটা নীতিমালার বিষয়। অর্থ, তথ্যসহ অনেক মন্ত্রণালয়ের বিষয়। সেটি হচ্ছে। আপনারা একটা জায়গা চেয়েছেন, কনসার্টের জন্য। উত্তরাতে পূর্বাচল ক্লাব আছে, সেটার সভাপতি আমাদের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী। উনার সঙ্গে কথা বলেছি। আবেদন করেছি। উনাকে নিয়ে আমরা একদিন সেখানে যাবো। সাড়ে চার একর জায়গা আছে সেখানে। উনি যদি একটি জায়গা আমাদের নির্ধারণ করে দেন- তাহলে আমরা একটা মঞ্চ করে দেবো। যেখানে উন্মুক্ত কনসার্ট করতে পারবেন। আর সংগীতের সাথে যারা আছেন- তাদের নিয়ে সংগীতের ওপর একটা দল বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেবো। খুব বেশি দাবি আপনাদের নেই। বীমার বিষয়েও কথা বলেছি। সিএমও নিয়েও আবার বসতে হবে- না হলে এটার বেনিফিট পাওয়া যাবে না। আমরা আবারও বসবো এসব নিয়ে। মনে রাখবেন, আমরাও আপনাদেরই মানুষ। আপনাদের নিয়ে আমরা গর্বিত। সংগীতের জন্য আলাদা একটা পদক চাইছেন, সেটা নিয়েও আমরা ভাবছি। এসব নিয়ে আমরা আরও একদিন বসে চূড়ান্ত করবো। প্রয়োজনে আরও কিছু ইনক্লুড করে আমরা বিষয়গুলো সুরাহা করবো। আমাদের হাতে সময় নেই। এই বছরের মধ্যেই আমি সব কিছুর একটা বাস্তব চিত্র দেখতে চাই।’

এর আগে এই আয়োজনের শুরু হয় শোক প্রস্তাব উত্থাপনের মধ্য দিয়ে। সংঘের সদস্যসহ করোনায় অকাল প্রয়াত সংস্কৃতি অঙ্গনের সকলের প্রতি এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় অনুষ্ঠানে। এ সময় সংঘঠনের নানান কার্যক্রম তুলে ধরেন সংঘের দুই সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল ও কবির বকুল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার রাসেল।

গীতিকবি সংঘের সহযাত্রী সংগঠন মিউজিক কমপোজার্স সোসাইটির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সভাপতি নকীব খান, সিঙ্গার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কুমার বিশ্বজিৎ প্রমুখ।

বাংলা গানের ইতিহাস তুলে ধরে সমাপনী বক্তব্যে গীতিকবি সংঘের সভাপতি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী বলেন, ‘গীতিকবিদের বঞ্চনার ইতিহাস কিন্তু শুরু থেকে আজও একই। বিশেষ করে বাংলা গানে এটা বেশি। সেই বঞ্চনা থেকে উত্তরণের পথ খোঁজার লক্ষেই আমাদের এই জোটবদ্ধ হওয়া। স্যাব ও এমসিএসবির সঙ্গে এক হয়ে আমরা এই বঞ্চনার দিন মুছে দিতে চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।’

অনুষ্ঠানটি শেষ হয় সংঘের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। এতে গান পরিবেশন করেন সংঘের সাংস্কৃতিক সম্পাদক জয় শাহরিয়ার এবং সদস্য রাশেদ উদ্দিন আহমেদ তপু, তরুণ মুন্সী ও প্রীতম আহমেদ। আবৃত্তি করেন লুৎফর হাসান।

আরআইজে