বাংলা গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমিন। দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে গান করছেন। সুরেলা কণ্ঠে ধারণ করেছেন হাজারো গান। সিনেমার গান ও দেশাত্মবোধক গানে আজও অনন্যা তিনি। তার একার কণ্ঠে যতগুলো কালজয়ী গান রয়েছে, ততগুলো গান কোনো কোনো শিল্পীর পুরো ক্যারিয়ারেই খুঁজে পাওয়া ভার।

কিংবদন্তি এই কণ্ঠশিল্পীর জন্মদিন আজ। ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। বিশেষ দিনটিতে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। জানালেন মনের কিছু কথা।

জন্মদিনে কেমন অনুভূতি হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘মনে হয় আমার আব্বা-আম্মা যদি থাকতেন, আমি সবচেয়ে খুশি হতাম। আর ছোট বেলার কথা যদি বলি, তখন ভাবতাম কখন বড় হব, কখন স্কুলে যাব, কলেজে যাব, ভার্সিটিতে পড়ব। কিন্তু এখন বড় হয়ে ভাবি, আহারে আবার যদি সেই ছোট বেলায় ফিরে যেতে পারতাম। বয়স তো এক এক করে যাচ্ছে। আর এগিয়ে যাচ্ছি সেই দিকে...।’

ছোট বেলার জন্মদিনে পাওয়া উপহার নিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘এখন যদিও তেমন মনে নেই, কী কী পেতাম। তবে চকলেট পেলে আমি খুব খুশি হতাম। আর পরিবারের সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসত। কারণ আমি তো সবার ছোট ছিলাম। তাই অনেক উপহার পেতাম।’

তারকা হওয়ার পর প্রতি জন্মদিনে ভক্তদের কাছ থেকে উপহার পান সাবিনা ইয়াসমিন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফুল, শাড়ি, থ্রি-পিস, কেক ইত্যাদি পাঠিয়েছেন অনুরাগীরা। তবে দূরে থাকার কারণ এবার বোনদের কাছ থেকে উপহার পাননি। কেবল ফোনকলে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে।

বর্ণিল এই সংগীত জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি আছে কিনা, জানতে চাইলে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার জীবনে কোনো অপূর্ণতা নেই। আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছেন। অনেক মানুষের ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা পেয়েছি, এটাই সবচাইতে বড় কথা।’

সবশেষে এই গুণী গায়িকার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেবল একটি গানে যদি সাবিনা ইয়াসমিনকে পরিচয় করানো হয়, তাহলে সেটা কোনটি হবে? জবাবে তিনি বললেন, ‘এত গান থেকে একটা বাছাই করা তো সম্ভব না। আর এটা করবেন শ্রোতারা। যার যার পছন্দমতো সেরা গানটি আমার নামের পাশে যোগ করে নেবেন।’

জন্মদিনে কেবল ভক্ত নয়, পৃথিবীর সবার জন্যই প্রার্থনা করছেন সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘সবাই মিলে আসেন আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের করোনা থেকে মুক্ত করে দেন। এটাই জন্মদিনের প্রার্থনা।’

উল্লেখ্য, সিনেমার গানে পূর্ণাঙ্গ গায়িকা হিসেবে সাবিনা ইয়াসমিনের পথচলা শুরু হয় ১৯৬৭ সালের ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমার মধ্য দিয়ে। তবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন ১৯৭২ সালের ‘অবুজ মন’ সিনেমায় গান করে। তার গাওয়া অসংখ্য কালজয়ী গানের মধ্যে কয়েকটি দেশাত্মবোধক হলো- ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘ও আমার বাংলা মা’, ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ’, ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’ ইত্যাদি।

সিনেমায় তার সফল গানের সংখ্যা অগণিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ‘চিঠি দিও প্রতিদিন’, ‘আমি রজনীগন্ধ্যা ফুলের মতো’, ‘কী দিয়া মন কাড়িলা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘কী জাদু করিলা’, ‘আগে যদি জানতাম’, ‘সে যে কেন এলো না’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘তুমি আমার মনের মাঝি’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘শত জনমের স্বপ্ন, ‘ও সাথী রে’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘আমি আছি থাকব’।

সাবিনা ইয়াসমিন একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারসহ অসংখ্য পদকে ভূষিত হয়েছেন। এছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৪ বার।

কেআই/আরআইজে