কিংবদন্তি সংগীত সাধক, গীতিকার, সুরকার, শিল্পী শাহ আবদুল করিম-এর প্রয়াণের এক যুগ হলো আজ (১২ সেপ্টেম্বর)। তার গানকে নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করতে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হাবিব ওয়াহিদ। বেঁচে থাকতে শাহ আবদুল করিমের বাড়িতেও গিয়েছিলেন হাবিব। সেই অনুভূতির কথাই ফুঠে উঠেছে তার এই লেখায়।

২০০৫ সালের কথা। শাহ আবদুল করিমের সঙ্গে দেখা করতে সিলেটে যাই। প্রায় ১২ ঘণ্টা জার্নি করে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময় মনের ভেতর দারুণ একটা উত্তেজনা কাজ করছিল। তার গ্রামে পা রাখতেই মনে হলো অন্য রকম এক পরিবেশে এসেছি। ইঞ্জিন বোটে চড়া, আশপাশের মনোরম সব দৃশ্য দেখার কথা কখনোই ভুলব না। বুঝতে পারছিলাম চারপাশের এসব বিষয়বস্তুকেই তিনি গানে রূপান্তর করেছেন।

তখন তিনি খুবই অসুস্থ। কথা বলতে পারেন না, ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারেন না। আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিনিও আমার দিকে তাকিয়ে। তার মুখ থেকে কোনো কথাই বের হলো না। কিন্তু চোখের একটা চাহনি ছিল। সেই চাহনিতেই যেন হাজার কথা বলে গেলেন। এমন একজন গুণী এবং সৃষ্টিশীল মানুষকে কাছ থেকে দেখার মধ্যেও আনন্দ আছে। অবশ্য তার সঙ্গে কথা বলতে না পারার একটা আফসোসও রয়ে গেছে। তবে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর স্মৃতি সারাজীবন মনে থাকবে।

তার সৃষ্টির পেছনে গ্রাম, বেড়ে ওঠা এবং পরিবেশের একটা ব্যাপার রয়েছে বলে আমি মনে করি। তিনি কিন্তু লন্ডনেও গিয়েছিলেন। জীবনে অনেক রঙিন জিনিসই দেখেছিলেন। তার পরও নিজ গ্রামের মায়াতেই পড়েছিলেন। যা তার সৃষ্টির প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এটা অনেক বড় ধৈর্যের ব্যাপার। এই ধৈর্য সবার থাকে না। তার কথা ও সুরের যে গভীরতা, সেটা ওই পরিবেশ এবং জীবনবোধ থেকেই পেয়েছেন। আমরা সাধারণত শহরের বর্ণিল জীবনের মায়াজালে আটকা পড়ি। এত সহজ-সরল জীবন পার করার ধৈর্য থাকে না। কিন্তু তিনি সেটাই করে দেখিয়েছেন, সফলতাও পেয়েছেন। তার সৃষ্টিই এর প্রমাণ। তার সঙ্গে কথা বলতে পারলে জিজ্ঞেস করতাম, এত এত সুন্দর এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ গান তিনি কিভাবে লেখেন? এগুলোর উৎস কী? লেখার সময় কী করেন। কিভাবে নিজের পরিচর্যা করেন।

শাহ আবদুল করিমের গান করে মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। হাতেগোনা কেউ কেউ আবার সমালোচনাও করেছেন। তবে আমি মনে করি যেকোনো মানুষই স্বাধীনভাবে তার মতামত দিতে পারেন। যে যেভাবেই গানগুলোকে গ্রহণ করেছেন, সবার প্রতিই আমার সম্মান রয়েছে।

আরআইজে