দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘অর্থহীন’-এর ভোকাল, বেজবাবা খ্যাত সুমন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে আবার ফিরেছেন গানে। আজ ২৩ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাতে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তিনি প্রকাশ করছেন কামব্যাক সং ‘বয়স হলো আমার’। এই গান এবং আরও নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন রবিউল ইসলাম জীবন

কেমন আছেন?

এখন বেশ ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।

সম্প্রতি রাফার বিয়ের অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন। সেখান থেকেই মূলত আপনার ভক্তরা আশান্বিত হয় আপনি আবার গানে ফিরছেন। কখনো কি মনে হয়েছিল আর গাইতে পারবেন না?

গত তিন বছর আমার জন্য ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জিং ছিল। জীবনে প্রথমবারের মতো প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। মার্চ মাসের ১০ তারিখ যখন আমাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানো হচ্ছিল, তখন মনে সন্দেহ ছিল আমি আবার দেশে ফিরতে পারব কিনা, কিংবা ফেরত আসলেও আবার সংগীত জীবনে ব্যাক করতে পারব কিনা।

আজ রাতে বয়স হলো আমারশিরোনামে নতুন গান প্রকাশ করছেন। গানটির প্রেক্ষাপট জানতে চাই।

গানটি করেছি আমার ব্যান্ডের মহান ফাহিমের সঙ্গে। এ গানটিতে কোনো বেজ সলো নেই, কোনো ভয়ংকর লিড নেই, ড্রামসের ক্যারিকেচার নেই! মহানের খুব সুন্দর বাজানো অ্যাকুস্টিক গিটারের ওপর খুব সাদামাটাভাবে আমার গাওয়া লিরিক নির্ভর একটি গান। এটি আমার ধীরে ধীরে বয়স বেড়ে যাবার গান, আমার গত ২ বছরের প্রায় পঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে থাকার গান, আমার অন্ধকারে ডুবে যাবার গান, আমার রাতের পর রাত প্রচণ্ড ব্যথায় চিৎকার করার গান, পরিশেষে বলব এটি আমার সব বাধা অতিক্রম করে আলোয় ফিরে আসার গান।

ফুয়াদের সঙ্গেও আপনার নতুন গান আসছে। কত বছর পর দুই বন্ধু একসঙ্গে কাজ করছেন?

খুব সম্ভবত ১২ বছর পর আবার কাজ করছি। ফুয়াদের সঙ্গে কাজ করা আমার জন্য খুব সহজ। আমি সাধারণত একটা মিউজিশিয়ান কতটা ভালো, শুধুমাত্র সেটার ওপর ভিত্তি করে তাদের সঙ্গে কাজ করি না, সেই মিউজিশিয়ানের সঙ্গে একটা ‘কানেকশন’ থাকতে হয়। ফুয়াদ শুধুমাত্র আমার ‘বন্ধু’ নয়, সে আমার ‘ভাই’। তার ফ্যামিলি আমার নিজের ফ্যামিলি। আমেরিকায় তাদের বাসায় গেলে আমার মনে হয় নিজের বাসাতেই আছি। তাদের পুরো ফ্যামিলি আমাকে যেভাবে ট্রিট করে সেটা কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না। সুতরাং ফুয়াদের সঙ্গে কাজ করাটা আমার জন্য অনেক সহজ, আমি অনেক এনজয় করি ব্যাপারটা।

কিছু ইন্সুট্রমেন্টাল নিয়ে কাজ করছেন শুনেছি…

আমার বেজ গিটারের ইন্সট্রুমেন্টালের একটা অ্যালবামের প্রথম পার্ট ‘সোলফুল: পার্ট ওয়ান’ ইতিমধ্যে বের হয়েছে। যেটা পশ্চিমা দেশগুলোতে ভালোই সাড়া জাগিয়েছে। এটার পার্ট-টু বের করার কথা ছিল পার্ট ওয়ান রিলিজের কয়েক মাসের মধ্যেই। কিন্তু আমার রোড অ্যাক্সিডেন্টের কারণে কাজটা থেমে যায়। ইনশাল্লাহ আগামী ৬ মাসের মধ্যে পার্ট-টু রিলিজ পাবে।

জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় টানা প্রায় মাস চিকিৎসার জন্য বিদেশে ছিলেন। কেমন ছিল সেই দিনগুলো?

আমি জীবনেও টানা এতদিন দেশের বাইরে থাকিনি। আমার জন্য ব্যাপারটা পুরো দুঃস্বপ্নের মত ছিল। আশা করি আর জীবনেও আমার দেশের বাইরে এতটা সময় থাকতে হবে না।

আপনার চিকিৎসার পরবর্তী প্রক্রিয়া কী?

বছর খানেকের মধ্যে স্পাইনের আরেকটি সার্জারি করাতে হবে। সেটা বেশ ভাইটাল সার্জারি। দুই বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সার্জারি করাতে হবে। এই দুইটি সার্জারি সাকসেসফুল হলে স্পাইন নিয়ে আর চিন্তা নেই। ক্যান্সারের ব্যাপারটা নিয়েও চিন্তার কিছু নেই। আমি অনেকদিন ধরেই ক্যান্সারমুক্ত। আল্লাহ্‌ না চাইলে ওইদিকে আর ফেরত যেতে হবে না।

এক সময় তো বাবার ব্যবসায় দেখাশোনা করতেন। এখন…

আমাদের ফ্যামিলি বিজনেসের কাজ দেশে আসার আগেই শুরু করে দিয়েছি। আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি আমার ফ্যামিলি, তারপর আমার বিজনেস, তারপর মিউজিক। মিউজিকটা আমার প্যাশন, পেশা নয়।

আপনার ছেলে-আহনাফ সম্পর্কে জানতে চাই…

আহনাফ যুক্তরাষ্ট্রের একটি ইউনিভার্সিটি থেকে আন্ডার গ্র্যাজুয়েশন করছে, যা শিগগিরই শেষ হবে। আমি যখন অসুস্থ অবস্থায় রাতের পর রাত বিছানায় শুয়ে ব্যথায় চিৎকার করতাম। আমার ছেলে তার ঘুম আর পড়াশোনা বাদ দিয়ে সবসময় আমার পাশে বসে থাকতো। কোনোদিন তার চোখে বিরক্তি অথবা ক্লান্তি দেখিনি!

ব্যান্ড সংগীতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বলুন?

তিন বছর আউট অব টাচ ছিলাম। এর মাঝে বেশ কিছু নতুন ব্যান্ড এসেছে। বামবা বেশ কিছু নতুন ব্যান্ড ইনক্লুড করেছে। আমার সবই দেখা বাকি। করোনা পরিস্থিতির জন্য লাইভ কনসার্ট হচ্ছে না। যেটা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই খারাপ একটা ব্যাপার। অ্যালবাম বের করার দিন আর নেই। এখন সিঙ্গেল ছাড়ার সময়। একটা নতুন ব্যান্ডের অ্যালবাম রিলিজ করতে যে পরিমাণ অর্থ, শ্রম, মেধা, সময় দিতে হয় তার কিছুই তারা ফেরত পায় না। টাকা উপার্জন করার সবচেয়ে ভালো উপায় আমার মতে লাইভ কনসার্ট, যেটা এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ। প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়াতে বিচরণ থাকাটাও খুব দরকার। সুতরাং, কোনও কিছুই আগের মতো নেই। পুরো পৃথিবীতেই সিস্টেমটা বদলে গেছে। কিন্তু আমার মতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সামনেই সুসময় আসবে।

মিডিয়াতে আপনার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু কে?

আমার ব্যান্ডের শিশির। আর ফুয়াদের ব্যাপারটা ভিন্ন, সে বন্ধু না, সে ভাই।

সংগীত জীবনের সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা কী?

একাধিকবার অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় মিউজিক করতে না পারা।

আরআইজে