গেল কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশি তারকা আজমেরী হক বাঁধনের সাফল্যের কথা সবারই জানা। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমার মাধ্যমে কানে বাঁধন যেমন হয়েছেন প্রশংসিত তেমন উজ্জ্বল করেছেন দেশের নাম। এরপর এই অভিনেত্রী নাম লিখিয়েছেন বলিউডে। সব মিলিয়ে বলা যায় বাঁধন যেন এখন সাফল্যের আকাশে উড়ছেন। অথচ এক সময় আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন এই তারকা। সোমবার (১ নভেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডায় এই কথা জানিয়েছেন বাঁধন নিজেই।

অভিনেত্রী বলেন, ‘২০০৫ সালের কথা। সে সময় আমার সঙ্গে অনেক অবিচার হয়েছে এবং পারিবাহিকভাবে অনেক সহিংসতার শিকার হয়েছি। সে কারণেই আমি দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি। সব মিলিয়ে সে সময়টা আমার জন্য খুবই কঠিন ছিলো। তখন যদি আমি মরে যেতাম অনেক  নিউজ হতো। যে যুদ্ধ করতে করতে মরে গেলো মেয়েটি। নির্যাতিতা হতে হতে মারা গেলো। যেহেতু আমি মারা যাইনি তাই আমি মনে করি এখন জীবিত ডাইনি হয়ে গেছি।’

বাঁধন মনে করেন, তার এই বেচে যাওয়া জীবনটা এখন সমাজের অন্য নারী যারা বন্দিদশা থেকে মুক্তি চান তাদের জন্য অনুপ্রেরণার, সাহস সঞ্চয়ের। বাঁধন বলেন, ‘আমার আশপাশের নারীরা যারা এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে চান। তারা যখন আমাকে বলেন আমার কোনো অ্যাচিভমেন্টকে- এটা  তাদের অর্জন বলে মনে করে। এটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে এবং বড় প্রাপ্তির মনে হয়।’

পর্দার ‘রেহানা’ বলেন, ‘আমার বাচ্চাকে নিয়েও অনেক ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তখন আমার হাতে ছিল দুই বছর। ভাবলাম যা আছে কপালে এবার আমি বিসিএস দেবোই। আমার নিজের ওপর যত না কনফিডেন্স, তারচেয়ে বেশি কনফিডেন্স আমার শিক্ষকদের, ফ্রেন্ডদের। কেন না আমি পড়াশোনায় খুবই ভালো ছিলাম। তারা বলল তুমি দিলেই হয়ে যাবে। কোচিং সেন্টারেও ভর্তি হয়েছি। ফরম পূরণের সময় আমি প্রথম পছন্দ দিয়েছি পুলিশ, সেকেন্ড, সেটাও পুলিশ, আমি জিজ্ঞেস করলাম তিনটাই কি পুলিশ দেওয়া যায়? আমাকে বলল যায় না। যাই হোক ওই পড়ার ভলিয়ুম দেখে, আর আমার বাচ্চাকে লালন পালন তাছাড়া টাকাও ইনকাম করতে হবে। যার কারণে বিসিএসটা দেওয়া হয়নি। বাট ওই পরীক্ষায় আমার নাম থাকবে, আমার অভিনীত সিনেমার নাম থাকবে- এটা আমি কল্পনাও করিনি।’

সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ৪৩তম সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাঁধন অভিনীত ‘রেহামা মরিয়ম নূর’ থেকে প্রশ্ন করা প্রসঙ্গে শেষের কথাগুলো বলেন বাঁধন।

বাঁধন বলেন, ‘এখন যখন সবই আমাকে বলেন, বাঁধন এখন তোমার এতো এতো অ্যাচিভমেন্ট, তুমি এতো এতা কিছু করে ফেলছো, তুমি কানে চলে গেছো, তুমি বলিউডের বিশাল ভরদ্বাজের কাজ করছো। তোমাকে নিয়ে এতো আলোচনা হচ্ছে,  এতো বড় একটা অ্যাওয়ার্ডের জন্য নমিনেশন পেয়েছো। কিন্তু আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে আমার মেয়ে আমাকে হেরে যেতে দেখছে না। আমি মনে করি, এটাই আমার বড় প্রাপ্তির জায়গা।’

কান চলচ্চিত্র উৎসবের পর ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ঘুরে এসেছে মেলবোর্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, বিএফআই লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, হংকং এশিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, বুশান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, সিডনি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ মোট ১৩টি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে। আগামী বছর যাবে অস্কারে। এছাড়া অপেক্ষায় আছে আরও বেশ কিছু দেশে যাওয়ার।

এতদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশি দর্শকরাও এবার সিনেমাটি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। আগামী ১২ নভেম্বর দেশে মুক্তি পাচ্ছে সিনেমাটি। নিজ দেশে সিনেমাটি মুক্তির খবরে দারুণ উচ্ছ্বসিত বাঁধন। আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের পরিচালনায় এই সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

আরআইজে