পেশায় তিনি একজন মেরিন অফিসার। কাজ করছেন সেকেন্ড অফিসার হিসেবে। কাজের প্রয়োজনেই সাগরে সাগরে ভেসে বেড়ান তিনি। ছুটে যান এ দেশ থেকে ও দেশে। আর এ যাত্রায় তার সঙ্গী হয় গিটার। গিটারের সুরে সুরে সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে যান। তিনি একজন ভিন্ন ভাবনার মেরিন অফিসার। তার নাম আব্দুল্লাহ হিল মারুফ

রাজশাহীতে জন্ম নেওয়া এই তরুণ ছোটবেলা থেকেই গান গাইতে ভালোবাসেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো সংগীতের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক দীক্ষা নেননি। তবেই শখের বসেই কাজটি করেন তিনি। ২০১৮ সালের শেষ দিকে ‘পেন্সিল’ নামে একটি গ্রুপে একটু একটু করে গান আপ দিতে তিনি। সেখান থেকে ভালো রেসপন্স পেয়ে ২০১৯ সালে চলে যান ইউটিউব এবং নিজের নাম খোলা ফেসবুক পেজেও। মিলতে থাকে দারুণ সাড়াও।

মারুফের কভার করা এসব গানের মধ্যে রয়েছে-‘একটা ছিল সোনার কন্যা’, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘দেয়ালে দেয়ালে’, ‘আহারে জীবন’, ‘কেন হঠাৎ তুমি এলে’, ‘কী নামে ডেকে বলবো তোমাকে’, ‘নীলাঞ্জনা’, ‘তুমি আমার মনের মানুষ’, ‘তুমি হয়তো বহুদূর’, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’, ‘দেখেছি রূপসাগরে’, ‘তারে বলে দিও’, ‘প্রেমে পড়া বরণ’, ‘বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে’, ‘মনে পড়ে রুবি রায়’, ‘আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন’সহ আরও কিছু গান।

এসব গানের জন্য ব্যাপক সাড়াও পান মারুফ। লাখ লাখ ভিউয়ার ছাড়িয়ে এসব গান। কমেন্ট বক্সে জমতে থাকে প্রশংসার পর প্রশংসা। তবে মারুফের পেজে বা চ্যানেলে গেলে এই গানগুলোর বেশিই এখন পাওয়া যাবে না। কারণ বাণিজ্যিক শর্তের কারণে বিভিন্ন শিল্পী বা প্রতিষ্ঠানের অভিযোগে গানগুলো মুছে দেওয়া হয়েছে।

তারপরও থেমে যাওয়ার পাত্র নন এই নাবিক কাম গায়ক। জানিয়েছেন, সময় সুযোগ বুঝে নতুন গান প্রকাশ করবেন। সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করছেন। গানের প্রতি নিজের যে ভালোবাসা তা থেকে কখনো বেরিয়ে আসা সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।

গানের পাশাপাশি মাঝে মধ্যে জাহাজের বিভিন্ন ক্রিয়া কৌশল ও ভেতরের পরিবেশ নিয়ে ভিডিও তৈরি করে থাকেন মারুফ। জাহাজ পরিচালনা, নোঙ্গর ফেলা, নিরাপত্তা সরঞ্জাম বা তীব্র সামুদ্রিক ঝড়ের মধ্যে নাবিকদের লড়াই—কিছুই বাদ যায় না তার কনটেন্ট থেকে।

মারুফ বলেন, ‘আমাদের পেশা নিয়ে সাধারণ মানুষের একটা বড় আগ্রহ আছে। তারা জানতে চান আমরা কোথায় থাকি বা কী কাজ করি। তাই আমি চিন্তা করি জাহাজের মধ্যে আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম নিয়ে ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ তৈরি করার এবং সেগুলো স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করলে দর্শকদের দারুণ সাড়াও পেতে থাকি।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে মারুফ ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রকৌশলী বিভাগে। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি সেই যাত্রা। পরে একটি বেসরকারি মেরিটাইম ইনস্টিটিউট থেকে সামুদ্রিক প্রকৌশলী বিদ্যার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে যোগ দেন জাহাজের শিক্ষানবিশ হিসাবে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লিভারপুল জন মুর্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন উচ্চতর প্রফেশনাল ডিগ্রি। বর্তমানে তিনি হংকং ভিত্তিক একটি কোম্পানির তেলবাহী জাহাজের সেকেন্ড অফিসার হিসাবে কর্মরত। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন গানের চর্চা।

আরআইজে