দেশের কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী থেকে শুরু করে এই প্রজন্মের কাছে তবলা শিল্পী হিসেবে নির্ভরতার নাম পল্লব স্যানাল। গানের আয়োজনে যদি তবলার কোন বিষয় থাকে সেখানে যদি পল্লব স্যানাল থাকেন, তাতে যেন শিল্পীও পরম আনন্দে থাকেন। কারণ শিল্পী উপলদ্ধি করতে পারেন তার গান আজ একটু বেশিই ভালো হবে।

আজ থেকে তিন দশক আগে পেশাগতভাবে তবলাশিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু হয় পল্লব স্যানালের। পাবনার সন্তান পল্লব স্যানালের বাবা শৈলেস চন্দ্র স্যানাল ছিলেন মিউজিক কলেজে। বাবার কাছেই তবলায় হাতেখড়ি পল্লবের।

১৯৮৫ সালে তার বাবা মারা গেলে ১৯৮৯ সালে ঢাকায় এসে তারই বাবার বন্ধু ওস্তাদ কামরুজ্জামান মনির কাছে বেশকিছুদিন তবলায় তালিম নেন পল্লব। সেই সময় তিনি কিছুদিন চাকরিও করেন। কিছুদিন করেন টিউশনি। এর পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন প্রোগ্রামে তবলা বাজানো শুরু করে দেন পেশাগতভাবে।

ঢাকার মঞ্চে তিনি শাহীন সামাদের সঙ্গে প্রথম তবলা বাজান। পরবর্তীতে একে একে ফেরদৌসী রহমান, সুবীর নন্দী, ফাতেমা তুজ জোহরা থেকে শুরু করে এই প্রজন্মের সকলশিল্পীর সঙ্গেই তবলা বাজিয়েছেন। মূলত শিল্পীরা তার ওপর আস্থা রাখার কারণ একটাই। সেটা হলো পল্লব স্যানাল বাংলাদেশের একমাত্র ভার্সেটাইল তবলাশিল্পী যিনি একাধারে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, পঞ্চকবির গান, লালনগীতি, ফোক গান, আধুনিক গান এবং সর্বোপরি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তবলায় পারদর্শী।

পল্লব স্যানাল বলেন,‘ আমি মনেকরি মিউজিশিয়াস মানেই হচ্ছে তাকে ভার্সেটাইল হতে হবে। রবীন্দ্র বা নজরুলসংগীতে বা উচ্চাঙ্গ সংগীতের সঙ্গে সংগতটা কী হবে সেটা জানতে হবে, জেনে বাজাতে হবে। ভাষা বা বানী প্রদান গানকে না জেনে তবলা বাজিয়ে গানকে ডিস্টার্ব করা যাবে না। ফোক গানে ফোক গানের সঙ্গে মানানসই কিংবা উচ্চাঙ্গসংগীতের সঙ্গে মানানসই তালই বাজাতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনেকরি এই শিল্পটা সম্পর্কে অগাধ জেনে বুঝেই বাজাতে হবে। আমার প্রতি শিল্পীদের আস্থা, ভালোবাসা আমি মনে করি এটা ঈশ্বরের পরম দয়া, বাবা মায়ের আশীর্বাদ আর সকলের ভালোবাসা। তবে আমি নিজেও এখনো কলকাতার শ্রদ্ধেয় পণ্ডিত কুমার বোসের কাছে তবলা শিখছি।’

উল্লেখ্য, পল্লব স্যানালের সুর করা গান আছে ২০০’র বেশি। গেয়েছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী, সুবীর নন্দী, কনকচাঁপা, বেবী নাজনীন, অ্যান্ড্রু কিশোর, আসিফ আকবরসহ আরও অনেকে। আসিফের জন্য তিনি একশোর মতো গান সুর করেছেন। পল্লব স্যানালের স্ত্রী সংগীতা। মেয়ে শ্রেয়া-পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ছেলে পঞ্চম বাবার পথেই হাঁটছে। তবলা নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন এই বাদক।

আরআইজে