তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। বর্ণাঢ্য সংগীত জীবনে হাজারো গান সৃষ্টি করেছেন। তার সৃষ্ট অধিকাংশ গানই হয়েছে জনপ্রিয়, কালজয়ী। বলাই বাহুল্য, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জনপ্রিয় গান সৃষ্টি করেছেন তিনি।

নাম তার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। আজ ২২ জানুয়ারি তার চলে যাওয়ার দিন। ২০১৯ সালের এই দিনে বাংলা গানে অসামান্য শূন্যতা তৈরি করে তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।

১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। কৈশোর কেটেছে যুদ্ধের পরিবেশে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। বিভীষিকাময় সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে শুরু করেন সংগীতচর্চা। ১৯৭৬ সাল থেকে নিয়মিত গান করা শুরু করেন তিনি।

সংগীত পরিচালক হিসেবে বুলবুলের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ সিনেমার মাধ্যমে। তবে জনপ্রিয়তার কাতারে আসতে তার সময় লেগেছে বেশ কয়েক বছর। আশির দশকে তার সৃষ্ট গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। যার শুরুটা ১৯৮৪ সালের ‘নয়নের আলো’ সিনেমার মাধ্যমে। এই একটি সিনেমায় বুলবুলের সৃষ্ট ‘আমার সারাদেহ খেয়োগো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’ গানগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। যেগুলো আজও শ্রোতাদের মনে জায়গা করে আছে।

জীবদ্দশায় শতাধিক সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। প্রেম, ভালোবাসার পাশাপাশি দেশাত্মবোধক গানেও নিজেকে অনন্য করে তুলেছিলেন তিনি। তার সৃষ্ট কালজয়ী দেশাত্মবোধক গানের সংখ্যাও অনেক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে’, ‘সেই রেললাইনের ধারে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’, ‘ও আমার আট কোটি ফুল দেখ গো মালি’, ‘মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেবো না’ ইত্যাদি।

সিনেমায় বুলবুলের সৃষ্ট অসংখ্য কালজয়ী গানের মধ্যে কয়েকটি হলো- ‘আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’, ‘আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি’, ‘আইলো দারুণ ফাগুনরে’, ‘আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে’, ‘পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি’, ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’, ‘ঐ চাঁদ মুখে যেন লাগে না গ্রহণ’, ‘বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম’, ‘আম্মাজান আম্মাজান’, ‘এই বুকে বইছে যমুনা’, ‘সাগরের মতই গভীর’, ‘আকাশের মতই অসীম’, ‘আমি জীবন্ত একটা লাশ’।

সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক-এ ভূষিত হয়েছিলেন। এছাড়া পেয়েছিলেন দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

কেআই