অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর। ২৭ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর আজ রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ১২ মিনিটে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে মারা গেছেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। উপমহাদেশের কিংবদন্তি গায়িকার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে দুনিয়াজুড়ে।

আজ থেকে ৩০ বছর আগে কলকাতায় আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের কল্যাণে লতার সান্নিধ্য পেয়েছেন বাংলাদেশের কিংবদন্তির সংগীত পরিচালক আলাউদ্দীন আলীর কন্যা গায়িকা আলিফ আলাউদ্দীন। লতার মৃত্যুর খবরে শোকাহত আলিফ তুলে ধরলেন সেই দিনের স্মৃতি।

আলিফ আলাউদ্দীন বলেন, ‘৯০/৯১ সালের কথা, কলকাতার ৪০০ বছর উদযাপন অনুষ্ঠান। কলকাতা স্টেডিয়ামে সংবর্ধনা দেয়া হয় শ্রদ্ধেয় রুনা লায়লা আন্টি, ভূপেন হাজারিকা, আব্বু (আলাউদ্দীন আলী)সহ কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকরকে। মনে আছে আমরা উঠেছিলাম গ্র্যান্ড ওবেরয় হোটেলে। লতা মঙ্গেশকরের সাথে আমার সংগীতের চেনা জানা মা-খালাদের মাধ্যমে। একই হোটেলে আম্মু (কণ্ঠশিল্পী সালমা সুলতানা) আর লতাজি আছেন, এটা চিন্তা করেই আম্মুর চোখ মুখ জ্বল জ্বল করছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘তারপর আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, রুনা আন্টি আমাদের নিয়ে যাবেন কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকরের রুমে। লিফটে আম্মু রুনা আন্টিকে বললেন ‘রুনা আপা আমার খুব নার্ভাস লাগছে’। রুনা আন্টি হাসলেন, বললেন ‘it’s okay’। ওনার হোটেল সুইট রুমে ঢুকে বসলাম। উনি রুম থেকে বের হতেই সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম। কেমন যেন দ্যুতিময় তিনি। কিছুক্ষণ কথা, তারপর ছবি তোলার পালা। কিংবদন্তি নিজেই তার পাশে আমাকে আদর করে বসালেন, ছবি তুললেন। তানি লায়লা (রুনা আন্টির কন্যা) সেও ছবি তুললো।

এবারে মায়ের ছবি তোলার পালা, লতাজি উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছেন, আম্মু তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেন উনাকে উঠতে দিলেন না। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, কি অদ্ভুত শ্রদ্ধাবোধ। এটা আমার আব্বু-আম্মু দুজনের মধ্যেই ছিল।’

আলিফের ভাষায়, ‘আজ ওনার (লতা মঙ্গেশকর) চলে যাওয়াটা আমার ছোটবেলার অনেক স্মৃতি নিয়ে চলে যাওয়ার মতো লাগছে। ছোটবেলায় দুপুরের ভাত খেয়ে মার সাথে শুয়ে শুয়ে লতাজির গান শোনা ছিল প্রায় প্রতিদিনের রুটিন। ভালো থাকবেন হে কিংবদন্তি। ধন্যবাদ এই স্মৃতিগুলোর জন্যে। ভালো থেকো মা।’

উল্লেখ্য, করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় গত ১১ জানুয়ারি লতাকে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত ছিলেন তিনি। প্রথম থেকেই তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। ৩০ জানুয়ারি শিল্পীর কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। কিন্তু বয়সজনিত নানা সমস্যার কারণে শেষ পর্যন্ত আর লড়তে পারলেন না। লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

আরআইজে