সুরের সরস্বতী দেবী বলা হয় তাকে। গান গেয়ে নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে তিনি অদ্বিতীয়। উপমহাদেশের সংগীতে তাকে মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করে সবাই। সেই লতা মঙ্গেশকর চলে গেছেন না ফেরার দেশে। রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। পরিবার থেকেই তার গানে হাতেখড়ি। যদিও বাবার নিষেধাজ্ঞা থাকায় হিন্দি গান শুনতে পারতেন না। অথচ সেই লতাই পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন হিন্দি গানের মহারানী।

খুব ছোটবেলায় মঞ্চে গান গাওয়া শুরু করেন লতা মঙ্গেশকর। জানা যায়, গান গেয়ে তার প্রথম আয় ছিল ২৫ রুপি। কৈশোরে বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন লতা। কারণ ছোট ভাই-বোনসহ পরিবারের দায়িত্ব তার কাঁধেই এসে পড়ে। পরিবারের কথা ভেবে সারাজীবনে বিয়েই করেননি তিনি। গান গেয়ে উপার্জন করছেন, আর পরিবারকে আগলে রেখেছেন।

লতা মঙ্গেশকর ও তার বোন আশা ভোঁসলে দু’জনেই ভারতীয় সংগীতের কিংবদন্তি। তবে শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে বরাবরই এগিয়ে লতা। এ নিয়ে ছোটবেলা থেকেই নাকি তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। একে-অপরকে খুব একটা সহ্য করতে পারতেন না।

ভারতের ইতিহাসবিদ রাজু ভারতন একটি বই লিখেছিলেন লতা-আশাকে নিয়ে। সেখানেই তিনি দুই বোনের অম্ল-মধুর সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। রাজু জানান, ১৯৫০-৬০ এর দশকে যখন একটি গান গাওয়ার জন্য ৫০০ রুপি পেতেন লতা মঙ্গেশকর। অন্যদিকে আশা ভোঁসলে পেতেন মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ রুপি।

শেষ জীবনে এসে প্রত্যেকটি গানের জন্য ৩০ থেকে ৩৫ লাখ রুপি পেতেন লতা মঙ্গেশকর। যা ছিল ভারতীয় সংগীতশিল্পীদের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিভিন্ন সূত্রে লতা মঙ্গেশকরের সম্পদের পরিমাণ ভিন্নরকম পাওয়া যায়। একটি সূত্র মতে তার সম্পদের পরিমাণ ১৫ মিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩০ কোটি টাকা। অন্য একটি সূত্র মতে, লতার মোট সম্পদ প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার। যা প্রায় ৪৩০ কোটি টাকার সমান।

কেবল জনপ্রিয়তা আর অর্থ-সম্পদ নয়, লতা মঙ্গেশকর পেয়েছিলেন ভারতের সমস্ত সম্মাননা। দেশটির সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘ভারত রত্ম’ পদকে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া ভারতীয় সিনেমার সর্বোচ্চ পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ফিল্মফেয়ারসহ অসংখ্য স্বীকৃতি পেয়েছিলেন নাইটিঙ্গেল অব ইন্ডিয়া।

কেআই/আরআইজে