উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর মারা গেছেন গতকাল। মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

বাবার মৃত্যুর পর মাত্র ১৩ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরেন লতা। পাঁচ ভাই-বোনকে পিতৃস্নেহে আগলে রেখে বড় করেছেন তিনি। ‘সুরের স্বরসতী’র মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে দুনিয়াজুড়ে। শোকে কাতর তার পরিবার, প্রিয়জনরা।

লতার নামের সঙ্গে পাশাপাশি চলে আসে তার বোন আরেক কিংবদন্তি গায়িকা আশা ভোঁশলের নামও। আর তাই অন্য সবার চেয়ে তার কষ্টটা হয়তো একটু বেশিই। দুই বোনের মধ্যে নানান মান-অভিমান থাকলে বোনের মৃত্যুতে আশা যে বেশ ভেঙে পড়েছেন তা স্পষ্ট তার একটি পোস্টে।

এদিন গভীররাতে লতার সঙ্গে ছেলেবেলার একটি ছবি শেয়ার করেন আশা। লেখেন, ‘দিদি আর আমি, আমাদের ছেলেবেলাটা কত দুর্দান্ত ছিল’। সঙ্গে জুড়ে দেন ভালোবাসার ইমোজি।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি কাঠের পাটাতনের উপর বসে আছেন ছোট্ট আশা, পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন লতা। পারিপারিক ছবির অ্যালবাম থেকেই বোনের সঙ্গের এই দুর্লভ মুহূর্ত অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নেন তিনি।

এই ছবিতে লাইক,কমেন্টের বন্যা। লতার পরিবারের সকল সদস্যদের প্রতি সমেবদনা জানাচ্ছেন নেটপাড়ার বাসিন্দারা। কমেন্ট বক্সে মন্তব্যের ছড়াছড়ি। অভিনেতা হৃতিক রোশন একটি হৃদয়ের ইমোজি জুড়ে দেন। অভিনেতা সিদ্ধান্ত কাপুর লেখেন, ‘অনেক ভালোবাসা আজি’। সম্পর্কে আশা-লতাদের দূর সম্পর্কের নাতি সিদ্ধান্ত।

জানা গেছে, শেষ সময়ে বোনের পাশেই ছিলেন আশা। শনিবার রাতে লতা মঙ্গেশকরের শারীরিক পরিস্থিতি বিগড়লে তাকে দেখতে ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন আশা। রোববার লতার প্রভাত কুঞ্জের বাড়িতেও উপস্থিত ছিলেন গায়িকা, হাসপাতাল থেকে সোজা সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল লতা মঙ্গেশকরের মরদেহ।

এরপর সেখান থেকে আশা পৌঁছান শিবাজি পার্কে, সেখানে হাজির ছিলেন তাদের অপর বোন ঊষা মঙ্গেশকরও। লতার মুখাগ্নি করেন ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।

প্রসঙ্গত, ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর লতার জন্ম এক মারাঠি পরিবারে। বাবার হাত ধরেই গান ও অভিনয়ের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। ১৩-১৪ বছরে প্রথম গান গেয়েছিলেন মারাঠি সিনেমায়। হিন্দিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন ‘মজবুর’ সিনেমায়। লতার সুরেলা কণ্ঠ সিনেমা ও গানে প্রাণ ঢেলে দিতো। নক্ষত্রপতনে তাই শোকস্তব্ধ দুনিয়া।

২৭ দিন ধরে করোনা, নিউমোনিয়া আর বার্ধক্যজনিত জটিলতার সঙ্গে লড়াই করেছেন লতা মঙ্গেশকর। ৯ জানুয়ারি তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। সেখানে অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছিল লতার। ৩০ জানুয়ারি তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। ভেন্টিলেশন থেকে বের করেও নিয়ে আসা হয় সুরসম্রাজ্ঞীকে। কিন্তু দুদিন আগে পুনরায় তার অবস্থার অবনতি হয়। অবশেষে রোববার সকালে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

আরআইজে