মহিলার নাম নাজমা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বাইরে রাস্তার ধারে একটি চা দোকান চালান। চা বিক্রি করেই চলে তার সংসার। স্বামী ছেড়ে গেছেন, তাই দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নাজমার এই সংগ্রাম চলমান।

কিন্তু আর না। নাজমাকে আর চায়ের কাপে নাড়তে হবে না চামচ। প্যাকেট ছিঁড়ে দিতে হবে না কোনো ক্রেতাকে সিগারেটের শলাকা। কারণ তিনি চাকরি পেয়েছেন। তাকে চাকরি দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘চিরকুট’-এর গায়িকা ও প্রতিষ্ঠাতা শারমিন সুলতানা সুমি।

তিনি জানান, অফিসিয়াল কাজে বৃহস্পতিবার সকাল সকাল তিনি আগারগাঁও যান। সেখানেই নাজমাকে দেখতে পান এবং তার সম্পর্কে জানতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি ছবি পোস্ট করে পুরো ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছেন এই ব্যান্ড তারকা।

নাজমার সম্পর্কে সুমি জানান, চারবার অনেক কষ্টে সুদে টাকা যোগাড় করে স্বামীকে দেশের বাইরে পাঠিয়েছিলেন নাজমা। বারবারই তিনি হতাশ করে উল্টো লোনের বোঝা মাথায় করে ফিরে আসেন। পরে আর কোনো দায়িত্ব না নিয়ে পালিয়ে যান স্বামী।

সুমি লিখেছেন, ‘তার মেয়েটা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। ছেলেটা ক্লাস এইটে। চা বিক্রি করেই কোনোমতে সব চালাচ্ছেন। কিন্তু তার চোখেমুখে কোন দারিদ্র্য নেই। তার কষ্ট একটাই, মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না। চা বিক্রি করেন বলে সবাই পিছিয়ে যান।’

হার না মানা নাজমার সংগ্রামে মুগ্ধ হন সুমি। তাই চা খাওয়া শেষে আইসিটি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মিটিংয়ের ফাঁকে প্রতিমন্ত্রী পলককে বললেন, এই নারীর জন্য কিছু করা যায় কিনা। সুমির কথা শুনে এক মুহূর্ত দেরি করেননি মন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গে ওই নারীকে ডেকে পাঠান। তার জন্য একটি চাকরি নিশ্চিত করেন। শুধু তাই নয়, নাজমার দুই ছেলে-মেয়ের জন্য দুটি ল্যাপটপও উপহার দেন।

সুমির বর্ণনা, ‘নাজমা আপা কাঁদতে শুরু করলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা সবাই কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। পলক ভাই আমার মতো ক্ষুদ্র একজন মানুষের কথায় সম্মান রেখে আজকে যে অসাধারণ কাজটা করলেন, সত্যিই ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা নেই। সৃষ্টিকর্তা আসলেই মহান! তিনি কার উসিলায় কখন যে কার ভাগ্য বদলে দেন, তা তিনিই জানেন।’

সবশেষে সুমি লেখেন, ‘নিজের সম্মান নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া মানুষের শক্তি অনেক, ভয় নেই। আজকের দিনটা সারা জীবন মনে থাকবে। আন্তরিক শ্রদ্ধা, দোয়া আর প্রার্থনা থাকল পলক ভাইয়ের মহানুভবতা আর নাজমা আপার সংগ্রামী শক্তির জন্য।’

কেআই