কেরিয়ারের প্রথম চলচ্চিত্রে তুমুল অসফলের পর অভিনয় ছেড়ে দেশ থেকেই চলে গিয়েছিলেন তিনি । মাঝে ছিল বছর সাতেকের বিরতি। তার পর নয়া অবতারে পর্দায় ফিরেছেন তিনি। বলছি ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’-এর খলনায়ক ফাহাদ ফাসিলের কথা। 

ইরফান খানকে পর্দায় দেখেই ফের সাউন্ড, ক্যামেরা, অ্যাকশনের জগতে ফেরা ফাহাদের। কেরিয়ারের দ্বিতীয় পর্বে অবশ্য তাকে কুর্নিশ করছেন আম জনতা থেকে সমালোচকেরাও। মালয়ালম ছবিতে তো বটেই, দেশের সেরাদের সঙ্গেও ফাহাদের নাম করতে শুরু করেছেন তারা।

‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ এ মাত্র মিনিট পনেরো পর্দায় ছিলেন ফাহাদ। তাতেই নজর কেড়ে নিয়েছেন। তবে এই প্রথম নন। এর আগেও তারকার পাশে হামেশাই ‘ছোট’ চরিত্রে দেখা গিয়েছে তাকে। তবে কখন যেন তার দিকে নজর ঘুরে গিয়েছে। তার পর তারকাকে ছাপিয়ে সেই ‘ছোট’ চরিত্রই দর্শকদের বেঁধে রেখেছে। সত্তর-আশির দশকের ভরত গোপী বা নেদুমুদি বেণুর মতো মালয়ালম ছবির দুই নামজাদার সঙ্গে তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে ফহাদের।

ভিড়ে মিশে গেলে আলাদা করে চেনা যায় না। তবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে বড় বড় তারকাকেও নাকি কাত করে দিতে পারেন ৩৯ বছরের ফহাদ।

তবে ২০০২ সালে ফাহাদের সম্পর্কে সে কথা বলা যায়নি। সে বছর ফাহাদ ফাসিলের প্রথম চলচ্চিত্র ‘কাইয়েতুম দোরথ’ চূড়ান্ত হতাশা জাগিয়েছিল। ফাহাদের বাবা ওই চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসেবে সমালোচিত হয়েছিলেন। তবে ব্যর্থতার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে ফাহাদ স্বীকার করেছিলেন, ‘কোনো রকমের প্রস্তুতি না নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো উচিত হয়নি।’

প্রথম ছবির ব্যর্থতায় অভিনয় জগৎ থেকেই স্বেচ্ছায় নির্বাসন নেন ফাহাদ। দেশ ছেড়ে আমেরিকায় শুরু করেন পড়াশোনা। ছাত্র অবস্থায় এক পাকিস্তানির দোকানে নিত্যদিনের জিনিসপত্র কিনতে যেতেন। সেখানেই নতুন করে অভিনয়ের পোকা নড়ে উঠেছিল মাথায়।

আমেরিকায় থাকাকালীন ওই পাক নাগরিকের দোকানে হিন্দি ছবির ডিভিডি কিনতেন ফাহাদ। সে সময়ই ইরফান খানের একটি ছবি দেখেছিলেন তিনি। নারিরুদ্দিন শাহের পরিচালনায় ‘ইউ হোতা তো ক্যায়া হোতা’। তাতে ইরফানকে দেখে হতবাক হয়ে যান ফাহাদ। অতি-অভিনয় নয়, স্বল্প ভাবভঙ্গিতেই চরিত্রকে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন ইরফান। সেই থেকে ইরফানের সিনেমা দেখা শুরু। নতুন করে অভিনয়ে ঝোঁকাও শুরু।

সাত বছর পর সব ছেড়ে আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে আসেন ফাহাদ। এ বার ‘কেরালা ক্যাফে’ নামে কামব্যাক ফিল্মেই কামাল। ২০০৯ সালের ওই মালয়ালম ছবিতে ফাহাদের অন্য রূপ দেখেছিলেন দর্শকরা। তার পর থেকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

কেরিয়ারের দ্বিতীয় পর্বে একের পর এক চরিত্রে নিজেকে হাজির করেছেন ফাহাদ। ‘আন্নায়ুম রসুলম’-এ যখন মৃত প্রেমিকার সামনে প্রেম নিবেদন করছেন, দর্শকেরা টের পেয়েছেন তার অনুভূতি। আবার ‘আর্টিস্ট’-এ এক স্বার্থপর দৃষ্টিহীন যখন স্ত্রীর সম্মানহানি করছেন, তখন রাগে ফেটে পড়েছেন অনেকে। ‘নর্থ ২৪ কথম’, ‘রেড ওয়াইন’ অথবা ‘অরু ইন্ডিয়ান প্রণয়কথা’— একের পর এক ছবিতে নিজের সীমারেখা ছাপিয়ে গিয়েছেন ফাহাদ।

অনেকে বলেন, অভিনয় ছাড়াও অন্য আর একটি গুণ রয়েছে ফাহাদের। তারকা হওয়ার লোভ নেই। বরং শক্তিশালী চরিত্রের খোঁজে থাকেন তিনি। ফাহাদকে এমন বহু ফিল্মে দেখা দিয়েছেন, যেখানে তার চরিত্রে মুখ্য নয়। তবে তিনি নজর কেড়েছেন।

তার প্রতিভার স্বীকৃতিও মিলেছে। ‘আর্টিস্ট’ এবং ‘অরু ইন্ডিয়ান প্রণয়কথা’-তে কেরল সরকারের বিচারে সেরা অভিনেতা হয়েছেন। পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারও। ২০১৭ সালে ‘থন্ডিমুথলম দ্রিকসকশিয়ম’-এ সেরা সহ-অভিনেতার সম্মান পান ফাহাদ।

নতুন চলচ্চিত্র ‘পুষ্পা : দ্য রাইজ’ এ আইপিএস আধিকারিক ভৈরোঁ সিংহ শেখাওয়াতের চরিত্রে ফাহাদকে দেখে মুগ্ধ ওই ছবির নায়ক অল্লু অর্জুনও। বলেছেন, এই মুহূর্তে দেশের সেরা অভিনেতাদের অন্যতম ফাহাদ। তার অভিনয়ের স্টাইলে আমি মুগ্ধ। কোনো প্রম্পটার ছাড়াই অভিনয় করেন। তেলুগু ভাষা জানেন না। ফলে নিজের সংলাপ লিখে নিয়ে বার বার তা পড়তে থাকেন। তারপর পর্দায় এমন ভাবে সংলাপ বলেন, যেন তেলুগু তার মাতৃভাষা!

অভিনয়ের ব্যস্ততার মাঝে বিয়েও সেরে ফেলেছেন ফাহাদ। মালয়ালম ছবির নায়িকা নজরিয়া নাজিমের সঙ্গে ‘ব্যাঙ্গালোর ডেজ’-এর সেটে আলাপ। ২০১৪ সালে ওই ফিল্মের শ্যুটিংয়ের ফাঁকেই প্রেমও শুরু। সে বছরই নজরিয়াকে বিয়ে করেন ফাহাদ।

‘পুষ্পা : দ্য রাইজ’-এ সাফল্যের পর এ বার ফাহাদের সামনে আরও বড় সুযোগ। তামিল ছবি ‘বিক্রম’-এ কমল হাসনের সঙ্গে দেখা যাবে ফাহাদকে।

আইএসএইচ