২০২২ সালটা সহজেই ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন বলিউডের সিনেমা সংশ্লিষ্টরা। দক্ষিণী সিনেমা যেখানে কোটি কোটি টাকা ব্যবসা করেছে সেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছে বলিউডের বড় বড় তারকাদের বিশাল বাজেটের সব সিনেমা। 

বছরজুড়ে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা ছবি হিট করেছে, বক্স অফিসে ভালো ব্যবসা করেছে। বছর শেষে মুক্তি পাওয়া সার্কাস তো সোজাসুজি মুখ থুবড়ে পড়েছে বক্স অফিসে।  

এ বছর বলিউড মাত্র পাঁচটি ব্লকবাস্টার দিয়েছে। ‘দৃশ্যম ২’, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, ‘ভুল ভুলাইয়া ২’, ‘কেজিএফ ২’ (হিন্দি), ‘কান্তারা’ (হিন্দি)- এই ছবিগুলো একমাত্র বক্স অফিসে ভালো সাড়া পেয়েছে। ‘ব্রহ্মাস্ত্র’, ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াডি’ ছবিগুলো হিট করেছিল বক্স অফিসে। কিন্তু বাকি ছবিগুলো? ‘লাল সিং চাড্ডা’, ‘সার্কাস’ সহ এই বছর মুক্তি পাওয়া মোট ৩৯টা সিনেমা বক্স অফিসে ফ্লপ করেছে। তালিকায় আছে ‘রাধে শ্যাম’, ‘বচ্চন পাণ্ডে’, ‘জার্সি’, ‘রানওয়ে ৩৪’, ‘হিরোপান্তি ২’, ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’, ‘রক্ষা বন্ধন’, ‘বিক্রম বেদা’, ইত্যাদি।

কিন্তু আচমকাই বলিউডের এমন করুন দশা হল কেন? এটা কি মহামারির সাইড এফেক্ট? ট্রেড অ্যানালিস্ট করণ তৌরনি জানান, ২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া মাত্র ১২-১৪ শতাংশ ছবিই বক্স অফিসে হিট করেছিল। আর বাকি সব ছবিই হতাশ করেছে। মহামারির আগে যেখানে হিন্দি ছবির মোট বক্স অফিস কালেকশন ছিল ৪০০০ কোটি টাকা সেটাই ২০২২ সালে মহামারির পর কমে হয়েছে ৩০০০-৩২০০ কোটি টাকা মতো। যদিও অনেকটাই রিকভার করেছে বলিউড। তবুও হিন্দি ছবির যোগদান খুব কমে গেছে। এ ৩২০০ কোটির মধ্যে ৮০০ কোটির মতো এসেছে আঞ্চলিক ভাষার ছবিগুলো থেকে। যেমন ‘আরআরআর’, ‘কেজিএফ ২’, ইত্যাদি। ফলে এগুলো বাদ দিলে হিন্দি ছবির নিজের অংশ হচ্ছে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ। 


কিন্তু কেন এমন অবস্থা হচ্ছে বলিউডের? এ বিষয়ে তিনি জানান, বলিউডের কনটেন্টগুলো দর্শকদের পছন্দ হচ্ছে না। একই মত তোরণ আদর্শের। তিনি বলেন, ২০২২ সালটা সব থেকে খারাপ গেল। একটাও কনটেন্ট চলেনি। মহামারির পর দর্শকদের পছন্দে একটা আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মানুষ এখন বুঝে গিয়েছে তারা কোনটা হলে বসে দেখতে চান আর কোনটা ঘরে বসে ওটিটিতে। 

তবে এ বিষয়ের সঙ্গে কিন্তু মোটেই এক মত নন পরিচালক মিলাপ জাভেরি। তিনি বলেন, ২০২০-২১ বছর দুটো সব থেকে খারাপ গেছে। ওই দুই বছর কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। পেলেও চলেনি। সেখানে এ বছর একাধিক ছবি বক্স অফিসে ভালো করেছে। তিনি এই প্রসঙ্গে দ্য কাশ্মীর ফাইলস, ভুল ভুলাইয়া ২, ইত্যাদির নাম উল্লেখ করেন। 

এদিকে বলিউডের এ খারাপ দশার জন্য ওটিটিকে দায়ী করা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, যেহেতু বাড়ি বসে ছবি দেখতে পাচ্ছেন বলেই অনেকে হলে যেতে চাইছেন না। এই প্রসঙ্গে করণ বলেন, ওটিটি একটা ফ্যাক্টর বটে। কিন্তু আসল ফ্যাক্টর হলো কনটেন্ট। আগে প্রতি তিন মাস অন্তর ২০-২২টা করে ছবি মুক্তি পেত বড় পর্দায়। এখন ১৫-১৭টা ছবিও মুক্তি পায় না। আগে ৪-৫টি ছবিই ১০০ কোটির ব্যবসা করে ফেলত, এখন সেটা ২০-২২টা ছবি মিলিয়ে হচ্ছে। আগে অনেক ছোট বাজেটের ছবিও ভালো সাড়া পেয়েছে, সেখানে বড় বাজেটের ছবিগুলো অন্তত ৫০-১০০ কোটির ব্যবসা করত। কিন্তু এখন তো ছবিগুলো মহামারির আগে যা ব্যবসা করত সেটুকুও করতে পারছে না। 


শুধু তাই নয়, তারকাদের নিয়ে যে মাতামাতি, উন্মাদনা সেটাও কমে গিয়েছে। অক্ষয় কুমার, শাহীদ কাপুর, অজয় দেবগণদের যে খ্যাতি ছিল সেটা কোথাও যে এই এখন কমছে বা তার প্রভাব বক্স অফিসে দেখা যাচ্ছে না। তোরণ আদর্শের মতে, তারকারা তাদের ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলেছেন। তারকার নাম দেখে দর্শকরা এখন আর হলে আসে না। আর সেটা বরুণ ধাওয়ানের ভেড়িয়া, রণবীর সিংয়ের সার্কাস দেখেই বোঝা গিয়েছে। 

শুধু তাই নয়, দক্ষিণী ছবির রমরমা বাড়ছে। আরআরআর, কান্তারা, পন্নিয়িন সেলভান, ইত্যাদি ছবি মানুষের থেকে দারুণ সাড়া পেয়েছে। এ ধরনের স্ক্রিপ্ট দর্শকরা নিচ্ছে। একদিকে যখন বলিউড ডুবছে, তখন আরেকদিকে দক্ষিণী ছবিগুলো দর্শকদের থেকে ভালোবাসা পাচ্ছে। এই বিষয়ে তোরণ বলেন, তারা গোটা ভারতের দর্শকদের জন্য ছবি বানাচ্ছেন। তাদের ছবির গল্পের শিকড় ভারতের সঙ্গে জুড়ে, যা মানুষ রিলেট করতে পারছে। 

এসকেডি