ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম প্রশংসিত ও কালজয়ী সিনেমা ‘ছুটির ঘণ্টা’। এই সিনেমার সঙ্গে অগণিত দর্শকের স্বর্ণালী শৈশবের স্মৃতি মিশে আছে। নন্দিত সিনেমাটি নির্মাণ করেছিলেন আজিজুর রহমান। বরেণ্য এ নির্মাতা গত ১৪ মার্চ দিবাগত রাতে মারা গেছেন।

দেশ ছেড়ে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন আজিজুর রহমান। সেখানেই একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। গুণী এ নির্মাতার মৃত্যুতে শোকাহত সিনেমা অঙ্গনের অনেকেই। তবে একটু বিশেষভাবে শোকাচ্ছন্ন খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। কেননা তার সঙ্গে ফারুকীর কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

অনুভূতি প্রকাশ করে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ফারুকী লিখেছেন, “আজিজ ভাই মারা গেছেন, জানতে পারলাম বেশ পরে। আজিজ ভাই মানে ফিল্মমেকার আজিজুর রহমান। ছোট বেলায় তার পরিচালিত ‘ছুটির ঘন্টা’ দেখে বহু মাস স্কুলের টয়লেট ব্যবহার করার সাহস পাই নাই। পরে শুনেছি, উনি নাকি ঐ ছবি করার আইডিয়া পান একটা নিউজ রিপোর্ট থেকে। সেই যুগে বাংলাদেশে বসে নিউজ রিপোর্ট থেকে আইডিয়া নিয়ে প্রেম-পিরিতি ছাড়া মেইনস্ট্রিমের জন্য একটা ছবি করার হিকমত সহজ নহে।”

আজিজুর রহমানের সঙ্গে জড়ানো স্মৃতিচারণ করে ফারুকী লেখেন, “আমার সৌভাগ্য, বড় হয়ে নিয়তি আমাকে আজিজ ভাইয়ের কাছে নিয়ে আসে। একুশে টেলিভিশনের জন্য ‘কানামাছি’ নামে একটা টেলিফিল্ম বানাই। পুরা ছবিটা একটা জাহাজের ভিতর। জাহাজ ঢাকা থেকে সুন্দরবন যায়, আর দর্শক হিসেবে আমার যাই সুন্দর-মনের ভিতর। ঐ টেলিফিল্ম আমি শ্যুট করতে যাই কোনো স্ক্রিপ্ট ছাড়া। পুরা কাজটা ইমপ্রোভাইজেশনের মাধ্যমে করি। এবং ঐ কাজেই আমি প্রথম মেট্রোপলিটন কলোকুইয়াল ব্যবহার করি। তো সেই টেলিফিল্ম দেখে উনি আমাকে খুঁজে বের করেন। এবং আমি যা না, উনি সেই প্রশংসা করতে থাকেন আমাকে নিয়ে। উনি এই কাজটা করেন সেই যুগে, যখন এফডিসিকেন্দ্রিক একদল ফিল্মমেকার হাজারটা উপায় বের করতেছিলেন আমার চাকা পাংকচার করার জন্য। তো সেইখানে উনার কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসা আমাকে ইন্সপায়ার করছে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই।”

আজিজুর রহমান কানাডায় চলে যাওয়ার পর থেকে যোগাযোগ কিছুটা কমে যায় বলে জানান ফারুকী। বিষণ্ণ হৃদয়ের আকুতি প্রকাশ করে এ নির্মাতা লেখেন, ‘আজিজ ভাই, আমার আম্মা বলতেন মৃত মানুষ নাকি সব দেখতে পায়। জীবিতরা তো শুধু চোখের সামনে যা, তাই দেখতে পায়। মৃতরা দেখে কাছে, দূরে, বাইরে, ভেতরে সব। আপনি নিশ্চয়ই দেখছেন, আপনার জন্য কেন জানি কান্না পাচ্ছে। যদিও আপনার সাথে আমার এমন কোনো স্মৃতি নাই যে, কাঁদতে পারি। তবু কেন মন কাঁদে হায়?’

কেআই/আরআইজে