চার দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ার চিত্রনায়িকা রোজিনার। অভিনয় করেছেন প্রায় ৩০০ চলচ্চিত্রে। পেয়েছেন দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল ও পাকিস্তানের চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন। তবে সম্প্রতি একটি চমকপ্রদ তথ্য জানিয়েছেন তিনি; আর তা হলো, রেকর্ড সৃষ্টিকারী ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র নায়িকা হবার প্রস্তাব তিনিই পেয়েছিলেন সবার আগে।

মাছরাঙা টেলিভিশনে ঈদের বিশেষ ‘রাঙা সকাল’-এ উপস্থিত হয়ে রোজিনা স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘‘সামাজিক চলচ্চিত্রের পাশাপাশি আমি অসংখ্য ফোক-ফ্যান্টাসি বা পোশাকী চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। যেমন: রঙিন রূপবান, রাজনন্দিনী, রাজকন্যা, রাজসিংহাসন, রাজমহল, জিপসী সরদার, শাহী দরবার, আলীবাবা সিন্দাবাদ, সুলতানা ডাকু, শীর্ষ নাগ, নাগপূর্ণিমা, নাগমহল, রসের বাইদানী, চম্পা চামেলী, দ্বীপকন্যা, মৎস্যকুমারী, অরুণ বরুণ কিরণমালা ইত্যাদি।’’

রোজিনার ভাষ্য,  ‘‘সে সময় খেয়াল করেছিলাম, অনেকেই আমার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে বলেছিলেন, রোজিনা ফোক-ফ্যান্টাসির অভিনয় ছাড়া কিছুই জানে না। অথচ আমার ক্যারিয়ারে কসাই, জীবনধারা, দিনকাল, সুরুজ মিয়া, অবিচার, দোলনা, মানসী’র মত ভিন্নধারার অভিনয় সমৃদ্ধ চলচ্চিত্রও রয়েছে। তারপরও কেন আমাকে শুধুমাত্র ‘ফোক ফ্যান্টাসি’ ছবির নায়িকার ট্যাগ বহন করে চলতে হবে? জেদ চেপেছিল মনে, সমালোচকদের ভুল ধারণা বদলে দিতে হবে।’’

রোজিনা বলেন, ‘‘আমি প্রযোজক মতিউর রহমান পানুর পরিচালনা-প্রযোজনায় এর আগে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে আমি কাজ করেছিলাম। তার সহকারী তোজাম্মেল হক বকুল আমাকে ‘বুবু’ বলে সম্বোধন করতেন। একদিন তিনি তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র জন্য আমাকে প্রস্তাব করেন। নানাভাবে চেষ্টা করেন আমি যাতে ‘জোসনা’ হবার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। তবে সে সময় আমি নিজেকে বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি ফিরিয়ে দেয়ার পর নির্মাতারা নায়িকা অঞ্জু ঘোষ’কে নির্বাচন করেন। অবশ্য কাজ শুরু করার পরও পরিচালক বকুলের সাথে একবার আমার এফডিসিতে দেখা হয়। তখন তিনি আফসোস করে বলেছিলেন, ‘বুবু, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ যদি ফ্লপ হয়, তার জন্য দায়ী থাকবেন আপনি’। অবশ্য সেটি আর হয়নি।’’

অনুষ্ঠানের সেটে রোজিনা

‘বেদের মেয়ে জোসনা’ কতটা জনপ্রিয় হয়েছিল, সে কথা সবারই জানা। তবে এ নিয়ে আক্ষেপ নেই রোজিনার। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক সৃষ্টিরই একটি গন্তব্য থাকে। যার ভাগ্য যেখানে নির্ধারিত, সেটিই হবে। তাছাড়া আমার ফিরিয়ে দেয়া অনেক ছবি তো ব্যর্থও হয়েছে। সুতরাং আফসোসের কিছু নেই।’’

অনুষ্ঠানটিতে রোজিনা জানান, ‘জানোয়ার’ ছিল চলচ্চিত্রের ক্যামেরায় তার প্রথম কাজ। এতে অতিথি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সে সময় ১০ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন। ‘রাজমহল’ ছিল তার প্রথম সুপারহিট সিনেমা।এতে অভিনয়ের জন্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন।

শুরুর দিনগুলোর কথা স্মরণ করে রোজিনা বলেন, ‘ক্যারিয়ারের প্রথম তিন বছর বেবি ট্যাক্সিতে চেপেই শুটিং স্পটে যেতাম। টাকার পেছনে কখনো ছুটিনি। এমনকি শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আমি কখনো টাকা গুণতে পারি না।’

রুম্মান রশীদ খান ও খালেদা’র উপস্থাপনায়, জোবায়ের ইকবালের প্রযোজনায় ‘রাঙা সকাল’-এর বিশেষ এই পর্বটি প্রচারিত হবে ঈদের ২য় দিন, সকাল ৭ টায় মাছরাঙা টেলিভিশনে।

আরআইজে/কেআই