দিনের পর রাত আবার দিন এভাবেই প্রতিনিয়ত ঘুরছে সময় চাকা। চলতি বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরে পা রাখার আর কয়েক ঘণ্টা মাত্র বাকি। এ বছর পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন শোবিজের জনপ্রিয় কিছু মুখ। তারা তাদের কাজের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

কাওসার আহমেদ চৌধুরী

জ্যোতিষী হিসেবে দেশজুড়ে পরিচিত হলেও কাওসার আহমেদ চৌধুরী মূলত একজন গীতিকবি। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ৭৭ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তার লেখা শ্রোতাপ্রিয় কয়েকটি গান হলো- ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে’, ‘আমায় ডেকো না’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘রুপালি গিটার ফেলে’ ইত্যাদি।

আজিজুর রহমান

১৫ মার্চ কানাডার টরন্টোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা আজিজুর রহমান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। আজিজুর রহমান পরিচালিত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে আছে- ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘অশিক্ষিত’, ‘মাটির ঘর’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘সাম্পানওয়ালা’, ‘ডাক্তার বাড়ি’, ‘গরমিল’ ও ‘সমাধান’ ইত্যাদি।

কে জি মোস্তফা

গীতিকার ও সাংবাদিক কে জি মুস্তাফা ৮ মে মারা যান। ১৯৬০ সাল থেকে তার লেখা গান চলচ্চিত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। তার লেখা উল্লেখযোগ্য গান হলো- ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে’, ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’। খ্যাতিমান এই গীতিকার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগের ‘দেশবরেণ্য গীতিকার’ পদকে ভূষিত হয়েছেন।

আলম খান

চলতি বছরের ৮ জুলাই মারা গেছেন বাংলা গানের কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান। সর্বমোট ৬ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ৫ বার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক ও একবার শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে পেয়েছেন। তার সুরারোপিত উল্লেখযোগ্য গানগুলো হচ্ছে- ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘কি জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেব না তোমার তুলনা’, ‘জীবনের গল্প বাকি আছে অল্প’, ‘সাথীরে যেও না কখনো দূরে’, ‘কাল তো ছিলাম ভালো’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’ ইত্যাদি।

শর্মিলী আহমেদ

খ্যাতিমান অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ ৮ জুলাই মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। সিনেমা, মঞ্চ, টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। প্রায় ৪০০ টেলিভিশন নাটক ও প্রায় ১০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন শর্মিলী আহমেদ। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘মালঞ্চ’, ‘দম্পতি’, ‘আগুন’, ‘আবির্ভাব’, ‘পৌষ ফাগুনের পালা’, ‘মেহেরজান’, ‘বৃষ্টির পরে’, ‘আমাদের আনন্দ বাড়ি’ ইত্যাদি।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

৪ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন গীতিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। দীর্ঘ ছয় দশক ধরে বেতার, টেলিভিশন ও সিনেমায় অসংখ্য গান লিখেছেন তিনি। ৪১টি চলচ্চিত্র পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই গান লিখছেন বিটিভির জন্য। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় তার লেখা ৩টি গান স্থান পেয়েছে। তার লেখা উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে, ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘ইশারায় শীষ দিয়ে’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘চলে আমার সাইকেল হাওয়ার বেগে’ ইত্যাদি। এছাড়া তার লেখা কালজয়ী গানগুলো হলো- ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’।

মাসুম আজিজ

একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী, নাট্যকার মাসুম আজিজ ১৭ অক্টোবর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ‘ঘানি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। অভিনয়কলায় অবদানের জন্য একুশে পদক পেয়েছেন তিনি। প্রায় ৪ শতাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন মাসুম রেজা। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে আছে- ‘গহীনে শব্দ’, ‘এই তো প্রেম’, ‘গাড়িওয়ালা’।

আজিজুর রহমান বুলি

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাবেক সভাপতি, প্রযোজক এবং পরিচালক আজিজুর রহমান বুলি ২৩ অক্টোবর মারা গেছেন। তিনি ৫০ টিরও বেশি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন।

ওমর ফারুক বিশাল

তরুণ গীতিকার, সাংবাদিক ওমর ফারুক বিশাল ৭ নভেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তার লেখা জনপ্রিয় গানের মধ্যে আছে সাব্বির নাসিরের ‘আধা’, তাহসানের ‘স্বল্প কথার গল্প’ ও মিনারের ‘আলো নেই আলোতে’। এছাড়াও ভারতের সংগীতশিল্পী শ্রীকান্ত আচার্যের কণ্ঠে ‘তোমার ভালো মন্দে’ ও অনুপম রায়ের কণ্ঠে ‘পারছি তো খুব’ গান ২টি তিনি লিখেছিলেন।

কণ্ঠশিল্পী আকবর

কণ্ঠশিল্পী আকবর ১৩ নভেম্বর রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে কিশোর কুমারের ‘একদিন পাখি উড়ে’ গানটি গেয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। পরে প্রথম মৌলিক গান ‘তোমার হাতপাখার বাতাসে’ গেয়ে তিনি জনপ্রিয়তা পান।