আজ প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বেঁচে থাকলে আজকের দিনে বয়স ৭৫ পূর্ণ করতেন বরেণ্য এই অভিনেতা।

জীবদ্দশায় দিনটি কখনো বিশেষভাবে ‍উদযাপন করতেন না ফারুক। তাই মৃত্যুর পরও দিনটিতে কোনো বিশেষ আয়োজন রাখছে না তার পরিবার। কেবল চোখের জলে স্মৃতিতে খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্রিয় মানুষটিকে।

ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘মিয়া ভাই’ খ্যাত এই অভিনেতা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ ভক্ত। আগস্ট মাসে জন্মদিন হওয়ায় ঘটা করে দিনটি পালন করতেন না ফারুক। কারণ, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে শহীদ হয়েছেন। নিজের নেতার মৃত্যুর মাসে আনন্দ করার সাহস পেতেন না তিনি।

ফারুকের স্ত্রী ফারহানা পাঠান বলেন, ‘১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর থেকে কোনো দিন নিজের জন্মদিনে কেক কাটেনি ফারুক। আমাদের একসঙ্গে থাকার ত্রিশ বছরে কখনো কেক কাটতে দেখিনি তাকে।’

স্কুল জীবনেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় তার নামে ৩৭টি মামলা দায়ের হয়েছিল। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

ফারুকের শৈশব-কৈশোর কেটেছে পুরান ঢাকায়। স্বাধীনতার বছরে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন তিনি। এরপর ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ দুটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। 

১৯৭৫ সালে তার অভিনীত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ সিনেমা দুটি ব্যবসাসফল ও আলোচিত হয়। ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর সময় যত পেরিয়েছে পর্দায় নিজেকে গড়েছেন ভেঙেছেন, অভিনয়ে সমৃদ্ধ করেছেন ঢাকাই সিনেমাকে।

একে একে অভিনয় করেছেন ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘মাটির মায়া’, ‘নয়নমনি’, ‘সারেং বৌ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘নাগরদোলা’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘কথা দিলাম’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব’, ‘ছোট মা’, ‘এতিম’, ‘ঘরজামাই’, ‘মিয়া ভাই’র মতো অসংখ্য সিনেমায়। সবশেষ ২০০৮ সালে ‘ঘরের লক্ষ্মী’ সিনেমায় অভিনয় করেন ফারুক।

অভিনয়ের জন্য ১৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে মনোনীত হয়েছিলেন ফারুক। কিন্তু তার হাতে পুরস্কার উঠেছিল কেবল একবার। অবশ্য ২০১৬ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। অভিনয়ের বাইরে তিনি ঢাকা ১৭ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

চলতি বছরের ১৫ মে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আট বছর ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এই অভিনয়শিল্পী ও রাজনীতিবিদ। সর্বশেষ ২০২১ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে যান তিনি।

কেএইচটি