সদ্য ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পেয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘সামথিং লাইক এন অটোবায়োগ্রাফি’। প্রথমবারের মতো নির্মাণের পাশাপাশি অভিনয়ও করেছেন তিনি। যেখানে তার সঙ্গে দেখা মিলেছে নুসরাত ইমরোজ তিশার। 

ইতোমধ্যেই ওয়েব ফিল্মটি দেখার পর নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন একাধিক তারকা। যাদের মধ্যে রয়েছেন কিংবদন্তি অভিনেতা আফজাল হোসেন। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এই গুনী অভিনেতা জানিয়েছেন, ফারুকীকে অপছন্দ করার বহু চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি তিনি। 

আফজাল হোসেন লিখেছেন, একবার এক গ্রোসারি স্টোরে বউ যা যা দরকার কিনছে, আমি পেছনে পেছনে ট্রলি ঠেলে ঘুরছি। হঠাৎ এক ভদ্রমহিলা দ্রুত হেঁটে এসে ট্রলি আটকে দাঁড়ালেন। ফেঁটে পড়লেন রাগে! বলতে শুরু করলেন,  আপনারা পেয়েছেন কী? যা খুশি তাই করবেন আর সবাইকে তা মেনে নিতে হবে নাকি?  

বউকে দেখলাম দূরে। জোরে কথা বলা শুনে ঘুরে তাকিয়েছে। তার চোখ গোল হয়ে যায়। সে বিশ্বাস করাতে পারে না নিজের চোখ আর কানকে। তার স্বামীকে অপরিচিত এক ভদ্রমহিলা ধমকাচ্ছেন। 

এরপর ওই মহিলা চড় দেখিয়ে বললেন, ‘তাকে পেলে কষে একটা চড় লাগাতাম।’ এতক্ষণে বুঝতে পারলাম, তিনি আমাকে যা বলছেন, তা আসলে অন্য কারও উদ্দেশ্যে বলা, রাগ দেখানো। 

এমন আগেও হয়েছে, হয়ে থাকে। নিজে অভিনয় করি, একই মহলের মানুষ বিবেচনা করে অন্যের বিষয়ে কেউ যা বলতে চান, সামনে পেয়ে তা ঝেড়ে দেন। আরও অনেকের ক্ষেত্রেও এরকম নিশ্চয়ই হয়ে থাকে। ভদ্রমহিলা রাগ টাগ কমিয়ে পরে খোলাসাও করলেন, কার উদ্দেশ্যে বলছেন, কেন বলছেন।

সিনেমা হলে তখন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ব্যাচেলর চলছে। সে চলচ্চিত্র নিয়ে বহুজনের বহুরকমের কথায় শহর গরম হয়ে গিয়েছিল। ভাব দেখে মনে হওয়ার কথা, এ শহরের মানুষ ভালো ছাড়া মন্দ দেখতে, শুনতে অভ্যস্ত নয়- তাই ওরকম তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠা। ধরে নেওয়া যায়, অনভ্যস্ত মনকে ঝাঁকি মেরে নাড়িয়ে দেবার নানা দুষ্টুমি, খেয়াল মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মধ্যে রয়েছে।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে অপছন্দ করার বহু চেষ্টা করেও শেষমেষ সফল হতে পারিনি। কোনও মন্দে বিরক্ত হয়ে দেখি, মন্দের পাশাপাশি অনেক অনেক ভালো কিছুও কি তার কাছ থেকে পাওয়া হয়নি! অস্বীকার করা যাবে না, ফারুকী চলচ্চিত্রে নিজের একটা ধারা তৈরি করতে পেরেছে।

যে মানুষ অলৌকিক নয়, সাধু সন্ত নয়, দু একটা ধরার মতো ভুল তেমন মানুষের চরিত্রে থাকাটাই স্বাভাবিক। মন্দকে বড় করে দেখবে নাকি ভালোতে আনন্দিত, বিস্মিত হবে- মানুষের নিজ নিজ পছন্দ, ইচ্ছা।

হঠাৎ শোনা গেল ফারুকী অভিনয় করছে। শুনে ভ্রু কোঁচকানো যায়। এটাও শোনা গেল, নিজেদের জীবনের গল্পে অভিনয় করেছে সে আর তিশা। এই দুটো বিষয়ের মধ্যেই তো মন্দ, কত কিছু বলার সুযোগ মিলে যায়। অপছন্দ করে কত কথা সানন্দে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করা যায়।

আমারই মনে হয়েছে, ফারুকীর কাঁধে অভিনয়ের ভূত না চাপলেই ভালো ছিল। আবার তার লেডিস এ্যান্ড জেন্টেলম্যান চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সকল চরিত্রের অভিনয়ের ধরণ তার মাথার মধ্যে সাজানো গোছানো থাকে। সেই হিসাবে মনে হয়েছে, সামথিং লাইক এ্যান অটোবায়োগ্রাফীর চরিত্রে তাকে ভালো লাগতে পারে। 

শুধু ভালো নয়, সব মিলিয়ে অসাধারণ লেগেছে সদ্য দেখা সামথিং লাইক এ্যান অটোবায়োগ্রাফী। তাদের দুজনের এই গল্প, অসংখ্য মানুষের নিজেদের জীবনেরও গল্প। অনেকেরই মনে হবে, গল্পের সঙ্গে আমাদের বেশ মিল। পার্থক্য এই- আমরা এমন করে মূহুর্তগুলো বয়ান করতে পারি না, প্রকাশ করতে পারি না। 

একটা সাধারণ গল্প- উপস্থাপনার গুনে নিয়ে নিয়ত নতুন মাত্রা পায়। সুগন্ধি একটা রুমালের মতো ভাঁজে ভাঁজে গল্পটা খুলতে থাকে। গল্পটা বলার কায়দায় দর্শক কখনও হো হো করে হেসে ওঠে, কখনও প্রেমময়তার অদ্ভুত প্রকাশভঙ্গিতে বিমোহিত হয়- কখনও মনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে যায়, অস্থিরতা জাগে- কি হবে, কি হতে চলেছে তারপর! 

একটা পর্যায়ে নিজেও খুব ভাবনার মধ্যে পড়ে যাই, এই চমৎকার গল্পটা কিভাবে শেষ হবে? যেভাবে শেষ হলো- তা যার পর নেই সুন্দর। অতিশয় সংবেদনশীলতাপূর্ণ, মন কাঁপিয়ে দেয়া- দেখার পর ভাষা হারিয়ে ফেলতে হয়। 

সিনেমাটার প্রশংসা করে শেষ করা যাবে না। ফারুকীর অভিনয় প্রসঙ্গে বলতে হয়- ফারুকীকে নয়, গল্পের স্বামীকেই সর্বক্ষণ পর্দায় দেখা গেছে। তিশা সম্পূর্ণ বিলীণ তিথি চরিত্রে। বলতে দ্বিধা নেই, ও যে কত বড় মাপের অভিনয়শিল্পী- এতদিন পর এই প্রথম জানা হলো। একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছিল সে। ইরেশ যাকের অসাধারণ। যে অভিনেতা যে চরিত্রে হাজির হয়েছে, মনে হয়েছে সত্য ঘটনায় আসল চরিত্রগুলোকেই দেখছি। খুব অল্প সময়ের জন্য মায়ের চরিত্র পর্দায় থেকেছে কিন্তু মনে লেগে থাকে অতি নিয়ন্ত্রিত অভিনয় গুনে। ডলি জহুর অনবদ্য।

মিনিস্ট্রি অফ লাভ শিরোনামে চরকি একে একে অনেকগুলো প্রেমের গল্প নিবেদন করবে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর এই সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি সে পরিকল্পনার প্রথম চলচ্চিত্র। বাকিগুলো নিয়ে প্রবল প্রতীক্ষা রইলো। যদি প্রচলিতের বাইরে এমন এমন চলচ্চিত্র নির্মিত হতে থাকে, বদলে যাবে সব পুরাতন। নতুন ও বিশেষের জন্যেই মানুষ অধীর অপেক্ষায় থাকে। জীবন, ধ্যান ও ধারণা বদলে যায়।

এনএইচ