চিত্রনায়ক ওয়াসিমের ক্যারিয়ার শুরু সহকারী পরিচালক হিসেবে। সিনেমার নাম ‘ছন্দ হারিয়ে যায়’। এটির পরিচালক এসএম শফী। নির্মাতা অনেকটা জোড় করে তাকে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করতে বলেন। রাজিও হয়ে যান তিনি। তার নাম তখন মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ। 

‘ছন্দ হারিয়ে যায়’ সিনেমার সেই ছোট চরিত্রটিই ভাগ্য ঘুরিয়ে দেয় ওয়াসিমের। পরিচালকের খুব পছন্দ হয় তার অভিনয়। শফীর পরবর্তী সিনেমা ছিল ‘রাতের পর দিন’। সেখানে নায়কের প্রস্তাব পান তিনি। এরপরই তার নাম পাল্টে মেজবাহ থেকে হয়ে গেল ওয়াসিম। 

‘রাতের পর দিন’ সিনেমায় ওয়াসিমের বিপরীতে ছিলেন সেই সময়ের হার্টথ্রব নায়িকা ববিতা। রাজ্জাক ও ফারুকদের সঙ্গে দর্শক মাতাতে থাকেন এই বর্ষিয়ান অভিনেতা। যা দ্রুতই তাকে সুপারস্টার খ্যাতি এনে দেয়।

প্রথম সিনেমার ব্যাপক সফলতার পর আর থেমে থাকতে হয়নি ওয়াসিমকে। ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় তার ৩ টি সিনেমা। এরমধ্যে রয়েছে ‘ডাকু মনসুর’, ‘কে আসল কে নকল’ ও জিঘাংসা’। যেগুলোতে তার বিপরীতে ছিলেন নায়িকা শাবানা, সুচরিতা ও কবিতা। 

ওয়াসিমের ক্যারিয়ার বেশ ভালো গতিতে চলছিল। এরমধ্যে এসএম শফী তার সফলতাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে দেয়। তার নির্মিত ‘দ্য রেইন’ সিনেমায় অভিনয় করেন ওয়াসিম। যেখানে তার বিপরীতে ছিলেন আলভিয়া। 

‘দ্য রেইন’ মুক্তির পর ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। ৪৬টি দেশে প্রদর্শিত হয়েছিল সিনেমাটি। বলা হয়, ওয়াসিমের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় সফলতা এটি। এরপর থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে তার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। 

সত্তর দশকের রোমান্টিক হিরো হিসেবে বেশ জনপ্রিয় রাজ্জাক ও ফারুক। সেই সময় ফোক ফ্যান্টাসি ও অ্যাকশন ঘরানার সিনেমা দিয়ে মাতাচ্ছিলেন ওয়াসিম। তার বেশিরভাগ সিনেমা বেশ ব্যবসাসফল হয়েছে।

ফ্যান্টাসি বাংলা সিনেমার রাজকুমার বলা হতো ওয়াসিমকে। তিনি ছিলেন ঘোড়া চালানোয় পারদর্শী। তাই তার সিনেমায় বেশিরভাগ সময় থাকতো ঘোড়ায় চড়ার দৃশ্য।

তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ওয়াসিমের সিনেমার পথচলা থেমে যায় একুশ শতকের শুরুতেই। তার স্ত্রী হঠাৎ মারা যান ২০০০ সালে। এর কয়েক বছর পর তার মেয়ে বুশরা আহমেদ ১৪ বছর বয়সের মৃত্যুবরণ করেন। এর পর থেকে নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নেন তিনি।

ওয়াসিমের একমাত্র ছেলে দেওয়ান ফারদিন থাকেন যুক্তরাজ্যে। সন্তানের দেশে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আরও একা হয়ে যান এই নায়ক। অনেকদিন পর যখন গণমাধ্যমে খবরে তাকে পাওয়া গেল, তখন তিনি বেশ অসুস্থ। 

অসুস্থতার এক পর্যায়ে ওয়াসিমকে নেওয়া হাসপাতালে। কিন্তু ফেরা হলো না সেখান থেকে। অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন বাংলা সিনেমর এই রাজকুমার।

এমআরএম