জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রোজিনা। ১৯৭৬ সালে ‘জানোয়ার’ সিনেমা দিয়ে ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে অভিষেক। নায়িকা হিসেবে প্রথম সিনেমা ‘রাজমহল’। এরপর অগনিত ব্যবসাসফল সিনেমা মুক্তি পেয়েছে তার। দীর্ঘ ক্যারিয়ার পার করে এবার ‌‘ফিরে দেখা’ দিয়ে পরিচালক রোজিনার যাত্রা শুরু হলো। প্রথম সিনেমা নির্মাণ ও ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বললেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোস্তাফিজ মিঠু

কেমন আছেন?
আলহামদুল্লিাহ, ভালো আছি। শুটিংয়ের আগে প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ততা চলছে। এর ফাঁকে নানাবাড়ি যাচ্ছি এখন। গাড়িতে জ্যামে বসে আছি। তাই কিছুটা একঘেয়েমি লাগছে।

বাংলা সিনেমায় আপনার দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ার। এবার নির্মাতা তকমা যোগ হলো নামের সঙ্গে। পরিচালনায় আসার প্রসঙ্গ দিয়ে সাক্ষাৎকারটা শুরু করতে চাই। 
আমিতো পুরোদস্তর সিনেমার মানুষ। এতদিন অভিনয় করেছি। এখন ইচ্ছে হলো একটি সিনেমা পরিচালনা করি। যদিও এটি কঠিন  কাজ। তবে চেষ্টা করবো এতদিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভালো কিছু করার। মার্চ থেকে ‘ফিরে দেখা’র শুটিং শুরু করবো। 

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এদেশে অগণিত সিনেমা হয়েছে। আপনি কোন প্রেক্ষাপট তুলে ধরবেন?
সম্মুখ যুদ্ধ ছাড়াও ১৯৭১-এ ঘরে ঘরে কিন্তু যুদ্ধ চলছিল। প্রতিটি পরিবার একটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেছে সেই সময়। রাজবাড়ির গোয়ালন্দতে আমার বাড়ি। ছোটবেলায় যুদ্ধের সময় দেখেছি মিলিটারিদের হাত থেকে বাঁচার জন্য কীভাবে নিজেদের লুকিয়ে রাখতো পরিবারগুলো। আমাদের পরিবারেও এমনটা দেখেছি। নিজেরে দেখা সেই প্লট নিয়ে আমার সিনেমাটি। এখানে যুদ্ধের সময় একটা পরিবারের ঘটনা তুলে ধরা হবে। 

রোজিনা

এবার ইন্ডাস্ট্রির প্রসঙ্গে আসি। বাংলা সিনেমার স্বর্ণালী সময় আপনি পার করেছেন। এখনকার সিনেমা ও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা সেই জায়গা থেকে অনেকটা সরে এসেছে। এই সময়টা আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
এখনকার ইন্ডাস্ট্রি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। সিনেমা হলের খুব খারাপ অবস্থা। দেশের অনেক জেলায় কোনো সিনেমা হলই নেই। অথচ রাজাবাড়ির ‘চিত্রা’ হলে সিনেমা দেখে আমি স্বপ্ন দেখেছি কবরী-শাবানা হব। আর এখন সিনেমা হলের পরিবেশই ঠিক নেই। এই অবস্থাটা তো ঠিক করা প্রয়োজন। হলে দর্শকদের সিনেমা দেখার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শুধু তাই নয়, আমাদের সিনেমার দিকেও নজর দেওয়াটা সবার আগে দরকার। কারণ দর্শকরা গল্পে নতুনত্ব চায়। সময়ের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রি ও সিনেমায় যেই উন্নয়ন প্রয়োজন সেগুলো ঠিক করতে হবে। কারণ বিশ্ব বাজারে সিনেমার ব্যবসা এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এখন অনলাইনের যুগ। দর্শকরা ঘরে বসে যেকোনো দেশের সিনেমা দেখতে পারেন। আমাদেরও দর্শকদের কাছে সেই মানসম্পন্ন সিনেমা পৌঁছে দিতে হবে।

ইন্ডাস্ট্রিতে কিন্তু এখন পেশাদার প্রযোজকদেরও অভাব। অনেকে এক দুটি সিনেমার পর আর লগ্নি করতে চান না। এর কারণ কী শুধু সিনেমা হল বন্ধ হওয়া মনে করেন?
সিনেমা হল ব্যবসার সঙ্গে সার্বিকভাবে জড়িত। কিন্তু কারণ শুধু এটিই নয়। আমাদের পরিচালকদেরও সেই দায় নিতে হবে। একজন প্রযোজক আসেন লগ্নি করে সেখান থেকে মুনাফা তুলতে। কিন্তু সেটি যখন না হয় তারা পরের সিনোম করতে আগ্রহী হন না। আর প্রযোজকদের বাঁচিয়ে রাখার ইচ্ছাটা পরিচালকদের কম। তাদের চিন্তা কোনোভাবে সিনেমা নির্মাণ। একজন প্রযোজক পেলে তাকে কীভাবে চেপে ধরে নিজের পকেট ভারী করবেন সেই চিন্তা। একবারেই আমরা সব খেয়ে ফেলতে চাই। কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে রেখে আরও কয়েকটি সিনেমা আমরা করতে চাই না। সিনেমার ব্যবসা কিন্তু এই ইন্ডাস্ট্রিতে হয়েছে। এখনও সম্ভব। কিন্তু আমাদের সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। 

রোজিনা

চরিত্রনির্ভর সিনেমা নির্মাণের চর্চা এখানে দেখা যায় না। কলকাতার ঋতুপর্ণা, বলিউডের রানী মুখার্জি বা কাজলকে নিয়ে সিনেমাগুলো এখনও সুপারহিট হচ্ছে। অথচ শাবনূর বা মৌসুমীকে নিয়ে আমরা এমন পরিকল্পনা করি না। এর কারণ কী মনে করেন?
এমন সিনেমা কিন্তু আমাদের সময় হতো। সেই চর্চা অনেকদিন ধরে নেই। যারা সিনেমা নির্মাণ করেন তারা নায়ক-নায়িকা গল্পের বাক্স থেকে বের হতে পারছে না। এছাড়া এক্সপেরিমেন্টের সাহসও কেউ করি না। ইন্ডাস্ট্রির পরিকল্পনা সুদূর প্রসারি হতে হয়। সেই জায়গায় আমাদের ব্যর্থতা রয়েছে। 

ধন্যবাদ সময় দেওয়া জন্য-
আপনাকেও ধন্যবাদ। ‘ঢাকা পোস্ট’-এর জন্য শুভকামনা।