দুই দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ব্রিজের কাছ থেকে ঢাকাই সিনেমার নায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ মরদেহটি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়।

ঢাকা পোস্টকে তথ্যটি নিশ্চিত করেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজি রমজানুল হক। তিনি বলেন, ‘নায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর মরদেহ সোমবার সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন হযরতপুর ইউনিয়নের আলিপুর নামক স্থানে একটি ব্রিজের নিচে থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মরদহের গলায় একটি দাগও রয়েছে। মরদেহটি উদ্ধার করে আমরা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি। শিমু নিখোঁজ হওয়ার এ বিষয়ে কলাবাগান থানায় একটি জিডি হয়েছিল।’

শিমু হত্যার ঘটনায় এরইমধ্যে তার স্বামী নোবেল ও নোবেলের বন্ধু ফরহাদকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় একটি গাড়িও জব্দ করা হয়েছে।

হত্যার ঘটনার পর থেকে সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে কৌতূহল জন্মেছে নায়িকা শিমুকে নিয়ে। অনেকের মনেই প্রশ্ন কে এই চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজ থেকে ঠিক দুই যুগ আগে ১৯৯৮ সালে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে বরিশালের মেয়ে রাইমা ইসলাম শিমুর। তার প্রথম সিনেমা কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’। যেখানে তিনি অভিনয় করেন তখনকার জনপ্রিয় তারকা মান্না, মৌসুমী, ডিপজল প্রমুখের সঙ্গে।

এরপর ছয় বছরে একে একে অভিনয় করেছেন ২৩টিরও বেশি সিনেমায়। তবে সবশেষ তাকে দেখা গেছে ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জামাই শ্বশুর’ সিনেমায়। ফলে এই সময়ের দর্শকদের কাছে তিনি ততটা পরিচিত নন।

তবে গত কয়েক বছর ধরে শিমু নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অভিনয় করেছেন প্রায় ৫০টি নাটকে। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত নাটক ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’-এও অভিনয় করেছেন তিনি। পাশাপাশি প্রযোজক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। তার নিজের প্রোডাকশন হাউজ ছিল। মাঝে মধ্যে পরিচালনাও করতেন এই নায়িকা।

রহস্যজনকভাবে খুনের শিকার হওয়া এই নায়িকা বাংলাদেশের অনেক গুণী পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন-প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলাম, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, দেওয়ান নজরুল, এ জে রানা, শরিফুদ্দিন খান দ্বীপু,  ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম, স্বপন চৌধুরী, এনায়েত করিম, শবনম পারভীন।

তিনি অভিনয় করেছেন রিয়াজ, অমিত হাসান, বাপ্পারাজ, জাহিদ হাসান, মোশারফ করিম, শাকিব খানসহ অনেক গুণী ও জনপ্রিয় অভিনেতাদের বিপরীতে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি থেকে বাদ পড়া ১৮৪ জন সদস্যদের একজন ছিলেন শিমু। ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে তিনি ছিলেন বেশ সক্রিয়। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে শিমু রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার বাসায় থাকতেন।

হঠাৎ এই নায়িকার খুনের ঘটনায় তার সিনেমার বন্ধু ও স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চিত্র নায়ক ওমর সানি’সহ অনেকেই এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।

আরআইজে