বর্তমান স্থানে স্টেশনটি থাকলে নির্মাণাধীন ঢাকা মেট্রোরেলের স্থাপনার আড়ালে পড়ে যাবে

ঐতিহ্যবাহী কমলাপুর রেলস্টেশন ভাঙা হবে- গেল কয়েকমাস ধরেই আলোচনায় রয়েছে এমন একটি খবর। তবে স্টেশনটি ভাঙার বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

মেট্রোরেলের লাইন স্থাপন ও মাল্টিমোডাল হাবের জন্য রেলস্টেশন ভবনটি সরানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে এখনও চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ বিষয়ে শিগগিরই কোনো সিদ্ধান্ত নাও আসতে পারে বলে ইঙ্গিতও রয়েছে। অর্থাৎ ঐতিহ্যবাহী এ স্টেশনের ভাগ্য হয়তো ঝুলে থাকবে আরও বেশ কিছুদিন। 

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে একেবারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের চাপ সামাল দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।

 রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের যুক্তি- কমলাপুর স্টেশনের সামনে মেট্রোর স্টেশন নির্মিত হবে। এতে কমলাপুর স্টেশন আড়ালে পড়বে। ছবি : ঢাকা পোস্ট

ঢাকা উড়াল সড়ক, মেট্রোরেলের দুটো লাইন কমলাপুর স্টেশনকে কেন্দ্র করেই নির্মাণ করা হবে। রেলওয়ের হাইস্পিড ট্রেনের লাইন থাকবে সেখানে। কমলাপুর রেলস্টেশনে মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ করা হবে ভবিষ্যতে। এটি করা হবে বাণিজ্যিক কারণে। এছাড়া তার সঙ্গে যাত্রী পরিবহনের সুবিধার বিষয়টাও জড়িত। এ জন্য হোটেলসহ বাণিজ্যিক কেন্দ্র নির্মাণে হাব করবে রেল। এ কারণে বিদ্যমান রেলস্টেশন ভবন কিছুটা উত্তরে স্থানান্তর করার প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল কর্তৃপক্ষের। সব সেবা এক জায়গা থেকে পাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে এমনটি প্রাথমিকভাবে ভাবা হয়েছিল। 

কমলাপুর মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ করা হবে জাপানের অর্থায়নে। হাব নির্মাণের জন্য স্টেশনটি সরানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত  হয়েছিল। মেট্রোরেলের স্টেশনের অবস্থান কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে নির্মাণ করা হবে। তখন মনে করা হয়েছিল, এই হাবের সঙ্গে মেট্রোরেলেরও সম্পর্ক আছে।  তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলেছে- রেলস্টেশন ভবন ভাঙা ছাড়াই হাব নির্মাণ করা যাবে।

কমলাপুরের আগে দেশের প্রধান স্টেশন ছিল ফুলবাড়িয়ায়। ঢাকার উত্তর-দক্ষিণের যোগাযোগে বাধা ছিল ১৮৮৫ সালে নির্মিত ছোট্ট ওই স্টেশনটি। ১৯৫৮ সালে স্টেশনটি কমলাপুরে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দুই মার্কিন স্থপতি ড্যানিয়েল বার্নহ্যাম এবং বব বুই সিডনির বিখ্যাত অপেরা হাউস এবং গ্রাম-বাংলার কুঁড়েঘরের মিশেলে কমলাপুর স্টেশনের নকশা করেন। ১০ বছর পর ১৯৬৮ সালে চালু হয় কমলাপুর স্টেশন। শুধু ছাদ আর চারদিকে খোলামেলা- এ সাদাসিধে নকশাই কমলাপুরকে অনন্য করে তোলে।

প্রথমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। পরে তা কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ছবি : ঢাকা পোস্ট 

স্টেশন ভাঙার প্রস্তাব কেন এসেছে 
প্রথমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। পরে তা কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ঢাকার প্রথম এই মেট্রোরেল নির্মাণকাজ বর্তমানে চলমান। মেট্রোরেলের বর্তমান যে রুট তাতে এর শেষ স্টেশনটি পড়েছে কমলাপুর স্টেশনের ঠিক সামনে। আর এ বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় নতুন এক বিতর্ক। মেট্রোরেলের পথ (রুট) পরিবর্তিত হবে নাকি কমলাপুর স্টেশন সরানো হবে, তা নিয়ে নানামুখি আলোচনা ছিল বহুদিন ধরেই। এরসঙ্গে স্টেশন ঘিরে মাল্টিমোডাল হাব করার বিষয়টিও আছে। 

এখনও জানা যাচ্ছে, মেট্রোরেলের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) মনে করে তাদের প্রকল্পের কারণে কমলাপুর স্টেশন ভাঙার প্রয়োজন নেই। স্টেশন ভাঙার চিন্তা রেলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের যুক্তি হলো কমলাপুর স্টেশনের সামনে মেট্রোর স্টেশন নির্মিত হবে। এতে কমলাপুর স্টেশন আড়ালে পড়বে। 

পিএসডি/এনএফ