ঢাকার কেরানীগঞ্জের কদমতলীতে ২০১৪ সালে গড়ে ওঠে বিলাসী শপিং মল লায়ন শপার্স ওয়ার্ল্ড। এই শপিংমলে মোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে ১৭০টি। এর মধ্যে মাত্র ২২টি প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগে নিবন্ধিত। বাকি ১৪৮টি দোকান/প্রতিষ্ঠান এখনো ভ্যাট নিবন্ধন নেয়নি। যে ২২ প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন আছে তারাও নিয়মিত ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে না।

ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক গোপন জরিপ প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ভ্যাট গোয়েন্দার একজন উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি দল জরিপ কাজ পরিচালনা করে। গত বছরের নভেম্বরে ওই জরিপ কাজ পরিচালনা করা হয়।

এ বিষয়ে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, লায়ন শপার্স ওয়ার্ল্ডে মোট ১৭০টি ‘সক্রিয়’ দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ভ্যাট নিবন্ধিত দোকান মাত্র ২২টি। নিবন্ধনের হার মাত্র ১২.৯৪ শতাংশ। অর্থাৎ ৮৭ ভাগ দোকানই ভ্যাটের আওতার বাইরে আছে।

তিনি আরও বলেন, জরিপ কাজের সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভ্যাট নিবন্ধন সম্পর্কে অনাগ্রহ দেখতে পেয়েছি। অনেক প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণাও নেই। অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন না করার কারণ হিসেবে বলেছেন- ‘সময় খারাপ যাচ্ছে’।

মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির দাবি, সেখানকার ৯০ ভাগ দোকান ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়ার উপযুক্ত নয়।

এ বিষয়ে লায়ন শপার্স ওয়ার্ল্ড দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হারুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভ্যাট বিভাগ থেকে একটি টিম মার্কেটে এসেছিল। তারা একটি তালিকা করে নিয়ে গেছেন। এরপর অনেক দোকান নিজ উদ্যোগে নিবন্ধন নিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে সবাই ভ্যাট নিবন্ধন নেবে। তবে বাস্তবতা হলো, এখানকার অনেক প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আসার মতো নয়।

তিনি বলেন, আমাদের হিসাবে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ দোকান ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় পড়ে না। দোকানের চেহারা দেখলে মনে হবে সুসজ্জিত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখানে যে পরিমাণ ক্রেতা আসেন, তাতে দোকান ভাড়া ও অন্যান্য খরচ দিয়ে ব্যবসায় টিকে থাকাই কঠিন। শুরুতে ব্যবসা করতে আসা অনেক দোকান মালিক টিকতে না পেরে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। মানুষ এখানে কেনাকাটা করতে আসে না।

ভ্যাট গোয়েন্দার জরিপে যা পাওয়া যায়

গত ১০ নভেম্বর শপিং মলটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের বিশেষ টিম। তারা সেখানে জরিপ পরিচালনা করে।

জরিপ অনুযায়ী শপিংমলটির নিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বাটা, জয় সিনেম্যাক্স লিমিটেড, হাই ফ্যাশন সু, ফোন এন্ড এক্সচেঞ্জ, দিয়া ফ্যাশন গ্যালারি, কিটস টয় হাউজ, তান্দুরী কইটেন (চিকেন), গেইম বক্স, ফুড বক্স, কালারস কসমেটিকস, গ্যাসেটল্যাব, এএস মোবাইল জোন, হুজাইফা স্মার্টফোন, এআর মোবাইল পয়েন্ট, সুরাইয়া ফোন অ্যান্ড এক্সেসরিজ, নিউ মোবাইল গ্যালারি, স্পার্ক এক্স, মোবাইল প্যারাডাইস, স্মার্ট ফোন বাজ, লাইভ ওয়ার ও দ্বাদশ।  

নিবন্ধিত হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই নিয়মিত ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয় না। সাধারণত প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। 

ভ্যাট নিবন্ধনের বাইরে থাকা লায়ন শপার্স ওয়ার্ল্ড-এর প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- নুর কালেকশন, এমএস ফ্যাশন, জাজিস ম্যান, জিরো টু, তৈরি পোশাকের দোকান মিনি মার্ট কালেকশন, মিনি মার্ট, সামিয়া ফ্যাশন, আজুয়াত ফ্যাশন, কুয়াশা, ইজি প্লাস, সাদিয়া পাঞ্জাবি পয়েন্ট, ত্বকী কালেকশন, রাত্রী ফ্যাশন, পোষাক মেলা, রেদুয়ান ফ্যাশন, পি এল ফ্যাশন, রাবিয়া ফ্যাশন, নুর কালেকশন, বেবি ওয়ার্ল্ড, মিনহাজ ফ্যাশন, জিনিয়াস কালেকশন, রক গ্যালারি, মা বাবার দোয়া, একে স্টাইল, আল আমিন ফ্যাশন, এসএমএ ফ্যাশন ক্লাব, শেফালী ফ্যাশন, পাঞ্জাবি প্লাস, পাঞ্জাবি ফ্যাশন, পটুয়াখালী ফ্যাশন, ঢাকা বাজার, জেএস কালেকশন, জাজিস ম্যান ও জননী ফ্যাশন। রেস্টুরেন্ট ইতালিয়ানো ও মাতা আল আরাবি। জুতার দোকান সারজা, রুহানী সাজ অ্যান্ড ফেব্রিক্স, ঢাকা বস্ত্র বিতান, মুশফিকা পর্দা গ্যালারী, কার্পেট হাউজ, বিসমিল্লাহ কালেকশন, আব্দুল্লাহ বহু বিতান, মাইমুনা ব্যাগ হাউজ, মাহিন বহু বিতান, কসমেটিক্স দোকান, এফএস কসমেটিক্স, ছোয়াদ ব্যাগ হাউজ, ইন্ডিয়ান গ্যালারি, আই ফোকাস,মাজেদা ভ্যারাইটি, লাভিস ফ্যাশন, বিউটি সেন্টার বিডি, হ্যাশটেক বোরকা, নিউ মা শাড়ী বিতান, এবি ফ্যাশন, এসএস ফ্যাশন, চোখের পলক ভ্যারাইটিজ, আয়াত কসমেটিক্স, রাকিবা কসমেটিক্স, আলিহা কসমেটিক্স, কনফিডেন্স কসমেটিক্স, মায়ের দোয়া কসমেটিক্স, চায়না ব্যাগ হাউজ, বাবুল কসমেটিক্স, আলবিয়া ফ্যাশন, সুবর্ণা শাড়ী, ড্রেস পয়েন্ট, বিডি এনজেল ফ্যাশন, নাহার এমিটেশন, নিউ সাদিয়া কসমেটিক্স, শাহানা কসমেটিক্স, অনু সুজ, রায়হান বীর কালেকশন, নিউ টি টেক্স, শাইয়ান কালেকশন, গোল্ডেন গ্যালারি, মম অ্যান্ড বেবি শপ, বরিশাল কালেকশন, এ পয়েন্ট, তানহা সুজ, বেবি ফুট ওয়ার, সায়েম সুজ, সাওদা সুজ, জুবায়ের সুজ, মৌ ফ্যাশন, জিএমডি, কেয়া কসমেটিক্স, আলিফ ফ্যাশন, ইমরান সুজ ও অর্ক কালেকশন। ইহান বোরকা অ্যান্ড ভ্যারাইটিজ হাউস, দৃষ্টি অপটিক্যাল অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড, কসমেটিক্স দোকান, অর্পা কসমেটিক্স, সুবর্ণা কসমেটিক্স, মেহেদী গার্মেন্টস, ফাতেমা নূর কালেকশন, আওয়ার কালেকশন, ফারহান ফ্যাশন এন্ড টেইলার্স, পিড়ানহাট, আপন বোরকা হাউজ, মক্কা মদিনা ভ্যারাইটিজ কর্নার, সামিহা ভ্যারাইটিজ স্টোর, আল ওয়ালিদ, নবরুপা, জননী ভ্যারাইটিজ কালেকশনের ২টি দোকান, কানামাছি ভ্যারাইটিজ কর্ণার, মৌ ফ্যাশন, ষোল আনা ভ্যারাইটিজ কর্নার, তিশা শাড়ি ফ্যাশন, নিউ কর্নার বেবি ফ্যাশন, তৈরি পোশাকের দোকান, জিরোস পয়েন্ট, ডিজাইন প্লাস, এসপিএন পাঞ্জাবি কর্ণার, ইউনিক গার্মেন্টস, অয়ন গ্যালারি, এক্সপ্রেস ক্লোথিং স্টোর, পাঞ্জাবি পয়েন্ট, ব্লু মার্ট, হাসান নিউ কালেকশন, নিউ চয়েজ কালেকশন, মীম কালেকশন, রাবেয়া ফ্যাশন, ঢাকা ফ্যাশন, তাকওয়া, ডিভাইস নেস্ট, আলওয়াশি মোবাইল সার্ভিস, জিনবোট, শত দল টেক, বিসমিল্লাহ টেলিকম, টেক টাউন এক্সেসরিজ, আসমা ফ্যাশন, চোখের পলক ভ্যারাইটিজ, বেবি ক্লাব, চায়না ভ্যারাইটিজ, বিসমিল্লাহ কালেকশন ও চোখের পলক ক্রোকারিজ।

এছাড়া লায়ন শপার্স ওয়ার্ল্ড মার্কেটে একটি মাল্টিপ্লেক্স, একটি সুপরিসর জিমনেসিয়াম, একটি ইনডোর চিলড্রেন পার্ক এবং একটি ফুড কোর্ট আছে। এগুলোর কোনোটিই ভ্যাট নিবন্ধন করেনি।

প্রসঙ্গত, বার্ষিক টার্নওভার ৩০ লাখ টাকার নিচে হলে ওই প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হয় না। যদি টার্নওভার ৩০ লাখ ১ টাকা থেকে ৮০ লাখ টাকার মধ্যে হয়, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানকে ৩ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। বার্ষিক টার্নওভার ৮০ লাখ টাকার বেশি হলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য।

আরএম/এমজে