বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীরা রমজানে মাঠের রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে সাময়িক বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, পবিত্র এ মাসের প্রধান কর্মসূচি ‘ইফতার’ রাজনীতির পাশাপাশি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

একইসঙ্গে নির্বাচন ও আন্দোলন ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা আরও মজবুত করতে চায় বিরোধী দলগুলো। যাতে ঈদের পর আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া যায়।

ইফতার রাজনীতির পাশাপাশি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে বিরোধী দলগুলোর। একইসঙ্গে নির্বাচন ও আন্দোলন ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা আরও মজবুত করতে চায় তারা। যাতে ঈদের পর আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া যায়

এ বিষয়ে বিএনপির নেতারা বলছেন, রমজানের পর আবার মাঠের কর্মসূচিতে ফিরে যেতে হবে। তাই এ সময়ে ঘর গোছানোর পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারের রমজানেও কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করা হবে। সেখানে সর্বোচ্চ সংখ্যক কূটনীতিকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। এজন্য দলগতভাবে যেমন তাদের দাওয়াত দেওয়া হবে, ব্যক্তিগতভাবেও নিমন্ত্রণ জানানো হবে। এছাড়া কূটনৈতিক ইফতারসহ যে কোনো প্রোগ্রামে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।

রমজানে মাঠের কর্মসূচি থেকে সাময়িক বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীরা / ফাইল ছবি

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দলের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কূটনীতিকদের সঙ্গে আমাদের সংলাপ তো চলমান। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ সবসময়ই হচ্ছে। তবে, রমজানকে কেন্দ্র করে বিশেষ কিছু নেই।

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, কূটনীতিকদের সঙ্গে দলের সম্পর্ক এখন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় ভালো। এবারের রমজানে তাদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। যদিও প্রতি বছরে এমন আয়োজন থাকে। তারপরও এ বছর একটু ভিন্ন মাত্রা পাবে।

প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করে ওই নেতা আরও বলেন, যে দেশ আগে আমাদের ডাকে সাড়া দিত না, এখন তারাও দাওয়াত করে খাওয়ায়। এতে কী বোঝা যায়? আমরাও তাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করছি। আশা করি, আগামীতেও তারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে থাকবে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, রমজানে আপাতত ইফতার রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও দ্রব্যমূল্য বা অন্য কোনো ইস্যু সামনে চলে আসলে তখন কর্মসূচি দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে কর্মসূচির ধরন ও সময় কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হবে। কারণ, রোজা রেখে দীর্ঘসময় কর্মসূচি পালন করা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি মানুষের ভোগান্তি যেন না হয় তাও খেয়াল রাখতে হবে। এর বাইরেও পুরো রমজান মাস জেলার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার চিন্তা রয়েছে দলের হাইকমান্ডের।

আরও পড়ুন >> পরবর্তী ‘সাত্তারদের’ দিকে বিশেষ নজর বিএনপির 

ঢাকা মহানগর বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সাধারণত প্রতি রমজানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির পক্ষ থেকে বড় করে দুটি ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এবার এক্ষেত্রে ভিন্নতা আসছে। দুটির পরিবর্তে এবার রামজানজুড়ে রাজধানীতে ইফতার কর্মসূচি পালন করবে মহানগর বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে মহানগরের নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে ইফতারের বড় আয়োজন বাদ দিয়ে রাজধানীর প্রতিটি থানায় নেতাকর্মীদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করতে। যাতে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ে। নিষ্ক্রিয় নেতাদের সক্রিয় করা যায়।

রমজানে মাঠের কর্মসূচি না থাকলেও নির্বাচন ও আন্দোলন ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা আরও মজবুত করতে চায় বিরোধী দলগুলো / ফাইল ছবি

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে কখনও আমাদের থানায় থানায় ইফতারের আয়োজন হয়নি। এবার ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আয়োজনে ২৮ মার্চ থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন তিনটি করে ২৬টি থানায় ইফতারের আয়োজন করা হবে। একইভাবে দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগেও বিশেষ আয়োজন থাকছে।

আরও পড়ুন >> ঢাকায় বড় শোডাউন দিয়ে ‘ইফতার রাজনীতি’তে ঢুকবে বিএনপি

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে রাজনীতিবিদদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন না হলেও এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে তা করা হচ্ছে। আগামী ১১ রমজান রাজনীতিবিদের সম্মানে হতে যাওয়া ইফতারে সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের জোটের বাইরে থাকা দলগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হবে। যাতে যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নয়ন করা যায়। উদ্দেশ্য, তারা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে না নামলেও সরকারকে সঙ্গ না দেয়। এক্ষেত্রে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ সময় আমাদের মাঠের কর্মসূচি সাময়িক বন্ধ থাকবে। তবে, ইফতার মাহফিল, কর্মীসভা, সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান থাকবে। এছাড়া ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ১০ দিনের কর্মসূচি তো আছে।

‘এ সরকারের অধীনে কোনো দলই নির্বাচনে যেতে চায় না। কারণ, সবাই জানে এ সরকার কীভাবে দিনের ভোট রাতে করে। অনেক দল ইতোমধ্যে এ সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করেছে। আশা করি আগামীতে অন্যরাও রাস্তায় নামবে।’

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চও রমজানে রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবে / ফাইল ছবি

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চও রমজানে রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবে। জোটের নেতারা বলছেন, রমজানে ঘরোয়া ছাড়া তেমন কোনো কর্মসূচি নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই জোটগতভাবে ইফতার পার্টি, মতবিনিময়, সেমিনার ও কর্মীসভা করার চিন্তা রয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের। এছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের জন্য যৌথ ইশতেহার নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যদিকে, জোটের বাইরের দলগুলো নিজেদের মতো করে কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন >> ‘সরকার-শাসনব্যবস্থা’ বদলের যৌথ রূপরেখা দেবে বিএনপি ও সঙ্গীরা

এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাভাবিকভাবে রমজানে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয় না। তাই আমরা ইফতার মাহফিল, মতবিনিময় সভা ও সেমিনার— এসবের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াব।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজানে কর্মসূচি থেকে বিরত থাকলেও আমরা গণসংযোগ চালিয়ে যাব। এ সময় আন্দোলনের জন্য আমরা বিশেষ প্রস্তুতি নেব। নিজেদের মধ্যে এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি করব। আন্দোলনের যৌথ ইশতেহার নিয়ে কাজ করারও পরিকল্পনা আছে। 

এছাড়া সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলব, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াব। যাতে ঈদের পর কঠোর আন্দোলনে নামতে পারি— বলেন তিনি।

এএইচআর/