প্রতীকী ছবি

>> অনলাইনে এক বছরে পাঁচ থানায় ৮ হাজার জিডি
>> পাঁচ বছর আগে ঘোষণা আসে অনলাইন জিডি চালুর
>> মুজিববর্ষে সব থানায় অনলাইন জিডি চালুর চেষ্টা

পুলিশের সেবার মান বাড়াতে পাঁচ বছর আগে পুরোদমে চালু হওয়ার কথা ছিল অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি)। তবে দীর্ঘ সময়েও তা চালু হয়নি। বছরখানেক আগে পাঁচ থানায় পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলট প্রজেক্ট) শুরু হয় প্রক্রিয়াটি। চলমান মুজিববর্ষে দেশের সব থানায় অনলাইন জিডি চালুর জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।

পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, সারাদেশে চালুর আগে অনলাইন জিডির প্রক্রিয়াটি ডিএমপির সূত্রাপুর, কলাবাগান, ক্যান্টনমেন্ট, ময়মনসিংহের সদর ও ভালুকা থানায় পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এ পাঁচ থানার অনলাইন জিডিতে নজর রাখাসহ অনেক পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। সারাদেশে পুরোপুরি অনলাইন জিডি চালু সম্ভব হলেও তা সীমিত অভিযোগের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য থাকবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এটুআই প্রকল্পের অংশ হিসেবে পাঁচ বছর আগে অনলাইন জিডি চালুর ঘোষণা আসে। ২০১৬ সালে ডিএমপি জানিয়েছিল, তাৎক্ষণিকভাবে কেউ থানায় যেতে ব্যর্থ হলে অনলাইনের মাধ্যমে জিডি করতে পারবেন। এমনকি দেশের বাইরে থেকেও জিডি করা যাবে। এছাড়া সরাসরি পুলিশ সদর দপ্তরে ফ্যাক্স ও ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ জানানো যাবে। তবে যিনি জিডি করবেন তার পরিচয় নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনলাইন জিডিটি পুরো কার্যকর না হওয়ায় এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র হারানোর মতো সাধারণ অভিযোগই অনলাইন জিডিতে জানানো সম্ভব।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেনারেল ডায়েরি (জিডি) মানে সাধারণ বিবরণ। হুমকি, হারানো জিনিস উদ্ধারসহ নানা সমস্যায় নাগরিক পুলিশি সহযোগিতার আশায় নিকটস্থ থানায় জিডি করেন। তাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না থানায় গিয়ে কীভাবে জিডি করতে হয়। ২০১৬ সালে দেশের প্রতিটি থানায় সরবরাহ করা হয় জিডি বুক। এর মধ্যেই চলতে থাকে অনলাইন জিডি চালুর প্রক্রিয়াও।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘ডিজিটাল কেইস ডায়েরি’র ওপর পর্যালোচনা সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, শিগগিরই অনলাইনে জিডির ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা ও ময়মনসিংহ মেট্রোপলিটন এলাকায় এটি চালু হবে। মানুষ ঘরে বসে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে অনলাইনে জিডি করতে পারবেন। শুরুতে অনলাইনে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ জিডি করা যাবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সব ধরনের জিডির আওতায় আনা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের লজিস্টিক বিভাগের আইসিটি শাখা সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের নভেম্বরে ময়মনসিংহের সদর ও ভালুকা থানায় এবং ডিএমপির কলাবাগান, ক্যান্টনমেন্ট ও সূত্রাপুরে পাইলট প্রজেক্টের মাধ্যমে অনলাইন জিডি শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে অনলাইন জিডিগুলো মনিটরিং করা হয়।

১৩ মাসে ৮ হাজার ৪০ জিডি

অনলাইনে এ সেবা চালুর ১৩ মাসে সংশ্লিষ্ট পাঁচ থানায় জিডি হয়েছে আট হাজার ৪০টি। মোট জিডির ৯৯.৬ শতাংশই ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’। বাতিল জিডির সংখ্যা পাঁচ হাজার ৪৪৩টি। যা মোট জিডির ৬৭ শতাংশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিএমপির তিন থানায় অনলাইন জিডি হয়েছে ছয় হাজার ৬৫৯টি। কলাবাগান থানার দুই হাজার ৭৭৫টির মধ্যে বাতিল হয়েছে এক হাজার ৯১০টি, আমলযোগ্য জিডির সংখ্যা ৮৬৫টি।

অন্যদিকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় দুই হাজার ৯০১টি অনলাইন জিডির আবেদন পড়েছে। এগুলোর মধ্যে দুই হাজার ৩৪৯টি বাতিল এবং লিপিবদ্ধ হয়েছে ৫৫২টি। সূত্রাপুরে ৯৮৩টি অনলাইন জিডির মধ্যে লিপিবদ্ধ হয়েছে ৫৫২টি।

মুজিববর্ষেই সারাদেশে চালু হচ্ছে অনলাইন জিডি

সারাদেশে অনলাইন জিডি চালুর বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোভিড পরিস্থিতির কারণে অনলাইন জিডির প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেছে। তা না হলে এতদিনে পুরোদমে চালু হয়ে যেত। চলতি মুজিববর্ষের অগ্রগণ্য প্রজেক্ট হচ্ছে অনলাইন জিডি। কিছুদিনের মধ্যে আরও বেশ কয়েকটি থানায় পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইন জিডির প্রক্রিয়া শুরু হবে। ধীরে ধীরে মুজিববর্ষেই দেশের সব থানায় অনলাইন জিডি চালুর করা যায় কিনা, তা দেখা হবে।

অনলাইন জিডিতে যা লাগছে

বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে চলা অনলাইন জিডি সার্ভিসটি শুধুমাত্র নির্ধারিত পাঁচটি থানার জন্য প্রযোজ্য। এসব থানায় শুধুমাত্র হারানো ও প্রাপ্তিসংক্রান্ত বিষয়গুলো অনলাইনে জিডি করা যাচ্ছে। জিডির আবেদন করতে গ্রাহককে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, সচল মোবাইল নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিতে হবে।

আবেদনের নিয়মাবলী

মূলত তিন ধাপে করা যাচ্ছে অনলাইন জিডি। http://gd.police.gov.bd/ ঢুকলে অনলাইনে জিডির একটি পেজ আসবে। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, মোবাইল নম্বর ও জন্ম তারিখ লিখে সাবমিট করতে হবে। এরপর পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য এসএমএসের মাধ্যমে একটি কোড অভিযোগকারীর মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে।

দ্বিতীয় ধাপে নিজের জন্য নাকি অন্যের পক্ষে জিডি করা হবে, সেটি নির্বাচন করতে হবে। জিডির ধরন এবং কী হারিয়েছেন অথবা খুঁজে পেয়েছে কিনা, তা নির্বাচন করতে হবে। কোন জেলার কোন থানায় জিডি করতে চান তা নির্বাচন করতে হবে। ঘটনার সময় ও স্থান লিখে ‘পরবর্তী ধাপ’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।

সর্বশেষ অর্থাৎ তৃতীয় ধাপে আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা এবং ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা লিখতে হবে। জিডি সম্পর্কিত কোনো ডকুমেন্ট থাকলে সেগুলো সংযুক্ত করতে হবে এবং ই-মেইল অ্যাড্রেস লিখতে হবে। এরপর ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করলেই সম্পন্ন হবে অনলাইন জিডি। 

আবেদন সম্পন্ন হলে লগইন করে আবেদনকারী জিডির সর্বশেষ অবস্থাও জানতে পারবেন।

জেইউ/এমএইচএস/এমএআর/