ঋণপত্রে (এলসি) ঘোষণা ছিল আসবে ফল। কিন্তু আমদানি হয়েছে সিগারেট। তিন হাজার ডলারের (প্রায় দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা) এলসি খুলে আমদানি করা হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকার পণ্য। আরব আমিরাতে পাচার করা হয়েছে পুরো টাকা। একে একে চারবার এলসি খুলে পাঠানো হয়েছে সমুদয় টাকা। প্রতিবারই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২২ সালে পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় ফল আমদানি প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। এলসি জালিয়াতির কয়েকটি ঘটনা ধরা পড়লে কমে যায় ফল আমদানি।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি কন্টেইনারভর্তি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি সিগারেট জব্দ করে কাস্টমস। চীন থেকে কাপড় ও কাপড়ের সরঞ্জাম আনার ঘোষণা দিলেও আসে এক কোটি ১৩ লাখ শলাকা সিগারেট। এখানে শুল্ক-করসহ ২৭ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির চারটি চালান জব্দ করে কাস্টমস। এসব চালানে প্রায় ২৭০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা উদঘাটিত হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্য রপ্তানির তালিকায় তৈরি পোশাক খাত এক নম্বরে অবস্থিত। এ খাতের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে। গত ছয় বছরে ৩৩টি তৈরি পোশাক কারখানা ও বায়িং হাউস প্রায় ৮২১ কোটি টাকা পাচার করেছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এসব ঘটনা উন্মোচন করেছে। এর মধ্যে চলতি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া, ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, পানামাসহ প্রভৃতি দেশে ৩০০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। দেশের ১০টি প্রতিষ্ঠান এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত— বলছে অধিদপ্তর।

চলতি বছরের মার্চ মাসের তথ্য বলছে, গাজীপুরের পাঁচটি পোশাক কারখানা মাত্র তিন মাসে প্রায় ৮০ হাজার টন সোডিয়াম সালফেট এনহাইড্রোস এবং ৫০ হাজার টন সোডা অ্যাশ লাইট পাউডার আমদানি করে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। শুল্কমুক্ত এ পণ্যগুলো নিজেরা ব্যবহার না করে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য খোলাবাজারে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে ১৬৮ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর

গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়। টাকার অঙ্কে তা প্রায় ৮০ হাজার কোটি। শুধু মিস-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ বছরে কমপক্ষে এক হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ মিথ্যা ঘোষণা ও আমদানি-রপ্তানি বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শুল্ক আহরণের যাত্রা।

যার ধারাবাহিকতায় আমদানি বাড়লেও শুল্ক আহরণের হার কমেছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাস্টমস বিভাগ সবচেয়ে কম ২.৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা অর্জনে পিছিয়ে ছিল। শুধু তা-ই নয়, শুল্ক অব্যাহতির সংস্কৃতি, অটোমেশনের ঘাটতি, অপ্রতুল অবকাঠামো, জনবল সংকট ও কর ফাঁকির মানসিকতাও শুল্ক আহরণের হার কমিয়ে দিচ্ছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা যদি সরকারের হাতেই থাকে, তাহলে যতই উদ্যোগ নেওয়া হোক না কেন, নিজ স্বার্থ রক্ষায় এবং অযাচিত হস্তক্ষেপে মাঝপথেই সব থেমে যায়।’

অন্যদিকে, অর্থপাচার প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সাড়ে তিন বছরের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ করতে হয়েছে। যা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে যেমন বাংলাদেশকে আইএমএফের দ্বারস্থ হতে হতো না, তেমনি দেশে রিজার্ভ সংকটও তৈরি হতো না।

তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশে অনেক সময় অর্থপাচারের ঘটনা উন্মোচন হলেও জড়িত ব্যক্তিরা পরিচয় ও অবস্থানের বলে পার পেয়ে যান। বিত্তশালী, রাজনৈতিক আনুকূল্য বা অন্যভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। যার দৃষ্টান্ত অতি সম্প্রতি হতাশাজনকভাবে দেখতে হয়েছে।’

অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ক্রমশ পিছিয়ে কাস্টমস

প্রাচীন ভারত থেকে শুরু করে ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত সিংহভাগ রাজস্ব ভূমি-কর থেকে সংগৃহীত হতো। ১৮৩৯-৪০ অর্থবছরে মোট রাজস্বের শতকরা মাত্র পাঁচ ভাগ ছিল কাস্টমস ডিউটি। পরবর্তীতে শিল্পবিপ্লব ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিস্তারে আমদানি শুল্কের অংশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্বাধীনতোত্তর বাংলাদেশে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে আহরিত ১৬৬ কোটি টাকা রাজস্বের মধ্যে আমদানিপর্যায়ে ৯০ কোটি টাকা, স্থানীয়পর্যায়ে পরোক্ষ কর হিসাবে ৫৯ কোটি টাকা এবং প্রত্যক্ষ কর তথা আয়কর বাবদ আদায় হয়েছিল ১৬ কোটি টাকা।

তবে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার শর্ত মোতাবেক শুল্কহার হ্রাসের ফলে এ খাতে রাজস্ব কমতে থাকে। পরিমাণে বাড়লেও রাজস্ব আদায়ে কাস্টমসের অবদান শতাংশ হিসাবে ক্রমশ কমতে থাকে। যেমন- ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আহরণে কাস্টমসের অবদান ছিল ৫৪.৬৯ শতাংশ, ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে ৫৯.৭৬ শতাংশ, ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে ৫৫ শতাংশ এবং ২০০১-০২ অর্থবছরে ৫১.৮৯ শতাংশ। কিন্তু ২০১১-১২ অর্থবছরে তা কমে ৩২.৯৮ শতাংশ দাঁড়ায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও কমে ২৯.৬৫ শতাংশে দাঁড়ায়।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ / ফাইল ছবি

সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাস্টমস বিভাগের ২.৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। রাজস্ব আদায় এক লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা হলেও ঘাটতি ছিল প্রায় ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা।

শুল্ক অব্যাহতি লাখ কোটি টাকা, সুবিধা কার

দেশীয় শিল্পকে আত্মনির্ভরশীল ও প্রতিযোগিতার বাজারে টিকিয়ে রাখা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার প্রতি বছরই কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি দেয়। এনবিআরের সূত্র অনুযায়ী, দেশে যত টাকার পণ্য আমদানি হয় এর মধ্যে ৪৪ শতাংশের ওপর শুল্ক–কর আরোপ করা হয় না। এসব পণ্য ও সেবার মধ্যে খাদ্যপণ্য, শিল্পায়নে ভূমিকা রাখে এমন পণ্যই বেশি। এ ছাড়া কিছু সরকারি প্রকল্পের পণ্য আমদানিতে শুল্ক–কর অব্যাহতি দেওয়া হয়।

২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআর দেশের বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তাদের যথাক্রমে ৫২ হাজার কোটি ও ৬১ হাজার কোটি টাকার শুল্ক অব্যাহতি দিয়েছে। দুই বছরের হিসাব যোগ করলে যার পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে অব্যাহতির পরিমাণ বেড়েছে ১৮ শতাংশ। শুল্ক অব্যাহতির প্রধান খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি, ভোজ্যতেল, পোলট্রি, চাল, তৈরি পোশাক ইত্যাদি। এসব খাতে ভর্তুকি প্রদানের মূল কারণ সাধারণ ভোক্তার জীবনযাপনের কষ্ট উপশম করা। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো, কষ্টের উপশম হওয়া তো দূরের কথা দিনদিন তা আরও বেড়েছে। রাতারাতি মুনাফার পাহাড় গড়েছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী।

বিপরীতে সরকার প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে। জনসাধারণের মঙ্গল সাধনের নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদের যথেচ্ছ লুটপাট হচ্ছে বলে অভিযোগ বেশি। দ্রব্যমূল্য বা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমদানির নীতিসহ সব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। এগুলো করতে পারলে দ্রব্যমূল্য এমনিতেই কমে যাবে। অহেতুক শুল্ক অব্যাহতি দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। অথচ অসাধু সিন্ডিকেট ও কর্পোরেটদের সঙ্গে অদৃশ্য সম্পর্কে বাঁধা রাষ্ট্র সহসা মুক্ত হতে পারছে না বলে  মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

অটোমেশনের ঘাপলা

কর আদায়ের সহজ উপায় হলো অটোমেশন। শুল্ক বিভাগের এসাইকুডা (স্বয়ংক্রিয় তথ্য–উপাত্ত ব্যবস্থাপনা) চালুর মাধ্যম এনবিআর সেই পথে প্রথম যাত্রা শুরু করে। গত তিন দশকে এসাইকুডা আরও হালনাগাদ হয়েছে। এটির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অনলাইন সেবা দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও কাস্টমস হাউস, শুল্ক স্টেশনগুলোতে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া মসৃণ হয়নি। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে এক ধরনের সহায়তাকারী শ্রেণি গড়ে উঠেছে। তাই পাসওয়ার্ড চুরি করে পণ্য খালাসের ঘটনাও ঘটছে।

কাস্টমসের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ কাস্টমস কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ অগ্রসর হলেও দুর্বল অবকাঠামো, অপ্রতুল প্রশিক্ষিত জনবল, যুগোপযোগী যানবাহন ও সরঞ্জামের অভাব কাঙ্ক্ষিত অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের আকার বৃদ্ধি এবং রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও রাজস্ব প্রশাসন সংস্কারের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ক্রমাগত কমেছে। এসব চ্যালেঞ্জ উত্তরণে সরকারের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, লজিস্টিকস ও দক্ষ জনবল প্রয়োজন। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় অত্যন্ত কম খরচে রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা হিসেবে এনবিআর সীমিত সম্পদ নিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে।

অপ্রতুল অবকাঠামো

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ৮০ শতাংশের ওপরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। অথচ এ কাস্টম হাউস তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনে। এ ছাড়া, ঢাকার কমলাপুরের অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) অবস্থাও ভালো নয়। অধিকাংশ কাস্টম স্টেশনের অবকাঠামো নাজুক। উপযুক্ত অবকাঠামোর অভাবে ব্যবসায়ীদের সেবা প্রদান বিঘ্নিত হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে একদিকে বাণিজ্য সহজীকরণের বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা না থাকায় দেশের রাজস্ব ও নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।

গভীর সমুদ্রে সশস্ত্র প্রিভেন্টিভ টিমের টহল এবং চোরাচালান প্রতিরোধে বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অধীনে দুটি পুরাতন জাহাজ ব্যতীত কোনো টহল যান নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যথাযথ লজিস্টিক সাপোর্ট ও প্রশিক্ষণের অভাবে বাংলাদেশ কাস্টমস এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পড়ছে।

অবকাঠামো জনবল বৃদ্ধি কত দূর

মাঠপর্যায়ে আয়কর আহরণ নিশ্চিতে অফিসসহ ৪২ হাজার জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে সেই প্রস্তাব। আয়কর ও কাস্টমস বিভাগ থেকে দুটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে নতুন আয়কর অফিস, ভ্যাট কমিশনারেট ও কাস্টম হাউস গঠন-সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।

টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান / ফাইল ছবি

ভ্যাট কমিশনারেট ও কাস্টম হাউস গঠন-সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ১৯টি নতুন দপ্তর গঠন এবং এসবে ১৭ হাজার ৩১৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের প্রস্তাব অভ্যন্তরীণ সম্পদ মন্ত্রণালয় (আইআরডি) থেকে অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। কাস্টমসকে আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে নিজস্ব রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন, রেভিনিউ ফোর্স, অর্থপাচার রোধে মানি লন্ডারিং ও চোরাচালান প্রতিরোধ অধিদপ্তর এবং ইকোনমিক জোনে কমিশনারেট গঠন করতে চায় এনবিআর। একই সঙ্গে ভ্যাট আদায় বাড়াতে নতুন চারটি ভ্যাট কমিশনারেট গঠন এবং রপ্তানিমুখী শিল্পের স্বার্থে ঢাকা বন্ড কমিশনারেটকে দুই ভাগ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বর্তমানে দেশে ছয়টি কাস্টম হাউস আছে। এগুলো হলো- চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, ঢাকা কাস্টম হাউস, বেনাপোল কাস্টম হাউস, মোংলা কাস্টম হাউস, পানগাঁও কাস্টম হাউস ও কমলাপুর আইসিডি। এগুলোতে বর্তমানে দুই হাজার ৩৪৯  কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। নতুন করে আরও দুই হাজার ৩৩৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন চারটি কাস্টম হাউস গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- চট্টগ্রাম বে-কাস্টম হাউস, ভোমরা কাস্টম হাউস, পায়রা কাস্টম হাউস ও চট্টগ্রাম আইসিডি। এসব হাউসে এক হাজার ৬৩৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তাদের কাজের ধরন বদলেছে। রাজস্ব আদায়ের চেয়ে বর্ডার নিরাপদ রাখা এবং বাণিজ্য সহজীকরণে কাস্টমসকে কাজ করতে হচ্ছে। তাই অর্থপাচার রোধে মানি লন্ডারিং ও চোরাচালান প্রতিরোধ অধিদপ্তর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণের অংশ হিসেবে নিজস্ব রাসায়নিক ল্যাব গঠন এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলভিত্তিক কমিশনারেট গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এসব প্রস্তাব অনুমোদিত হলে একদিকে বন্দর থেকে ব্যবসায়ীরা দ্রুত পণ্য খালাস করতে পারবেন, অন্যদিকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা দ্রুত সেবা পাবেন।

আরএম/এমএআর