দেশের বিভিন্ন খাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে মূল ভূমিকা পালন করছে ইন্টারনেট সংযোগ। এর মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে প্রয়োজনের তাগিদে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ও শহর পর্যন্ত একীভূতকরণ করা সম্ভব হয়েছে। ফলে দিনদিন প্রযুক্তির নির্ভরতা যেমন বেড়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরতা এবং এর ব্যবহার। বলা চলে, অবাধ ইন্টারনেট প্রবাহ ছাড়া পুরো দেশের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা মুহূর্তেই থমকে যেতে পারে।

বাস্তবতা হলো, গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে মফস্বল এবং শহর পর্যন্ত দেশের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী এখন ইন্টারনেট-নির্ভর। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বছরজুড়ে মোবাইল, আইএসপি (ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থা) ও পিএসটিএন (পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক)-এর মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করেছেন প্রায় এক হাজার ৪১৭ মিলিয়ন মানুষ (১৪৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষ)। এর মধ্যে মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণকারী গ্রাহক সংখ্যা এক হাজার ২৮৩ মিলিয়ন (১২৮ কোটি ৩০ লাখ), আইএসপি ও পিএসটিএনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণকারী গ্রাহকের সংখ্যা ১৩৩ মিলিয়ন (১৩ কোটি ৩০ লাখ)।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু করে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১১ মাসে এ বিপুল সংখ্যক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন।

বছরজুড়ে মোবাইল, আইএসপি (ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থা) ও পিএসটিএন (পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক)-এর মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করেছেন প্রায় এক হাজার ৪১৭ মিলিয়ন মানুষ (১৪৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষ)। এর মধ্যে মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণকারী গ্রাহক সংখ্যা এক হাজার ২৮৩ মিলিয়ন (১২৮ কোটি ৩০ লাখ), আইএসপি ও পিএসটিএনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণকারী গ্রাহকের সংখ্যা ১৩৩ মিলিয়ন (১৩ কোটি ৩০ লাখ)

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে ১১২.২১ মিলিয়ন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১১৩.১৩ মিলিয়ন, মার্চ মাসে ১১৪.০৭ মিলিয়ন, এপ্রিল মাসে ১১৪.৪০ মিলিয়ন, মে মাসে ১১৫.৫৭ মিলিয়ন, জুন মাসে ১১৭.২৫ মিলিয়ন, জুলাই মাসে ১১৮.৭৯ মিলিয়ন, আগস্ট মাসে ১১৯.৭৯ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বর মাসে ১১৯.৭৭ মিলিয়ন, অক্টোবর মাসে ১১৯.৪১ মিলিয়ন এবং নভেম্বর মাসে ১১৮.৯৬ মিলিয়ন মানুষ মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন। সবমিলিয়ে এ সংখ্যা এক হাজার ২৮৩.৩৫ মিলিয়ন।

অপরদিকে, ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থা অর্থাৎ আইএসপি ও পিএসটিএনের মাধ্যমে জানুয়ারি মাসে ১১.৮৭ মিলিয়ন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১১.৮৭ মিলিয়ন, মার্চ মাসে ১২.০৫ মিলিয়ন, এপ্রিল মাসে ১২.০৫ মিলিয়ন, মে মাসে ১২.০৫ মিলিয়ন, জুন মাসে ১২.১৫ মিলিয়ন, জুলাই মাসে ১২.১৫ মিলিয়ন, আগস্ট মাসে ১২.১৫ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বর মাসে ১২.৪৯ মিলিয়ন, অক্টোবর মাসে ১২.৪৯ মিলিয়ন এবং নভেম্বর মাসে ১২.৪৯ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন। সবমিলিয়ে এ সংখ্যা ১৩৩.৮১ মিলিয়ন।

মোবাইল, আইএসপি ও পিএসটিএন— এ তিন মাধ্যমে জানুয়ারি মাসে ১২৪.০৮ মিলিয়ন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১২৫.০০ মিলিয়ন, মার্চ মাসে ১২৬.১২ মিলিয়ন, এপ্রিল মাসে ১২৬.৪৫ মিলিয়ন, মে মাসে ১২৭.৬২ মিলিয়ন, জুন মাসে ১২৯.৪০ মিলিয়ন, জুলাই মাসে ১৩০.৯৪ মিলিয়ন, আগস্ট মাসে ১৩১.৯৪ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩২.২৬ মিলিয়ন, অক্টোবর মাসে ১৩১.৮৯ মিলিয়ন এবং নভেম্বর ১৩১.৪৪ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন। সবমিলিয়ে এ সংখ্যা এক হাজার ৪১৭.১৪ মিলিয়ন।

এসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছর মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক ছিল আগস্ট মাসে। ১১৯.৭৯ মিলিয়ন (১১ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার) মানুষ এ মাসে (আগস্ট) মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন। সবচেয়ে কম গ্রাহক ছিল জানুয়ারি মাসে। ১১১.২১ মিলিয়ন (১১ কোটি ১২ লাখ ১০ হাজার) মানুষ এ মাসে (জানুয়ারি) মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন।

আইএসপি ও পিএসটিএনের ক্ষেত্রে অনেকটা কাছাকাছি ও সমান্তরাল অবস্থা বজায় ছিল বছরজুড়ে। সবচেয়ে কম গ্রাহক ছিল জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে। এ দুই মাসে ১১.৮৭ মিলিয়ন গ্রাহক সেবা নিয়েছেন। সর্বোচ্চ সেবা নিয়েছেন সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে। এ তিন মাসে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১২.৪৯ মিলিয়ন।

চলতি বছর মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক ছিল আগস্ট মাসে। ১১৯.৭৯ মিলিয়ন (১১ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার) মানুষ এ মাসে (আগস্ট) মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন। সবচেয়ে কম গ্রাহক ছিল জানুয়ারি মাসে। ১১১.২১ মিলিয়ন (১১ কোটি ১২ লাখ ১০ হাজার) মানুষ এ মাসে (জানুয়ারি) মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন

এসব পরিসংখ্যানের সঙ্গে গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহকদের সংখ্যা তুলনা করলে দেখা যায়, একই সময়ে (জানুয়ারি-নভেম্বর) ২০২২ সালে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা ছিল এক হাজাার ২৫৬ মিলিয়ন (১২৫ কোটি ৬০ লাখ)। যা চলতি বছরের তুলনায় প্রায় ২৬.৮৭ মিলিয়ন (২ কোটি ৬৮ লাখ ৭০ হাজার) কম।

আইএসপি ও পিএসটিএনে ২০২২ সালের এ সময়ে (জানুয়ারি-নভেম্বর) গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১২১ মিলিয়ন। যা চলতি বছরের তুলনায় ৭.৫২ মিলিয়ন কম।

তবে, ২০২২ সালের পুরো বছর ধরলে (১২ মাস) মোবাইলে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৩৬৯ মিলিয়ন। আইএসপি ও পিএসটিএনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৩৩ মিলিয়ন।

বিটিআরসির তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ১১১.৭৭ মিলিয়ন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১১২.৬৯ মিলিয়ন, মার্চ মাসে ১১৩.৯০ মিলিয়ন, এপ্রিল মাসে ১১৩.২১ মিলিয়ন, মে মাসে ১১৪.৫৩ মিলিয়ন, জুন মাসে ১১৫.০৭ মিলিয়ন, জুলাই মাসে ১১৬.৪১ মিলিয়ন, আগস্ট মাসে ১১৬.১২ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বর মাসে ১১৪.৭৪ মিলিয়ন, অক্টোবর মাসে ১১৪.৬০ মিলিয়ন, নভেম্বর মাসে ১১৩.৪৪ মিলিয়ন এবং ডিসেম্বর মাসে ১১২.৫৫ মিলিয়ন গ্রাহক মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। সবমিলিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ৫০২.২৩ মিলিয়ন।

অপরদিকে, ২০২২ সালে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থা অর্থাৎ আইএসপি ও পিএসটিএনের মাধ্যমে জানুয়ারি মাসে ১০.১০ মিলিয়ন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১০.১০ মিলিয়ন, মার্চ মাসে ১০.৯৯ মিলিয়ন, এপ্রিল মাসে ১০.৯৯ মিলিয়ন, মে মাসে ১০.৯৯ মিলিয়ন, জুন মাসে ১১.১৪ মিলিয়ন, জুলাই মাসে ১১.১৪ মিলিয়ন, আগস্ট মাসে ১১.১৪ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বর মাসে ১১.৫৮ মিলিয়ন, অক্টোবর মাসে ১১.৫৮ মিলিয়ন, নভেম্বর মাসে ১১.৫৮ মিলিয়ন এবং ডিসেম্বর মাসে ১১.৮৭ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। সবমিলিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৩.২ মিলিয়ন।

২০২২ সালে মোবাইল, আইএসপি ও পিএসটিএন— এ তিন মাধ্যমে জানুয়ারি মাসে ১২১.৮৭ মিলিয়ন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১২২.৭৯ মিলিয়ন, মার্চ মাসে ১২৪.৮৯ মিলিয়ন, এপ্রিল মাসে ১২৪.২০ মিলিয়ন, মে মাসে ১২৫.৫২ মিলিয়ন, জুন মাসে ১২৬.২১ মিলিয়ন, জুলাই মাসে ১২৭.৫৫ মিলিয়ন, আগস্ট মাসে ১২৭.২৬ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বর মাসে ১২৬.৩২ মিলিয়ন, অক্টোবর মাসে ১২৬.১৮ মিলিয়ন, নভেম্বর মাসে ১২৫.০২ মিলিয়ন এবং ডিসেম্বর মাসে ১২৪.৪২ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। সবমিলিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ৫০২.২৩ মিলিয়নে।

চলতি বছরের ১১ মাসে মোবাইল, আইএসপি ও পিএনটিএনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা গত বছরের ১২ মাসের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যাকে পেছনে ফেলেছে। যদিও এ বছর গ্রাহকপর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ধাক্কার প্রভাব সামাল দিতে হয়েছে

এ পরিসংখ্যান থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, চলতি বছরের ১১ মাসে মোবাইল, আইএসপি ও পিএনটিএনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা গত বছরের ১২ মাসের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যাকে পেছনে ফেলেছে। যদিও এ বছর গ্রাহকপর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ধাক্কার প্রভাব সামাল দিতে হয়েছে। চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর মহাখালীর খাজা টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের কারণে ঢাকার ইন্টারনেট সেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। অগ্নিকাণ্ডে টাওয়ারটিতে থাকা আন্তঃসংযোগ এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) অপারেটরদের সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেশ কয়েক দিন ইন্টারনেট ধীরগতি এবং কিছু জায়গায় নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায়নি।

গত ৩১ অক্টোবর এবং ২ নভেম্বর প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল আপগ্রেডেশন কাজের জন্য দুই দিনে প্রায় ২০ ঘণ্টা ইন্টারনেটের আংশিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।

সবশেষ গত ২৫ নভেম্বর প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি বকেয়া থাকার অভিযোগে দেশে ইন্টারনেট সেবা দানকারী ১৯টি কোম্পানির সংযোগ সীমিত করে দেয় বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি)। ফলে পুরো দেশে ইন্টারনেট সংযোগে ধীরগতির সমস্যা পোহাতে হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে বকেয়া পরিশোধ করার পর ধীরে ধীরে ব্যান্ডউইথ বাড়িয়ে ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক করা হয়।

আরএইচটি/এমএআর/