দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে চলছে জমজমাট প্রচারণা। ব্যস্ত সময় পার করছেন সংসদ সদস্য প্রার্থীরা। উঠান বৈঠক, মিছিল, গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে ভোটারদের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

আবার বিএনপির ভোট বর্জন, অসহযোগ আন্দোলনের ডাক এবং ইসলামি সমমনা কয়েকটি দলের নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণায় সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কিছুটা চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। সব ধরনের বাধা-বিপত্তি পেছনে ফেলে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে মনে করছেন সরকার দলীয় প্রার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার মাঝি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী (এলজিআরডি) মো. তাজুল ইসলাম আসন্ন নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা পোস্টের মুখোমুখি হয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক — মো. রাকিবুল হাসান তামিম।

ঢাকা পোস্ট : দরজায় কড়া নাড়ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

তাজুল ইসলাম :  যেখানে ৩৮টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে সে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক না বলার কোন কারণ নেই। আর কে বড় দল বা কে ছোট দল এটা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হবে। জনগণ নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমেই রাজনৈতিক দলের গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণ করবে। উনারা (বিএনপি) বড় দল বলে যেহেতু নিজেদের দাবি করেন তাহলে ইলেকশন করতে আসেন না কেন? এমন নয় যে, ইলেকশনে তারা না আসলে তাদের জন্য গোটা দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। এমন কোনো কথা নেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই নিয়ম অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন হবে।

তাছাড়া উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আইনের শাসন কায়েম রাখতে হবে। সংবিধানের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করা প্রতিটি নাগরিকের ঈমানী দায়িত্ব। আমি আমার নির্বাচনী এলাকাসহ যে সমস্ত এলাকায় গিয়েছি সেখানেই দেখেছি উৎসবমুখর পরিবেশ।

আমি তফসিল ঘোষণার আগেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় গিয়েছি। সেখানেও দেখেছি যে মানুষ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আমার এলাকাতে মানুষজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। মানুষের ভোটে যারাই বিজয়ী হবে তারাই সংসদে মানুষের পক্ষে কথা বলবে।

ঢাকা পোস্ট : বিএনপি নির্বাচন বর্জনের জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। একই সঙ্গে কিছু ইসলামী দলও নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে কী বলবেন?

তাজুল ইসলাম : কেউ যদি বলে যে, নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না তার কোনো প্রভাব মাঠে পড়বে না। কিন্তু এ ধরনের কথা বলাটাই অপরাধ। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক কেউ দিতেই পারে। তাদের ডাকে যদি মানুষ অংশগ্রহণ করে এবং তাদের কথা অনুযায়ী অসহযোগিতা করে দ্যাটস ফাইন।

কিন্তু তাদের কথা না শুনলে বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে, ট্রেনে ফেলে দিয়ে মানুষকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা কোনো সভ্য মানুষের বা সভ্য জাতির কাজ নয়। তারা যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করে তাহলে তারা এ ধরনের কাজ করা দূরে থাক বলতেও পারে না।

ঢাকা পোস্ট : কুমিল্লা ৯ আসনের ভোটাররা কেন আপনাকে আবার নির্বাচিত করবে?

তাজুল ইসলাম : আমি আগেও বিভিন্ন সময় মানুষের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি এবং পরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের স্ট্যান্ডিং কমিটিতেও দায়িত্ব পালন করেছি। সংসদ সদস্য হিসেবে আমার এলাকার এবং মন্ত্রী হিসেবে সারা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। একটি কথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি যে, আমার এলাকাতে যত রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা হয়েছে তার ৯৮ ভাগই আমার হাত ধরে হয়েছে।

এসব কারণে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ আমার ব্যাপারে আন্তরিক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমি এলাকায় সুশাসন কায়েম করেছি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি। একইসঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগসহ সবগুলো সংগঠনকে জন মানুষের কল্যাণমুখী সংগঠন হিসেবে আমি রূপান্তর ও পরিবর্তন করেছি।

মানুষ যেমন বিশ্বাস করে সারা বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে এবং মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাগব হয়েছে। তেমনি আমার এলাকার মানুষও অনেক উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে এবং শান্তিতে রয়েছে। সেজন্য স্বাভাবিকভাবে আমার প্রতি মানুষ আগ্রহী বলেই আমার মনে হচ্ছে।

ঢাকা পোস্ট : ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনার ক্ষেত্রে আপনার কী পরিকল্পনা রয়েছে?

তাজুল ইসলাম : আমার মনে হয় এখানকার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ভোটকেন্দ্রে যাবে। তবে আমাদের নেতাকর্মীরা সবাইকে ভোটে অংশ নিতে মনে করিয়ে দেবেন এবং  উৎসাহিত করবেন। কোথাও যদি ভোটারদের কোন সাপোর্ট দেওয়ার দরকার হয় সেটা তারা দেবেন। কাউকে জোরজবরদস্তি করতে হবে না বরং সবাই নিজের ইচ্ছায় ভোট কেন্দ্রে আসবে।

ঢাকা পোস্ট : নির্বাচন ঘিরে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আগে পরে আলোচিত হয়েছে। আসলেই যদি এ ধরনের কিছু হয় তাহলে কী হবে?

তাজুল ইসলাম : বাঙালি ভিক্ষুকের জাতি নয়। কারো কাছ থেকে ভিক্ষা করে এনে খায় না। আমাদের থেকে কেউ যদি কোন কিছু না কিনে তাহলে আমরাও তাদের কাছ থেকে কোন কিছু কিনব না। আমরা সারা পৃথিবী থেকেই তো প্রয়োজনে বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করি। কেউ আমাদের দয়া করে না। আমরা কারো দয়ার উপর নির্ভরশীল নয়।

বাংলাদেশ এখন আর ভিক্ষুকের জাতি না। এটা এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আত্মপ্রত্যয়শীল জাতি হিসেবে পরিণত হয়েছে। অতএব কে স্যাংশন দেবে আর কে কি করবে এটাকে আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি না। আর ভিসার ব্যাপারে তারা বলেছে যারা নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের ভিসা দেওয়া হবে না। এখন তাদের কথা তারা রাখুক। যারা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেছে তারা তাদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করুক। এর বাইরে আমাদের কিছু বলার নেই।

ঢাকা পোস্ট : আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।

তাজুল ইসলাম : আপনাকেও ধন্যবাদ এবং ঢাকা পোস্টের জন্য শুভকামনা।

আরএইচটি/এসকেডি