টেলিটকের ভেরিফাইড অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সম্প্রতি পোস্ট করা ‘মিনিট বান্ডেল’ অফারের একটি ফটোকার্ডের নিচে ইমন নামের এক টেলিটক সিমের গ্রাহক অভিযোগ করে লেখেন, ‘সিম আছে বাট টাওয়ার না থাকায় নেটওয়ার্ক পায় না। তাই টেলিটক সিম ব্যবহার করতে পারি না।’

সাদেক হোসাইন হৃদয় নামের আরেকজন কমেন্ট করেন, ‘আগে নেটওয়ার্ক ঠিক করেন।’

সজীব আহমেদ নামের আরেকজন অভিযোগ জানিয়ে লেখেন, ‘ঝিনাইদহ জেলা ও দায়রা জজ আদালত এলাকায় আদালতের বিল্ডিং ও আশপাশে অবস্থিত আইনজীবী সমিতির ভবন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় টেলিটকের ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। বিল্ডিংয়ের রুমের মধ্যে কল করার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। ঠিক মতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। কর্তৃপক্ষের নিকট নিবেদন জানাই, সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’

সজীব আহমেদ নামের আরেকজন অভিযোগ জানিয়ে লেখেন, ‘ঝিনাইদহ জেলা ও দায়রা জজ আদালত এলাকায় আদালতের বিল্ডিং ও আশপাশে অবস্থিত আইনজীবী সমিতির ভবন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় টেলিটকের ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। বিল্ডিংয়ের রুমের মধ্যে কল করার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। ঠিক মতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। কর্তৃপক্ষের নিকট নিবেদন জানাই, সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন
গত এক বছরের ব্যবধানে টেলিটক প্রায় তিন লাখ গ্রাহক হারিয়েছে/ সংগৃহীত

এমন শত শত গ্রাহক প্রতিনিয়ত টেলিটকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের বিভিন্ন পোস্টের কমেন্টে টেলিটকের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিয়ে তাদের বিভিন্ন অভিযোগ জানান। এসব অভিযোগের প্রতিটি কমেন্টের রিপ্লে দেওয়া হয় নিচের প্যাটার্নে—

প্রিয় গ্রাহক, আপনি কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন?

১. কল ড্রপ হচ্ছে?

২. বিদ্যুৎ চলে যাবার পর নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন না?

৩. কোন সময় থেকে নেটওয়ার্ক-এর সমস্যা পাচ্ছেন?

৪. ইমারজেন্সি কল লিখা আসে? সেটা কতক্ষণ থাকে?

৫. আপনি যে এলাকায় নেটওয়ার্ক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সেই এলাকার বিস্তারিত ঠিকানাসহ আপনার টেলিটক নম্বর এবং কন্টাক্ট নম্বর দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।

টেলিটকের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সাথেই থাকুন।

কেউ কেউ বেশ আগ্রহ নিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর দেন আবার কেউ দেন না। তবে, এ দুই শ্রেণির কেউই সমাধান পান না। কারও সঙ্গে এসব সমস্যা নিয়ে পরবর্তীতে যোগাযোগ করে সমাধান করা হয়েছে— এমনটি কোনো ভুক্তভোগী নিশ্চিত করতে পারেননি।

খোদ ঢাকাতেই টেলিটকের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেন অনেক গ্রাহক। মাসুদুর রহমান নামের এক গ্রাহক লেখেন, ঢাকার মেইন পয়েন্টে থেকে ১ জিবি নেট ব্যবহার করে শেষ করতে পারি না। কারণ, উনাদের (টেলিটক) নেট রুমের ভেতর ও বাইরে কোথাও আসে না, শুধু যায়।

টেলিটকের ইন্টারনেট ডাটা কিংবা ভয়েস কল নেটওয়ার্ক নিয়ে এমন অসংখ্য অভিযোগ অনেকটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না দিয়ে সব রোগের জন্য ‘প্যারাসিটামল ২ বেলা’ নীতির কারণে অনেক গ্রাহক টেলিটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন

এ অভিযোগের উত্তরে ওই একই কথা লিখে দায়িত্ব শেষ করেছে টেলিটক। অবশ্য, টেলিটকের ইন্টারনেট ডাটা কিংবা ভয়েস কল নেটওয়ার্ক নিয়ে এমন অসংখ্য অভিযোগ অনেকটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না দিয়ে সব রোগের জন্য ‘প্যারাসিটামল ২ বেলা’ নীতির কারণে অনেক গ্রাহক টেলিটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আবার সাশ্রয়ী দামে বিভিন্ন ভয়েস অফার ও ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহারের সুযোগ নিতে না পারায় অনেকের আফসোস-আক্ষেপেরও সীমা নেই— বলছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সাশ্রয়ী দামে বিভিন্ন ভয়েস অফার ও ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে টেলিটক। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না, অভিযোগ অনেকের / ছবি- সংগৃহীত

জানা যায়, ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মোবাইল ফোনের প্রচলন শুরু হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের পথচলায় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের যাত্রায় বাংলাদেশও এগিয়েছে বহু দূর। ফলে শহরাঞ্চল থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত এখন মোবাইল ফোনের জয়জয়কার। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশের প্রায় ১৯ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ বর্তমানে তারবিহীন নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত।

বাংলাদেশে এখন বাণিজ্যিকভাবে টেলিযোগাযোগ (ভয়েস, এসএমএস, ইন্টারনেট ডাটা) সেবা দিয়ে যাচ্ছে চারটি প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হচ্ছে- গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক ও টেলিটক। এর মধ্যে একমাত্র টেলিটক বাংলাদেশই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ‘রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি’-এর অধীনে নিবন্ধিত একটি পাবলিক কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ওই সময় থেকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের শত ভাগ মালিকানা এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নিয়ন্ত্রণে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর হিসেবে সেবা দিচ্ছে টেলিটক। দেশের মানুষ মোবাইল ভয়েস, এসএমএস, ইন্টারনেট ডেটাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সেবা টেলিটকের মাধ্যমে পাচ্ছেন।

তবে, রাষ্ট্রায়ত্ত ও পুরোনো প্রতিষ্ঠান হয়েও দেশে ব্যবসা করা অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা বিদেশি সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য অপারেটরদের সঙ্গে দীর্ঘদিনেও তাল মেলাতে পারেনি টেলিটক বাংলাদেশ। বছরের পর বছর অন্যান্য মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়েনি টেলিটকের।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর প্রকাশিত পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে টেলিটকের দৈন্যদশা। তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে দেশে টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৬.৫৬ মিলিয়ন (৬৫ লাখ ৬০ হাজার), যা ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে হয়েছে ৬.৭৩ মিলিয়ন (৬৭ লাখ ৩০ হাজার) এবং সবশেষ ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে দাঁড়িয়েছে ৬.৪৬ মিলিয়ন (৬৪ লাখ ৬০ হাজার)।

বিপরীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান  

রবির ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে দেশে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৫৩.৭২ মিলিয়ন (৫ কোটি ৩৭ লাখ), যা ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে হয়েছে ৫৪.৫৪ মিলিয়ন (৫ কোটি ৪৩ লাখ) এবং সবশেষ ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে দাঁড়িয়েছে ৫৮.৩৮ মিলিয়নে (৫ কোটি ৮৩ লাখ)। 

গ্রামীণফোনের ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে দেশে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৮৪.০৪ মিলিয়ন (৮ কোটি ৪০ লাখ), যা ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে হয়েছে ৮০.৩৪ মিলিয়ন (৮ কোটি ৩৪ লাখ) এবং সবশেষ ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে দাঁড়িয়েছে ৮২.১৪ মিলিয়নে (৮ কোটি ২০ লাখ)।...

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে টেলিটকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ / ছবি- সংগৃহীত

 

বাংলালিংকের ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে দেশে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৩৭.২১ মিলিয়ন (৩ কোটি ৭২ লাখ), যা ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে হয়েছে ৩৯.৪৬ মিলিয়ন (৩ কোটি ৯৪ লাখ) এবং সবশেষ ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে দাঁড়িয়েছে ৪৩.৩৮ মিলিয়নে (৪ কোটি ৩৩ লাখ)।

গ্রামীণফোনের ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে দেশে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৮৪.০৪ মিলিয়ন (৮ কোটি ৪০ লাখ), যা ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে হয়েছে ৮০.৩৪ মিলিয়ন (৮ কোটি ৩৪ লাখ) এবং সবশেষ ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে দাঁড়িয়েছে ৮২.১৪ মিলিয়নে (৮ কোটি ২০ লাখ)। 

অভিযোগ দিলেও পরবর্তীতে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে— এমন নজিরও স্থাপন করতে পারেনি টেলিটক / ছবি- সংগৃহীত

অর্থাৎ সব পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে অন্য গ্রাহকদের তুলনায় গ্রাহক সংখ্যায় পিছিয়ে রয়েছে দেশীয় অপারেটর প্রতিষ্ঠান টেলিটক বাংলাদেশ। বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও টেলিটক সে তুলনায় গ্রাহক টানতে পারেনি।

সবমিলিয়ে পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক সুবিধা না থাকা, ইন্টারনেট ডাটা ঠিক মতো কাজ না করা, পর্যাপ্ত রিচার্জ পয়েন্ট না থাকা এবং সারাদেশে থ্রি জি নেটওয়ার্ক নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েও কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকসেবা দিতে না পারার বিষয়গুলো টেলিটকের গ্রাহক তৈরি করতে না পারার বড় কারণ হিসেবে সামনে আসছে।

নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত অভিযোগই বেশি গ্রাহকদের

গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে টেলিটকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ‘মাত্র ৯৭ টাকায় ১০ জিবি মেয়াদ ৭ দিন’ অফারের পোস্ট করা হয়। সেখানে দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেন নেটওয়ার্ক জটিলতা নিয়ে। সোহেল মিয়া নামের একজন বলেন, চাঁদপুর জেলার উত্তর মতলব থানায় এখানে নেট খুবই সমস্যা। এ এলাকার নেট সমস্যার সমাধান করেন তাহলে গ্রাহকের সুবিধা হবে। একই সাথে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে ইন্টারনেট ডাটা ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সেখানে আরও অনেকে অভিযোগ করেন নেটওয়ার্ক জটিলতা নিয়ে। তারা বলছেন, বর্তমান সময়ে টেলিযোগাযোগ খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক এগিয়ে আছে। টেলিটকের নেটওয়ার্ক ইস্যুর কারণে বেশ আগ্রহ নিয়ে গ্রাহকরা টেলিটক সিম নিলেও পরে অধিকাংশ গ্রাহকই তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।

চাঁদপুরের বাসিন্দা রাসেল নামের এক টেলিটক সিমের গ্রাহক বলেন, সাশ্রয়ী দামের কারণে আমি টেলিটক অত্যন্ত পছন্দ করি। এ ছাড়া, এটি দেশীয় এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবেও সবার কাছে সমাদৃত। কিন্তু অধিকাংশ সময় নেটওয়ার্কের প্রবলেম থাকে। এটি সমাধান করা গেলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি করে টেলিটক ব্যবহারে আগ্রহী হবেন। এতে দেশের সম্পদ দেশেই থাকবে আর সরকারও রাজস্ব পাবে।

খোদ ঢাকাতেই টেলিটকের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেন অনেক গ্রাহক / ছবি- সংগৃহীত

যে উদ্দেশ্য নিয়ে চালু করা হয়েছিল টেলিটক

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড বলছে, দেশের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের টেলিযোগাযোগ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে টেলিটক সাশ্রয়ী মূল্যে বিভিন্ন টেলিকম পণ্য ও ডিজিটাল সেবা প্রদান করছে। রাষ্ট্রীয় মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর হিসেবে শুধু মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ না করে দেশের সকল প্রান্তের জনগণকে আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসতে টেলিটক দেশের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে যেমন- হাওর অঞ্চল, দ্বীপাঞ্চল, পার্বত্য ও উপকূলীয় অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ করে যাচ্ছে।

মূলত, বাংলাদেশ সরকার চারটি লক্ষ্য নিয়ে টেলিটক প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেগুলো হচ্ছে-

১. দেশের জনগণকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান করা।

২. প্রাইভেট ও পাবলিক সেক্টরের মধ্যে সুস্থ বাজার প্রতিযোগিতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করা।

৩. মোবাইল টেলিফোন নেটওয়ার্কের সুবিধাবঞ্চিত দেশের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে যেমন- হাওর অঞ্চল, দ্বীপাঞ্চল, পার্বত্য ও উপকূলীয় জনগণকে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান করা।

৪. সরকারের রাজস্ব আহরণের নতুন উৎস সৃষ্টি করা।

টেলিটক আরও বলছে, দ্রুত বর্ধনশীল মোবাইল টেলিযোগাযোগ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে টেলিটক নিয়মিত নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করে চলছে। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ইতোমধ্যে দেশের ৬৪টি জেলা, ৪০২টি উপজেলাসহ বেশির ভাগ হাইওয়ে টেলিটকের কভারেজের আওতায় এসেছে।

টেলিটক বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তার নম্বরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি

এ ছাড়া, দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম হাওর, দ্বীপাঞ্চল, উপকূলীয় ও পার্বত্য অঞ্চলে টেলিটকের নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং বিদ্যমান নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণের কাজ চলছে।

কিন্তু বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে প্রতিযোগিতার বাজারে এসব লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কিংবা মিশন-ভিশন কোনো কিছুই তাল মেলাতে পারছে না বেসরকারি অপারেটরগুলোর সাথে। নাজুক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটক।

গত ১৭ জানুয়ারি টেলিটক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় তিনি তাদের কঠোর বার্তা দেন / ছবি- সংগৃহীত

যা বলছেন দায়িত্বশীলরা

এসব বিষয়ে টেলিটক বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তার নম্বরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় টেলিটক বাংলাদেশের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক শিরিন আক্তারের সঙ্গে। একাধিকবার ফোন করলে তিনিও ফোন ধরেননি। সাড়া পাওয়া যায়নি খুদে বার্তা পাঠিয়েও।

সর্বশেষ টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের বোর্ড অব ডিরেক্টরস-এর পরিচালক ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিনাত আরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতেই অস্বীকৃতি জানান।

তবে, এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে— এমন আশ্বাস দিয়েছেন নতুন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি। শিগগিরই এসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

অবশ্য, গত বুধবার (১৭ জানুয়ারি) টেলিটক বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কঠোর বার্তা দেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘টেলিটকের জন্য যে ভালো, যার পারফর্ম্যান্স ভালো, তাকে আমরা উৎসাহ দেব, পুরস্কৃত করব। কোম্পানির জন্য যে ঝুঁকিপূর্ণ, যে ক্ষতিকর তাকে অবশ্যই আমরা শাস্তি দেব। সংশোধনের সুযোগ দেব না।’

‘দুর্নীতিমুক্ত, সৎ, স্বচ্ছ, ও জবাবদিহিতা— এ চার মূলনীতি অনুসরণ করে চলতে হবে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘টেলিটকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকেন, কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তাকে সরাসরি শাস্তি দেওয়া হবে। কোনো সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে না। আমি বিশ্বাস করি, টেলিটকে ভালো কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বেশি। অসৎ, অলস, দায়িত্বে অবহেলা করে— এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা হাতেগোনা। সেই অল্পসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য টেলিটক কোম্পানি বা দেশের কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

আরএইচটি/এমএআর/