>> দেশের টেকসই উন্নয়নে একগুচ্ছ পরিকল্পনা
>> খাতভিত্তিক সুষম বণ্টন পাচ্ছে না মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলো
>> জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নির্বাচনে প্রকল্প বাছাই কমিটি গঠন
>> প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে তিন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের
>> ৯ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরিতে পাঁচ উদ্যোগ

টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে মন্ত্রিসভাও গঠন করেছে ক্ষমতাসীনরা। নতুন মন্ত্রী ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যদের নিয়ে দীর্ঘ ৯ বছর পর কমিশন সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার। নতুন সরকারের আগামী পরিকল্পনা কেমন হবে, সে বিষয়েই আলোচনা করেছে পরিকল্পনা কমিশন। মূলত টেকসই উন্নয়নে পরিকল্পনা কমিশনের সভায় একগুচ্ছ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এইসব আলোচনার বিষয়ে কার্যবিবরণী হওয়ার পর বিস্তারিত জানাবেন বলে জানিয়েছেন নতুন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে দীর্ঘ ৯ বছর পরে পরিকল্পনা কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

পরিকল্পনা কমিশনের সভায় সুনির্দিষ্ট পাঁচটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। ক. সরকারি বিনিয়োগের গতিধারা পর্যালোচনা, খ. পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রক্ষেপণের সঙ্গে এডিপি বাস্তবায়নের বরাদ্দের অসামঞ্জস্যতা, গ. সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন প্রক্রিয়াকরণ, ঘ. সংশোধন সংক্রান্ত নির্দেশিকা পরিমার্জন বা সংশোধন ও ঙ. নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের অগ্রগতি এবং সেক্টর বা বিভাগভিত্তিক উল্লেখযোগ্য বিষয়াদি।

সরকারি বিনিয়োগের গতিধারা বাড়াতে যেসব আলোচনা হয়েছে

প্রধানমন্ত্রীকে কমিশন জানিয়েছে, গত ১৫ বছরে দেশজ সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার লক্ষ্যে সরকারি বিনিয়োগ ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সার্বিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সরকার কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অনুসরণ করছে। এর প্রতিফলন সরকারি বিনিয়োগেও দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের বাজেটে সরকারি বিনিয়োগ পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে।

এছাড়া, উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা মোকাবিলা করে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সরকারি বিনিয়োগের বর্তমান গতিধারা অব্যাহত রাখার বিষয়েও আলোচনা করেছে কমিশন।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যয়ে সরকারি অংশ ও বৈদেশিক ঋণ/অনুদান এর অনুপাত পর্যালোচনায় দেখা যায়, জিওবি খাতের ব্যয় এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান এর অনুপাত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৬০:৪০, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৫:৩৫ এ দাঁড়িয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের অংশ কম-বেশি একই পর্যায়ে রয়েছে। সহজ শর্তের ঋণ প্রাপ্তির সম্ভাবনা বজায় থাকা পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান দেশীয় উৎসের ঋণের চেয়ে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। ফলে সহজ শর্তের বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে বলেছে কমিশন।

এছাড়া এডিপিতে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের বরাদ্দ এবং প্রকৃত ব্যবহারের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে মূল বরাদ্দের ৬৪.১ শতাংশ ব্যবহার করা হয়েছিল। যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান ব্যবহারের হার ছিল ৭২.৪ শতাংশ। বরাদ্দ ও প্রকৃত ব্যবহারের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৮ শতাংশ পার্থক্য রয়েছে। বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান ব্যবহারে আরও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার ছিল ৯১.৮ শতাংশ। এর পরের অর্থবছরে (২০১৮-১৯) বাংলাদেশ সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৮ শতাংশ অর্জন হয়েছিল। টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের যথাযথ ব্যবহার সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই যেসব প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের সম্পৃক্ততা আছে, সেসব প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করার স্বার্থে বাস্তবায়ন অগ্রগতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পর্যালোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য-সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করার সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রক্ষেপণের সঙ্গে এডিপি বরাদ্দের অসামঞ্জস্যতা

কমিশন সভায় জানানো হয়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উন্নয়ন খাতে সেক্টরভিত্তিক বিনিয়োগের প্রক্ষেপণের সঙ্গে এডিপিতে বরাদ্দের তুলনা করে দেখা যায়, কয়েকটি খাতে প্রক্ষেপণের তুলনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, কয়েকটি খাতে প্রক্ষেপণের তুলনায় বরাদ্দের পরিমাণ অনেক বেশি। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ইতোমধ্যে সমাপ্ত বছরগুলোর প্রতিটির ক্ষেত্রে একই চিত্র দেখা যায়।

খাতভিত্তিক সুষম বণ্টন পাচ্ছে না মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো

কমিশন সভায় প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বার্ষিক প্রক্ষেপণের তুলনায় এডিপিতে (২০২৩-২৪) প্রকৃত বরাদ্দ যেসব খাতে অনেক কম। ক. স্বাস্থ্য খাতে ১১.১ শতাংশ প্রক্ষেপণের বিপরীতে এডিপিতে প্রকৃত বরাদ্দ ৬.১৬ শতাংশ; খ. কৃষি খাতে ১১.৫ শতাংশ প্রক্ষেপণের বিপরীতে এডিপিতে প্রকৃত বরাদ্দ ৪.০৭ শতাংশ; গ. শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ১৬.৫ শতাংশ প্রক্ষেপণের বিপরীতে এডিপিতে প্রকৃত বরাদ্দ ১৩.৩৮ শতাংশ; ঘ. স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১২.১ শতাংশ প্রক্ষেপণের বিপরীতে এডিপিতে প্রকৃত বরাদ্দ ৭.১৮ শতাংশ এবং সামাজিক সুরক্ষা ৩.৫ শতাংশ প্রক্ষেপণের বিপরীতে এডিপিতে প্রকৃত বরাদ্দ ১.২৬ শতাংশ।

এছাড়া, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বার্ষিক প্রক্ষেপণের তুলনায় এডিপিতে (২০২৩-২৪) প্রকৃত বরাদ্দ অনেক বেশি যেসব খাতে; ক.  বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১৪.৮ শতাংশ প্রক্ষেপণের বিপরীতে এডিপিতে প্রকৃত বরাদ্দ ১৬.৮৮ শতাংশ; খ. পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ১৭.৪ শতাংশ প্রক্ষেপণের বিপরীতে এডিপিতে প্রকৃত বরাদ্দ ২৮.৮৮ শতাংশ; গ. গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাদি খাতে ২.৩ শতাংশ প্রক্ষেপণের বিপরীতে এডিপিতে প্রকৃত বরাদ্দ ১০.২৮ শতাংশ; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ খাতে ০.৫ শতাংশ প্রক্ষেপণের বিপরীতে এডিপিতে প্রকৃত বরাদ্দ ৩.৪২ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রীকে কমিশন সভায় জানানো হয়, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত না থাকলে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন ব্যাহত হতে পারে। যেসব সেক্টরে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রক্ষেপণ এবং এডিপি বরাদ্দের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে, সেসব সেক্টরের আওতাধীন মন্ত্রণালয়কে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতি রেখে নতুন প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।

সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত নির্দেশিকা সংশোধন ও পরিমার্জন

সভায় পরিকল্পনা কমিশন জানায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি/ সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়/বিভাগ থেকে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সেক্টর/বিভাগে প্রেরণ করা হয়। সেক্টর/বিভাগ প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে প্রেরণ করে। কার্যক্রম বিভাগের সদস্যের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রোগ্রামিং কমিটির সভায় তা চূড়ান্ত বাছাই করে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। যা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীকে কমিশন জানায়, বিদ্যমান পদ্ধতিতে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তিতে শুধুমাত্র পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ সম্পৃক্ত থাকায় বিপুল সংখ্যক প্রকল্প থেকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাছাইয়ের কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা কমিশনের সকল সদস্যের সমন্বয়ে কার্যক্রম বিভাগের সদস্যের সভাপতিত্বে ‘প্রকল্প বাছাই কমিটি’ গঠন করা হলে সরকারের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতি রেখে প্রয়োজনীয় ও অধিকতর জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নির্বাচন করা সহজ হবে। এছাড়া, সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকার সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে (অনুচ্ছেদ ২১.৫ ও অন্যান্য) সংশোধন প্রয়োজন। একই সঙ্গে, ‘আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রোগ্রামিং কমিটি’ পুনর্গঠন করাসহ কার্যক্রম বিভাগ থেকে গত ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর জারিকৃত পরিপত্রের সংশ্লিষ্ট অংশে পরিমার্জন/সংশোধন করতে হবে।

প্রকল্প পরিচালক পুল গঠন

প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব, ব্যয় বৃদ্ধি পরিহার এবং উন্নয়ন প্রকল্প সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ অত্যাবশ্যক। বিদ্যমান পরিপত্রে ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে প্রকল্পে পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের নির্দেশনা রয়েছে এবং একই কর্মকর্তাকে একাধিক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ার জন্যও নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রকল্পে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৩টি বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

ক. সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের সঙ্গে পরামর্শক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অভিজ্ঞ, দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি ‘প্রকল্প পরিচালক পুল’ গঠন করা যেতে পারে। একজন কর্মকর্তাকে একাধিক প্রকল্পে নিয়োগ না করার নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণের অনুশাসন দেওয়া যেতে পারে। খ. মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব প্রকল্প ব্যতীত মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান না করার নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। গ. এই প্রস্তাবগুলো বিবেচিত হলে উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগ থেকে গত ২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জারিকৃত নিয়মাবলী [পরিপত্রের অনুচ্ছেদ ২১.২৭, সংযোজনী উ (পৃষ্ঠা ২৪৯-২৫২)] সংশোধন করা প্রয়োজন হবে।

প্রকল্পের চতুর্থ ও তদূর্ধ্ববার মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষমতা চান পরিকল্পনামন্ত্রী

সভায় জানানো হয়, ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে বিনিয়োগ প্রকল্পের মেয়াদ চতুর্থ ও তদূর্ধ্ব বার বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য বিদ্যমান পরিপত্র অনুযায়ী একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়। প্রক্রিয়াকরণের সুবিধার্থে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে চতুর্থ ও তদূর্ধ্ববার মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ে অনুমোদিত হতে পারে। সে মোতাবেক পরিপত্রের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ (অনুচ্ছেদ ৫.২.৭) সংশোধন করা যেতে পারে।

নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের অগ্রগতি

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ জুলাই ২০২৫ থেকে জুন ২০৩০ মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রারম্ভিক কাজ শুরু করেছে। ক. নবম পরিকল্পনার সামষ্টিক কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খ. সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪ এর প্রতিফলন ঘটিয়ে এবং উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া ধারণাপত্র প্রণয়ন করা হচ্ছে।

গ. পূর্ব পরিকল্পনাসমূহের ধারাবাহিকতায় ৯ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সার্বিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার লক্ষ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের ‘অর্থনীতিবিদ প্যানেল’ গঠন করা হয়েছে। ঘ. নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খাত-উপধাতভিত্তিক ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি প্রণয়নের জন্য জুলাই ২০২৪ থেকে সকল মন্ত্রণালয়-বিভাগের তথ্য গ্রহণের কাজ শুরু হবে। ঙ. সামষ্টিক কাঠামো, ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি, মন্ত্রণালয়-বিভাগের ইনপুট, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি মূল্যায়ন এবং অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে মার্চ ২০২৫ এর মধ্যে ৯ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্পন্ন করা হবে।

সেক্টর/বিভাগ ভিত্তিক উল্লেখযোগ্য যেসব বিষয়াদি বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়

উন্নয়ন প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ ও অনুমোদনের বিষয়টি সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ ও অনুমোদন কার্যক্রমকে অটোমেশনের আওতায় আনার লক্ষ্যে পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ৯টি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে এবং এ সব সফটওয়্যারের মধ্যে ইন্টিগ্রেশনের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি মন্ত্রণালয় অনলাইনে পরিকল্পনা কমিশনে ডিপিপি প্রেরণ করেছে। আশা করা যাচ্ছে, ডিপিপি প্রণয়ন ও অনুমোদন প্রক্রিয়া অনলাইনভিত্তিক করার ফলে এক্ষেত্রে অযথা সময়ক্ষেপণ, অর্থের অপচয় রোধ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এছাড়া, অনুমোদিত প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ, বৈদেশিক অর্থায়ন, অর্থ ছাড়, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় পরিকল্পনা কমিশনের পিপিএস সফটওয়্যার, অর্থ বিভাগের আইবিএএস++ সফটওয়্যার, আইএমইডির ই-পিএমআইএস সফটওয়্যার এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এফএএমএস সফটওয়্যারের সঙ্গে অনলাইনভিত্তিক নিবিড় যোগাযোগের লক্ষ্যে ইন্টিগ্রেশন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন অনলাইন ভিত্তিক অর্থাৎ সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। যা সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তনে সহায়ক হবে।

সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকায় (পরিপত্র) (গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেসিলেন্ট ডেভেলপমেন্ট, জিসিআরডি) তথা ‘সবুজ ও জলবায়ু সহিষ্ণু উন্নয়ন’ বিষয় অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সভায়।

সভায় জানানো হয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় সরকারি বিনিয়োগকে অধিকতর টেকসই করার স্বার্থে উন্নয়ন প্রকল্প শনাক্তকরণ, প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ‘সবুজ ও জলবায়ু সহিষ্ণু উন্নয়ন’ (গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেসিলেন্ট ডেভেলপমেন্ট, জিসিআরডি) নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থা থেকে প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলাকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ‘সবুজ ও জলবায়ু সহিষ্ণু উন্নয়নকে’ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) প্রতিফলনের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে জিসিআরডি নীতিমালাটি যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

এসআর/এসকেডি