রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে

এখন পর্যন্ত করোনা নেগেটিভ হননি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত একজন রোগীকে চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে কি না; অনুমতি দিলেও সেই দেশের সরকার তাকে প্রবেশের অনুমতি দেবে কি না— এসব প্রশ্ন চলে আসে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উভয় দেশের সরকার অনুমতি দিলেও বিদেশি কোনো হাসপাতাল তাকে ভর্তি নেবে কি না— এ বিষয়টিও চলে আসে। এরপরও কিছু বিষয় থেকে যায়। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের সব দেশই বিশেষ কিছু ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, বাইরে থেকে কেউ এলে তার জন্য কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়া হলে কতদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকা লাগবে এবং কোয়ারেন্টাইনের কত দিন পর তার চিকিৎসা শুরু করা যাবে— সেই প্রশ্নও সামনে আসে।

এমন পরিস্থিতিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়া সম্ভব কি না, সম্ভব হলেও সেটি কতটুকু নিরাপদ— তা ভাবিয়ে তুলছে পরিবার ও বিএনপির নীতিনির্ধারকদের।

করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন কোনো রোগীকে অন্যকোনো দেশে নিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রেখে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় দেশেই চিকিৎসা দেওয়া উত্তম। তবে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কোয়ারেন্টাইন না দিয়ে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তির মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে পারলে তাকে বিদেশে নেওয়া উচিত

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির নেতারা বলছেন, বর্তমানে তার যে শারীরিক অবস্থা তাতে কোনোভাবেই চিকিৎসায় বিরতি দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন কোনো রোগীকে অন্যকোনো দেশে নিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রেখে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় দেশেই চিকিৎসা দেওয়া উত্তম। তবে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কোয়ারেন্টাইন না দিয়ে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তির মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে পারলে তাকে বিদেশে নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে উভয় দেশের সরকারের অনুমতি লাগবে। আবার এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কত সময় লাগবে সেটাও দেখার বিষয়।

রাজপথের আন্দোলনে একসময় সরাসরি নেতৃত্ব দিতেন খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের কাছে কোনো আবেদন করা হয়েছে কি না— জানতে চাইলে তার বোন সেলিমা ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’ যদিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে দল বা পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কোনো আবেদন করা হয়নি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার ভয়াবহ এ পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্বের সব দেশই কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করেছে। কিছুদিন আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য যান। সেখানে গিয়ে প্রথমে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয় তাকে। পরবর্তী সাতদিন চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফেরেন। কিন্তু এটা তো খালেদা জিয়ার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, একজন সিসিইউ রোগীকে তো আর কোয়ারেন্টাইনে রাখা যাবে না। তাকে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে। সেই ব্যবস্থা করতে না পারলে বিদেশে নিয়ে লাভ কী?

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত বিশ্বস্ত একটি সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত করোনা টেস্টে খালেদা জিয়ার রিপোর্ট নেগেটিভ আসেনি। তিনি এখনো করোনা পজিটিভ। সুতরাং কোনো পজিটিভ রোগীকে নিশ্চয়ই কোনো দেশ ভ্রমণ বা চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অনুমতি দেবে না। তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি তথ্য বলছে, করোনায় আক্রান্তের ১৪ দিন পর ওই ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য কোনো ব্যক্তির সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়া আক্রান্তের পর প্রায় ২৫ দিন পার হয়েছে। সেই বিবেচনায় এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কোনো দেশ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রবেশের অনুমতি দিলেও দিতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের অনুমতি পেলেও খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত দুটি বাধা রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, তিনি এখনো করোনায় আক্রান্ত। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, বিদেশে নেওয়ার পর কোয়ারেন্টাইন মানা। বিষয় দুটি সমাধানের পর সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে কীভাবে তাকে নেওয়া যাবে, সেই প্রশ্ন আসতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এখন ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা খরচ করলে সহজে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ম্যানেজ করা যায়। এছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে কে কে যাবেন, তাদের ভিসার প্রক্রিয়া কেমন হবে—সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কোন প্রক্রিয়ায় ম্যাডামকে বিদেশে নেওয়া হবে, সেটা পুরোপুরি তার পরিবারের ওপর নির্ভর করে। তবে, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন। যেটা দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু সরকার তাকে অনুমতি দেয়নি।’

এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে মঙ্গলবার সকালে এক ভার্চুয়াল সভায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) শ্বাসকষ্ট হওয়ায় তাকে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। এখনো তিনি সেখানে আছেন। তার অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।’

বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া

একই দিন বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন করা হয়নি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া যে সাজা ভোগ করছিলেন পরিবারের নিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা স্থগিত রেখে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সুবিধা করে দিয়েছেন। আমরা যতটুক জানি, তিনি এখন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার ইচ্ছা অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন, এ পর্যন্তই আমাদের জানা।’

গত ২৭ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নন-করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়। গতকাল সোমবার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এখনো তিনি সেখানেই আছেন।

এএইচআর/এসএম/এমএআর/