এনসিপির ‘উপদেষ্টা পরিষদ’ চলতি মাসেই ঘোষণা
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করা ও বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণের উদ্দেশ্যে চলতি মাসেই উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে যাচ্ছে। এই উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পাচ্ছেন সাবেক আমলা, আইনজীবী, সামরিক বাহিনীর সাবেক সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক ও শ্রমিক নেতারা।
উপদেষ্টা পরিষদ দলের মঙ্গলের জন্য শুধু পরামর্শ দিতে পারবে। কোন সিদ্ধান্ত দলের জন্য সুনাম বয়ে আনবে, বিভিন্ন সংকটের সময়ে দলের করণীয় কী এবং দলকে জনপ্রিয় করার কৌশল নিয়ে এই পরিষদ কাজ করবে। ৫০-এর অধিক সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদে বেশ ‘চমক’ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
বিজ্ঞাপন
উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রক্রিয়া
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের বিষয়ে একটি কমিটি করেছি। তারা অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রায় শেষ দিকে আছি।’
বিজ্ঞাপন
এনসিপির উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দিতে আগ্রহের তালিকায় রয়েছেন— সাবেক সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, এমনকি শ্রমিক নেতা। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য যেকোনো দলের যোগ্য ও অভিজ্ঞরা এনসিপির উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শর্ত প্রযোজ্য। অবশ্যই তাকে ফ্যাসিবাদবিরোধী হতে হবে এবং এনসিপির রাজনৈতিক আদর্শে উজ্জীবিত হতে হবে
দলীয় সূত্র মতে, বিভিন্ন পরামর্শ ও অভিজ্ঞদের দিকনির্দেশনার প্রয়োজনে জুলাই অভ্যুত্থানের পর আত্মপ্রকাশ করা দলটি এবার উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করছে। বর্তমানে দলটির তরুণ নেতৃত্বের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। যেহেতু এনসিপির লক্ষ্য গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন, সেহেতু রাজনীতির দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে তাদের প্রবীণদের পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন
এজন্য একটি সার্চ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। চলতি মাসেই প্রকাশ হতে যাওয়া এই উপদেষ্টা পরিষদে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অন্তত ১০ জন প্রবীণ নেতা থাকছেন।
জানা গেছে, গত ১৬ মে উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের জন্য ১২ সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করে এনসিপি। এতে সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্তা শারমিনকে সমন্বয়কারী করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেন- তাজনুভা জাবীন, সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, ড. আতিক মুজাহিদ, অর্পিতা শ্যামা দেব, খালেদ সাইফুল্লাহ, আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, মোশফিকুর রহমান জোহান, মীর আরশাদুল হক, মাওলানা সানাউল্লাহ খান, দিলশানা পারুল ও খান মুহাম্মদ মুরসালীন।
চলতি মাসেই প্রকাশ হতে যাওয়া এই উপদেষ্টা পরিষদে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অন্তত ১০ জন প্রবীণ নেতা থাকছেন
সার্চ কমিটির একাধিক নেতা জানান, উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের জন্য অনুসন্ধানের কাজ প্রায় শেষ দিকে। তারা ৫০-এর অধিক সদস্যের একটি তালিকা তৈরি করেছেন, যা দলের সাধারণ সভায় চূড়ান্ত হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আগ্রহ প্রকাশ করায় যাচাই-বাছাই করে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রবীণ নেতারাসহ সেক্টরভিত্তিক অভিজ্ঞ নাগরিকেরা থাকবেন, যারা দেশ গঠন এবং রাজনৈতিক পলিসি নির্ধারণে এনসিপি ও দেশের সেক্টরভিত্তিক উন্নতি নিশ্চিতে অবদান রাখবেন।
উপদেষ্টা পরিষদে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রবীণ নেতা, প্রথিতযশা সাংবাদিক, শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও অভিজ্ঞ পেশাজীবীরা থাকছেন।
আরও পড়ুন
এ প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চলতি মাসেই উপদেষ্টা পরিষদ ঘোষণা করা হবে।’ পরিষদে কারা থাকছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে রাজনৈতিক দলে সরাসরি সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা নন, বরং সমাজে নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী বা আইন বিশেষজ্ঞ কিংবা সাবেক আমলা— এই ধরনের ব্যক্তিরা যুক্ত হচ্ছেন।’
যোগদানের শর্ত
দলীয় সূত্র মতে, এনসিপির উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দিতে আগ্রহের তালিকায় রয়েছেন— সাবেক সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, এমনকি শ্রমিক নেতা। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য যেকোনো দলের যোগ্য ও অভিজ্ঞরা এনসিপির উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শর্ত প্রযোজ্য। অবশ্যই তাকে ফ্যাসিবাদবিরোধী হতে হবে এবং এনসিপির রাজনৈতিক আদর্শে উজ্জীবিত হতে হবে। অতীত কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক কোনো ভূমিকা থাকলে তাকে কোনোভাবেই সুযোগ দেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন
জুলাই অভ্যুত্থান ও নতুন দলটির রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে একাত্মতা পোষণকারীরা এনসিপির উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেতে যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। যারা আন্দোলন-লড়াইয়ে তরুণদের পাশে ছিলেন এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী মনোভাব পোষণ করেন, তারা এই উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পাবেন। তবে, রাজনৈতিক পরামর্শের ক্ষেত্রে শিক্ষিত ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞরা এখানে এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এনসিপির আত্মপ্রকাশ
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিশাল জমায়েতের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। ওই দিন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে ২১৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ৪ মার্চ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং রায়েরবাজারে চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি পালন শুরু করে এনসিপি। এরপর নিয়মিত তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
ইতোমধ্যে এনসিপি বেশ কয়েকটি উইং চালু করেছে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে দেশি-বিদেশি উইংয়ের মাধ্যমে কমিটি দিয়েছে। দলটির যুব উইংয়ের অধীন ‘জাতীয় যুবশক্তি’ নামক যুব সংগঠনেরও আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
এমএসআই/