বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | ফাইল ছবি

করোনাকালীন রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও সাংগঠনিকভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ‘ফসল’ ঘরে তুলতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

দলটির নেতারা বলছেন, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ মুজিববর্ষের উদ্বোধনের পর সেভাবে রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি ছিল না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটি (লকডাউন) বাস্তবায়ন করেছে প্রশাসন। এ সময়ে সাংগঠনিকভাবে দেশের অসহায় মানুষের পাশে থেকে স্মরণকালের সর্বোচ্চ কাজ করেছে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

মার্চ থেকে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১০ কোটির অধিক পরিমাণে নগদ অর্থসহায়তা দেওয়া হয়েছে। এসব সহায়তা পেয়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। অসহায় ও দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর কাজটিকে সাংগঠনিক কাজ হিসেবে দেখছেন ক্ষমতাসীনরা

আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, মার্চ থেকে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ সময়ে ১০ কোটির অধিক পরিমাণে নগদ অর্থসহায়তা দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। এসব সহায়তা পেয়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। অসহায় ও দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর কাজটিকে সাংগঠনিক কাজ হিসেবে দেখছেন ক্ষমতাসীনরা।

করোনাকালীন দুস্থদের মাঝে ত্রাণসহায়তায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | ফাইল ছবি

দলীয় সূত্রে জানা যায়, করোনা পরবর্তী ২ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভার মাধ্যমে মাঠের রাজনীতিতে তৎপর হতে শুরু করে আওয়ামী লীগ। ওই সভা থেকে সব জেলা, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

করোনার প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি না কাটলে বৃহৎ পরিসরের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির আয়োজন আমরা করতে পারছি না। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং এ সঙ্কট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে মানুষকে সহযোগিতা করাই আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড

আব্দুর রহমান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, আওয়ামী লীগ

গত বছরের ৯ মার্চ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৩ অক্টোবর ৩২ জন নেতার উপস্থিতিতে করোনা পরবর্তী কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরে পর্যায়ক্রমে জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয় মহিলা শ্রমিক লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা আওয়ামী লীগ, মৎস্যজীবী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা শুরু হয়।

দলটির নেতারা জানান, সর্বশেষ ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে মার্চ মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত ৩১ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৭৮ সাংগঠনিক জেলার ৩২টিতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগে ও পরে। এসব জেলার ২০টির পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। বাকিগুলো এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, যাচাই-বাছাই চলছে। 

গত ৩ জানুয়ারি অনুমোদন দেওয়া হয় খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন চলমান রয়েছে।

মানুষের পাশে থাকা, মানুষের জন্য কাজ করার চেয়ে বড় সাংগঠনিক কাজ একটি দলের জন্য আর কী হতে পারে? দলের নেতাকর্মীরা স্মরণকালের সর্বোচ্চ সাংগঠনিক কাজ করেছেন করোনার সময়ে। এখন সেই ফসল ঘরে তোলা হবে বিভিন্ন কমিটি গঠন ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

দলীয় সূত্রে আরও জানা যায়, করোনা সঙ্কটের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ, সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও তাঁতী লীগের কমিটি। করোনা সঙ্কটে স্থবির হয়ে পড়া দল গোছানোর কার্যক্রম চললেও মহামারির আশঙ্কা পুরোপুরি না কাটলে সম্মেলনের মতো আয়োজন বৃহৎ পরিসরে করা হচ্ছে না।

ত্রাণ পেয়ে হাসিমুখে ফিরে যাচ্ছে একটি পরিবার | ফাইল ছবি   

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি না কাটলে বৃহৎ পরিসরের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির আয়োজন আমরা করতে পারছি না। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং এ সঙ্কট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে মানুষকে সহযোগিতা করাই আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। এ মুহূর্তে মানুষের জীবন রক্ষাই আমাদের সবার করণীয় বলে মনে করি।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার পরপরই আমাদের সাংগঠনিক তৎপরতা আরও জোরদার হবে। যেসব কমিটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে সেগুলো দ্রুত অনুমোদন দেওয়া হবে। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনও আয়োজন করা হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষের পাশে থাকা, মানুষের জন্য কাজ করার চেয়ে বড় সাংগঠনিক কাজ একটি দলের জন্য আর কী হতে পারে? আমি মনে করি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্মরণকালের সর্বোচ্চ সাংগঠনিক কাজ করেছে। এখন সেই ফসল ঘরে তোলা হবে বিভিন্ন কমিটি গঠন ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে।

এইউএ/এসএম/এমএআর