সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি জেলার নেতাদের মাঝে বিদ্যমান বিরোধ নিষ্পত্তিতে বৈঠক করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেই দূরত্ব কমে বলে দাবি করেছেন তারা। তবুও জেলায় জেলায় নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব চলছে! 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি, করোনা মহামারির কারণে জেলায় জেলায় গিয়ে বৈঠক করা সম্ভব হচ্ছে না। যেসব জেলায় সমস্যা আছে কেন্দ্রীয় টিমগুলো বৈঠকে সেসব জেলায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে করোনা পরিস্থিতিতে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। করোনা নিয়ন্ত্রণে এলেই জেলায় জেলায় সফর করে বিরোধ নিষ্পত্তির চলমান প্রক্রিয়া গতিশীল করা হবে।

এমন কোনো জেলা নেই যেখানে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব নেই। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। বসুরহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীতপ্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা নিজ দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী, এমপি ও জেলার নেতাদের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। পাল্টা বক্তব্য আসে অপর পক্ষ থেকেও

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমন কোনো জেলা নেই যেখানে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব নেই। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। বসুরহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীতপ্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা নিজ দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী, এমপি ও জেলার নেতাদের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। পাল্টা বক্তব্য আসে অপর পক্ষ থেকেও। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে স্থানীয় একজন সাংবাদিকসহ মারা যান দুজন। 

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার সঙ্গে মূলত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্বই রক্তক্ষয়ী রূপ নিয়েছিল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের উভয় পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য উভয় পক্ষকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। এখন সমাধানের অপেক্ষা।

শুধু নোয়াখালী বা ফেনী নয়, আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বের চিত্র প্রায় সারা দেশে / প্রতীকী ছবি
আগস্টের আগেই কক্সবাজার, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, নোয়াখালী, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পাবনা, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব নিরসনে তৃণমূল নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এতে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও স্থায়ী কোনো সমাধান মেলেনি

আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা যায়, আগস্টের আগেই কক্সবাজার, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, নোয়াখালী, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পাবনা, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব নিরসনে তৃণমূল নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এতে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও স্থায়ী কোনো সমাধান মেলেনি।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য ও সম্পাদকমণ্ডলীর অন্তত দুই নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু নোয়াখালী বা ফেনী নয়, এ চিত্র সারা দেশের। জেলায় জেলায়, নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব চলছে। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রেষারেষির পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

দলটির নেতারা বলছেন, মিটিংয়ে বসলে বা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলে মতের ভিন্নতাগুলো কমে আসে। এ ধরনের মিটিং সুনির্দিষ্ট কোনো রুটিন ওয়ার্ক নয়। যখন যেখানে সমস্যা দেখা দেয় সেখানেই মিটিং হয়। করোনার কারণে আমরা একটু পিছিয়ে পড়েছি। এর মধ্যেও মিটিং হচ্ছে, সামনে আরও হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকার ডিভিশনাল টিম এখন পর্যন্ত দুবার সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে বসেছে। আলোচনা হয়েছে যে, করোনা নিয়ন্ত্রণে এলে জেলায় জেলায় নেতাদের বিদ্যমান বিরোধ নিষ্পত্তিতে কাজ করা হবে।

নোয়াখালীর বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ। এতে এক সাংবাদিকসহ মারা যান দুজন / ফাইল ছবি

‘আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুটি সাব-টিম করা হবে। তাদের আটটি করে জেলা ভাগ করে দেওয়া হবে। জেলাগুলোর সমস্যা দেখবেন তারা।’

‘কতদিন হলো কমিটি হয় না। কোনো বহিরাগতরা এসেছে কি না, দ্বন্দ্বগুলো কী নিয়ে, দলের কার্যক্রম ও সক্রিয়তা কেমন— এসব আমরা পর্যবেক্ষণ করব। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে জানাব’— বলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, মিটিংয়ে বসলে, আলোচনা করলে মতের ভিন্নতাগুলো ধীরে ধীরে কমে আসে। আলোচনায় দ্বন্দ্ব ও মনোমালিন্য কমে। কাজের গতি বৃদ্ধি পায়।

তিনি বলেন, ‘দ্বন্দ্ব ও মনোমালিন্য কমাতে কয়েকটি মিটিং হয়েছে। তাতে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। নিয়মিত মিটিং করা গেলে আরও ইতিবাচক ফল আসবে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, বসে কথা শুনলেই সমস্যার অর্ধেক সমাধান হয়। সাম্প্রতিক বৈঠকগুলোতে আমরা তৃণমূলের কথা শুনেছি। তারা মন খুলে কথা বলেছেন। সব শুনে, বিস্তারিত আলোচনা করে তাদের দিয়েই ন্যায়সঙ্গত সমাধানের পথ বের করেছি। তারাই আলোচনা করেছেন, তারাই সমাধান দিয়েছেন। আমরা কেবলমাত্র অনুঘটক বা মডারেটরের কাজ করেছি।

এইউএ/এইচকে/এমএআর