আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ ফারুক খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন

দলীয় প্রতীকে ‘অভ্যস্ততা’র অভাবে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়া এবং দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অনেকে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হচ্ছেন বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।

দলটির নেতারা বলছেন, দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হয়েছে মাত্র পাঁচ বছর হলো। অনেকেই এ পদ্ধতি এখনও বুঝে উঠতে পারেননি। যুগ যুগ ধরে স্থানীয় নির্বাচনে ইস্যুভিত্তিক ভোটের হিসাবনিকাশ চলে আসছে। দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়টি অনেক ইউনিয়নের জনমনে পরিপূর্ণভাবে বিকাশ ঘটেনি।

সর্বশেষ তৃতীয় ধাপের ১০০৮টি ইউপি নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী হয়েছেন ৫২৫ প্রার্থী। স্বতন্ত্র থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ৪৪৬ প্রার্থী। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে ১৭ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে একজন, ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে একজন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে একজন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে একজন প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

তৃতীয় ধাপের ১০০৮টি ইউপি নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী হয়েছেন ৫২৫ প্রার্থী। স্বতন্ত্র থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ৪৪৬ প্রার্থী

বিদ্রোহীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা আমরা নিশ্চয়ই পর্যালোচনা করব। স্থানীয় নির্বাচনটি মাঝপথে রয়েছে। কয়েক ফেজের নির্বাচন এখনও বাকি। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এখনও আসেনি।

আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা। দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হয়েছে পাঁচ বছর হলো / ফাইল ছবি

এর আগে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ৪৮৬ জন। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৭৮ জন, স্বতন্ত্র ৩৩০ জন, জাতীয় পার্টি থেকে ১০ জন এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে চারজন চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন। জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, খেলাফত মজলিস ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল একটি করে ইউনিয়নে জয় পায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলটির স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য মোহাম্মদ ফারুক খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এই যে সিস্টেম, দলীয় মার্কা দিয়ে নির্বাচন; এটা তো মাত্র পাঁচ বছর চালু হলো। আশা করি আস্তে আস্তে সবাই বুঝবেন। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করছেন তাদের বিরুদ্ধে যদি আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিই তাহলে হয়তো আগামীতে এটা কমে আসবে।’

প্রথম ধাপের ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত ১৪৮ প্রার্থী জয়ী হন। এর মধ্যে ১২০ জন সরাসরি ভোটে এবং বাকি ২৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এছাড়া ৪৯টি ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন। তবে তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। এর বাইরে তিনটি বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচিত সাতজনের মধ্যে জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে তিনজন, জাতীয় পার্টি থেকে লাঙল প্রতীক নিয়ে তিনজন এবং হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

ভোলায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা। ইউনিয়ন শ্রমীক লীগ নেতার ওপর হামলার প্রতিবাদে ভোলা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক অবরোধ / ফাইল ছবি

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যুগ যুগ ধরে নানা ধরনের স্থানীয় ইস্যুভিত্তিক ভোটের হিসাবনিকাশ চলে আসছে এ নির্বাচনে। দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়টি অনেক ইউনিয়নে এখনও পরিপূর্ণভাবে বিকাশ ঘটেনি। জনমনেও এর প্রভাব রয়েছে।

‘উপরন্তু স্থানীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল দলীয়ভাবে অংশ না নেওয়ায় একটি প্রভাবও পড়েছে। এখনও অধিকাংশ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা স্থানীয় ইকুয়েশন (সমীকরণ)-এর প্রভাব রয়ে গেছে। ফলে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী অনেক প্রার্থী জয়লাভ করছেন। আস্তে আস্তে জনগণ নতুন আইন ও পদ্ধতির সঙ্গে অভ্যস্ত হবেন। তখন পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে— মনে করেন আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

এইউএ/এমএআর