বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবার জন্য মোট যে ব্যয় হয় তার ৭৩ শতাংশই আসে নাগরিকদের পকেট থেকে। বাকি ২৭ শতাংশ আসে জাতীয় বাজেটের বরাদ্দ থেকে। স্বাস্থ্য সেবা প্রার্থী নাগরিকদের এই ‘আউট অব পকেট কস্ট’ কমানোর জন্য জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে ‘স্বাস্থ্য বাজেট বিষয়ক জাতীয় নীতি সংলাপ’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে উন্নয়ন সমন্বয়ের পক্ষ থেকে মোট স্বাস্থ্য বাজেটের বরাদ্দ বৃদ্ধি বিষয়ে নীতি প্রস্তাবনার পাশাপাশি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন বাজেট এবং বিনামূল্যে বিতরণকৃত ওষুধের জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।

আসন্ন অর্থবছরে গতানুগতিকভাবে মোট বাজেটের ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যে বরাদ্দ করার পরিবর্তে ৭ থেকে ৮ শতাংশ বরাদ্দ করার এবং মধ্যম মেয়াদে এই অনুপাত ১০ থেকে ১২ শতাংশ করার লক্ষ্য নির্ধারণের আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা ৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, বাগেরহাট ৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আমিরুল আলম, বরিশাল ৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খান, এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের আরেক সংসদ সদস্য আরমা দত্ত।

এতে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে অংশ নেন- বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, এবং সমাজতাত্ত্বিক খন্দকার সাখাওয়াত আলী।

বিনামূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে ওষুধ বিতরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে জনগণের ওপর স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমানো যাবে বলে অভিমত দেন আরমা দত্ত। 

এ সময় লুৎফুন নেসা খান বলেন, স্বাস্থ্যে উন্নয়ন বরাদ্দের বড় অংশ অব্যয়িত থেকে যাওয়ার সমস্যা সমাধানে এ খাতের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।

এসব প্রসঙ্গে ড. আতিউর বলেন, যে মন্ত্রণালয়গুলো উন্নয়ন বরাদ্দ ব্যয়ের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি সক্ষমতা দেখাচ্ছে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এগিয়ে যেতে পারে।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক বলেন, আমাদের সমস্যা আপনার সকলেই জানেন যে, বাজেট খরচ করতে না পারা।  টাকাটা কীভাবে ব্যয় করতে হয়, সেই প্রশিক্ষণও নেই। সিভিল সার্জনরা কোট ট্রেনিং পায় না। আমরা শুধু বিল্ডিংয়ের প্ল্যান করি, কিন্তু কি পরিমাণ জনবল, কীভাবে পরিচালিত হবে সেই পরিকল্পনাটি দেওয়া হয় না। যে কারণে শুধু বিল্ডিং করে ফেলে রেখে দিই।

সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মেডিকেল কলেজগুলোকে ডিসেন্ট্রালাইজড করা দরকার। বিএসএমএমইউ এই পদ্ধতিতে চলছে। আমাদের বড় বড় স্পেশালাইজড হাসপাতাল হচ্ছে ঢাকা শহর কেন্দ্রিক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হলো স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে।

ড. বিনয়াক সেন তার বক্তব্যে দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য স্বাস্থ্য বিমা বিদ্যমান বাস্তবতায় সম্ভব নয় বলে মত দেন এবং এই শ্রেণির নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এখন থেকেই সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরির ওপর জোর দেন। সংলাপ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প সমন্বয়কারী শাহীন উল আলম।

টিআই/এসকেডি