কিছু প্রশ্ন কঠিন হলেও মানুষ সাধারণত তার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে চায় না।

তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে বিজ্ঞান সময় নেয়, কখনও কখনও দীর্ঘ সময় নেয়। যেমন বিউবনিক প্লেগ যা ব্ল্যাক ডেথ নামে বেশি পরিচিত, সেই মহামারির উৎস হয়তো অবশেষে চিহ্নিত করেছে বিজ্ঞান। আর এর জন্য সময় লাগল ৭০০ বছরেরও বেশি।

ইয়েরসিনিয়া পেসটিস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের মাধ্যমে ছড়ায় বিউবনিক প্লেগ। ১৩৪৭ সালে প্রথম সিসিলির একটি বন্দরে এই রোগ দেখা যায়। পরবর্তী ৮ বছরে ওয়েস্টার্ন ইউরেশিয়া জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় এতে। ১৩৩৪ থেকে ১৩৫৩ সাল পর্যন্ত সময়ে মহামারির প্রথম ঢেউয়ে এই প্লেগে সাড়ে ৭ কোটি থেকে ২০ কোটি মানুষের মৃত্যু হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।

মহামারির প্রথম এই ঢেউয়ের আরও প্রায় ৫০০ বছর পরে ১৮৯৬ সালে প্রথম এই রোগের কার্যকরী একটা চিকিৎসা পাওয়া যায়।

বর্তমান কিরগিজস্তানের দুটি কবরস্থানের সমাধির পাথর পরীক্ষায় সেখানে অস্বাভাবিক সংখ্যক মৃত্যুর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অজানা কোনো এক মহামারিতে ওই বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয় বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি নেচারে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

আর এই কবরস্থানের অঞ্চল থেকেই ব্ল্যাক ডেথের উৎপত্তি বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- একটি সমাধির কাছে শিলালিপিতে লেখা রয়েছে: এটা বিশ্বাসী সানমাকের কবর। মহামারীতে তার মৃত্যু হয়।

ওই কবরস্থানের সাতটি মরদেহের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা সেগুলোর তিনটিতে  ইয়েরসিনিয়া পেসটিস ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ’র প্রমাণ পেয়েছেন। এ থেকে তারা এটুকু নিশ্চিত হয়েছেন- শিলালিপিতে যে মহামারির কথা বলা হয়েছে তা ব্ল্যাক ডেথই ছিল।

দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করছেন যে, ইউরেশিয়ায় ব্ল্যাক ডেথের যে তাণ্ডব চলেছিল তাতে মোটামুটি চারটি ধরন ছিল।

গবেষণা সহলেখক ড. ফিলিপ স্লাভিন বলছেন, জিনগত বৈচিত্রের বিষয়টির বোঝার এখনও অনেক বাকি রয়েছে। এটা ভালোভাবে বুঝতে আরও গবেণণা প্রয়োজন। প্লেগের ইতিহাস নিয়ে যারা কাজ করেছেন এক্ষেত্রে তাদের আরও বেশি কাজ করতে হবে।

এই গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ড. স্পাইরো বলছেন, কীভাবে সংক্রামক রোগের উদ্ভব হয়, কোন ধরনের হোস্ট তার উত্থানের সাথে জড়িত, তারা কীভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এসব বিষয় বোঝার জন্য অতীত এবং বর্তমানের একটা যোগসূত্র জরুরি।

ড. ফিলিপ স্লাভিন বলছেন, এসব নিয়ে তাড়াহুড়ো করার চেয়ে আরও বিশদভাবে গবেষণা ভালো।

তিনি বলেন, রোগগুলোর কীভাবে বিবর্তন হয় এবং ঐতিহাসিকভাবে বিকাশ লাভ করে তা দেখা গুরুত্বপূর্ণ, কোনো ভাইরাসের ভিন্ন ভিন্ন ধরনকে বিচ্ছিন্নভাবে না দেখে বরং এটাকে বিশদ একটা পরিস্থিতির অংশ হিসেবে নেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।

সূত্র :  মেডিকেল নিউজ টুডে।

এনএফ