দেশে প্রতিবছর নতুন করে ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। এই অবস্থায় থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে বাহকদের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করা জরুরি। একইসঙ্গে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধকে একটি আন্দোলনে পরিণত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। 

বক্তারা বলেন, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের প্রতি মাসেই এক দুই বার রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। এমনকি তাদের সারাজীবন এই রোগ বহন করে বেড়াতে হয়। আর তাদের অনেকেই ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক অডিটোরিয়ামে পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগ ও মুভমেন্ট ফর থ্যালাসেমিয়া ইরাডিকেশন ইন বাংলাদেশের (এমটিইবি) যৌগ উদ্যোগে ‘থ্যালাসেমিয়া এন ইমার্জিং ন্যাশনাল হেলথ ইস্যু, ওয়ে টু মিনিফাই’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পুনর্বাসন ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সংসদ সদস্য ডা. মো. আব্দুল আজিজ প্রমুখ। 

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রায় ১০ ভাগ লোক থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। বিয়ের আগে যদি পরীক্ষার মাধ্যমে নবদম্পতি ঠিক করা হয় তাহলে এটা কমানো সম্ভব। আর্থিক সহযোগিতা লাগলে আমরা দেব।

ডা. এনামুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য সেবায় আমাদের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। আমরা জেলা হাসপাতালগুলোকে ৫০ থেকে ২৫০ বেডে উন্নীত করেছি। করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার সফলতা দেখিয়েছে। ঢামেকে বোনম্যারো সার্জারি বিভাগ চালু হয়েছে। হৃদরোগের জন্য এখন আর কাউকে বাইরে যেতে হয় না।

তিনি বলেন, দেশে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। এটি আশঙ্কাজনক। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং রোগী ও পরিবারের জন্য কষ্টদায়ক। আমরা আমাদের সচেতনতার মাধ্যমে এ থেকে মুক্তি পেতে পারি। আমরা যদি বাহকদের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করতে পারি তাহলেই দেশ থেকে রোগ নির্মূল করা সম্ভব।

এনামুর রহমান বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে। প্রয়োজনে থ্যালাসেমিয়া সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ আইন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, থ্যালাসেমিয়া এমন একটি রোগ, যার কারণে একটি পরিবার বিধ্বস্ত হয়ে যায়। কিন্তু এটিকেও রোধ করা যায়। কিছু পদ্ধতি মেনে চললে আমরা দেশকে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত করতে পারি। সেক্ষেত্রে স্ক্রিনিংকে আরও সহজলভ্য করতে হবে।

তিনি বলেন, যেই পরিবারে থ্যালাসেমিয়া রোগী থাকে, সেই পরিবারে কোন শান্তি থাকে না। প্রতি মাসে ব্লাড সংগ্রহ করা, হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করা খুবই কঠিন। এক্ষেত্রে আমরা সরকারিভাবে যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, আমরা করব।

করণীয় প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, বিয়ের পূর্বে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে যারা বিয়ে পড়ান (কাজী), তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধকে একটি আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। তাহলেই আমরা দ্রুত সময়ে এই রোগ প্রতিরোধ করতে পারব।

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, চলমান কোভিড অতিমারি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম সারা বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্যাকসিন হিরো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছে নিষ্ঠার সাথে। শুধু তাই নয়, একটি সুস্থ, কর্মঠ জাতি বিনির্মাণে তারা থ্যালাসেমিয়া নামক এক বংশগত দুরারোগ্য ব্যাধির নির্মূলে কাজ করছে।

টিআই/এসকেডি