বিরোধীরা কিছু না বুঝেই সবসময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনায় মুখর থাকে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, প্রতিনিয়তই আমাদের কতো কথা শুনতে হয়। সংসদে গেলেই এসব আলোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে আমাদের দলের লোকেরাও আমাকে ছাড় দেননি, করোনার সময় তারাও অনেক কিছুই বলেছেন।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়োজিত চিকিৎসক-শিক্ষকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, দেশে চিকিৎসা হয় না, হাসপাতাল চলে না, সব মানুষ ভারতে চলে যাচ্ছে... মানুষের কতো সমালোচনা। কিছু গেছেন তো কী হয়েছে? সব মানুষ কি ভারতে চলে গেছেন? দুই চার হাজার হয়তো গেছেন, বাকি লোকজন তো আমার দেশেই চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।

সাংবাদিকদের সমালোচনা করে  তিনি বলেন, সাংবাদিকরাও সায়েন্টিস্ট হয়ে গেছেন। যারা ওষুধের ‘র’ও বুঝেন না তারাও সায়েন্টিস্ট হয়ে গেছেন। সবাই সমালোচনায় মুখর। আমাদের স্বাস্থ্যের অনেক অর্জন। মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে। ১৫টি ইনস্টিটিউট হয়েছে, সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৮টি। এখন ওষুধের অভাব নাই। আমাদের ইডিসিএল প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর চেয়েও ভালো মানের ওষুধ তৈরি করবে।

জাহিদ মালেক বলেন, আট বিভাগে আটটি হাসপাতাল তৈরির কার্যক্রম চলমান। একসঙ্গে বিশ্বের কোথাও এতো স্থাপনা হয়নি। চট্টগ্রামেও একটি হচ্ছে, কুমিল্লাবাসী এর সুবিধা পাবে। করোনার মধ্যেও আমরা চারটি মেডিকেল করেছি, যেগুলো প্রায় প্রস্তুত। এমন কোনো হাসপাতাল নেই, যেখানে আরটিপিসিআর নাই। মাত্র একটি থেকে আরটিপিসিআর সংখ্যা এখন ১০৫টি হয়েছে। প্রায় সাড়ে ছয়শ জিন এক্সপার্ট মেশিন লাগানো হয়েছে।

তিনি বলেন, নার্সিং কারিকুলামে ৩২টি সাবজেক্ট ছিল, ১৪টিতে এনেছি। আমাদের হাসপাতালগুলোতে কোন সিমুলেটর ছিল না, আমরা অর্ডার দিয়েছি। বর্তমানে আটটি হাসপাতালে আছে। কুমিল্লায় নেই, শিগগিরই তারা একটি পাবে।

টিকা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ১১ কোটি ফাইজার টিকা ফ্রি পেয়েছি, যার দাম ২৫ হাজার কোটি টাকা। আমরা বুঝিয়েছি বাংলাদেশ টিকা দিতে পারে, নষ্ট করে না। তাই তারা আমাদের এগুলো বিনামূল্যে দিয়েছে।

হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, আমার দেশের মানুষ হাসপাতালের ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নেবে, বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নেবে মানুষ, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা প্রতিটি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর কার্যক্রম শুরু করেছি। পুরোনো যেসব মেডিকেল কলেজ রয়েছে, সেগুলোতে রোগীভেদে এক হাজার করে দেওয়া হবে।

আলোচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে আমাদের স্বাস্থ্য সেবা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। ডাক্তাররা এখন শুধু ডাক্তারই না, তারা এখন প্রশাসকও। একজন ডাক্তারকে যদি যোগ্য প্রশাসক করতে হয়, তাদের ট্রেনিং বাদে দক্ষ করে গড়ে তোলা যাবে না। কারণ, স্বাস্থ্য প্রশাসন খুবই সেনসিটিভ বিষয়।

তিনি বলেন, কুমিল্লা মেডিকেল শিক্ষার মান বরাবরই ভালো ছিল। কুমিল্লা মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো করছেন। দেশি-বিদেশি সব শিক্ষার্থীই অত্যন্ত মেধাবী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, আমাদের মেডিকেল কলেজগুলোতে বেসিক সাবজেক্টে সংকট আগে থেকেই ছিল। আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি আর সংকট থাকবে না।

তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসা ও সেবার মান নিয়ে যদি প্রশ্ন আসে, সেটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। কারণ, এখানে সরকার অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমরা প্রতি বছর ৪০ থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করি স্বাস্থ্য খাতে।

সচিব বলেন, আমাদের চিকিৎসকদের অনেক দায়িত্ব। যত রোগীই আসুক, তাদের প্রত্যেককেই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, যারা সরকারি হাসপাতালে আসেন, তাদের অধিকাংশই গরিব। তারা আমাদের কাছে আসেন যেন কম পয়সায় সেবা পান। যদি আসরা সেবা না দিই, তাহলে বেসরকারিভাবে সেবা নিতে গিয়ে নিঃস্ব হবেন।

ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, অনেকেই আবার সরকারি হাসপাতালে আসেন মানসম্মত চিকিৎসার প্রত্যাশা থেকে। তারা ভাবেন, বড় বড় চিকিৎসকরা এখানেই থাকেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে তারাই সেবা দেন। সুতরাং তাদের চাওয়া পাওয়াটাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে যারাই সেবা নিতে আসেন, সর্বোচ্চ সেবা দেবেন।

টিআই/আরএইচ