স্বাস্থ্যখাতের অর্থায়নের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের সারিতে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের গভীর মনোনিবেশ দরকার বলেও মনে করেন তারা। 

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত 'সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নের সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ' বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ (বিএইচডব্লিউ), চ্যাথাম হাউস এবং ইউনিসেফের সহযোগিতায় স্বাস্থ্যখাতের উন্নতির জন্য কাজ করা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। উক্ত গোলটেবিল আলোচনায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন স্তরে স্বাস্থ্যের জন্য অর্থায়ন, মানব সম্পদের সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুযোগ, চ্যালেঞ্জ এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী। তিনি বলেন, হাসপাতালে নিয়মিত ওষুধ পাওয়া যায় না, কিছু পেলেও সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ নিশ্চিত করতে হলে সবার জন্য বিনামূল্যে ওষুধের ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অর্থায়নে যে কৌশল অবলম্বন করা হয় সেটার পরিবর্তন করতে হবে।

এ সময় চ্যাথাম হাউসের ইউনিভার্সাল হেলথের নির্বাহী পরিচালক রবার্ট ইয়েটস প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে একটি গবেষণার ফলাফল ও তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেন। তার উপস্থাপনায় স্বাস্থ্যখাতের অবকাঠামো, স্বাস্থ্যখাতের অর্থায়নের কথা বিশেষভাবে উঠে আসে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতের অর্থায়নের দিক দিয়ে আমাদের অবস্থান নিচের দিকে এবং এর জন্য আমাদের সরকারের গভীর মনোনিবেশ দরকার।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রাজনৈতিক ইচ্ছা স্বাস্থ্য খাতের পরিবর্তনের জন্য খুবই জরুরী। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো আমরা এমন কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারি যেখানে রাজনৈতিক স্বার্থ বা স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নের জন্য ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ বা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়। আলোচনায় উঠে আসে সুশীল সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিৎ, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়নে কী কী বাঁধার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা আছে।

সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনে গোলটেবিল বৈঠকের কিছু বিষয়ে সুপারিশ-

১. দরিদ্র এবং দুর্বলদের চাহিদা পূরণের অগ্রাধিকার

২. স্বাস্থ্যের জন্য জন অর্থায়ন বৃদ্ধি এবং ২০২৫ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১% জিডিপি বরাদ্দ।

৩. প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাখাতে ব্যবহারযোগ্য সম্পদের সঠিক বণ্টন।

৪. একটি চালু করা শহুরে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার ফাঁক মেটাতে শহুরে স্বাস্থ্য ক্লিনিকের দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক।

৫. স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিশেষ করে মানবসম্পদ, ওষুধ ও পণ্যের অবকাঠামোর অ্যাক্সেস এবং শাসন।

টিআই/এসকেডি